মৌলবাদীদের তুষ্ট করতেই নোংরা খেলায় সরকার: ইমরান

সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে ভাস্কর্য অপসারণের তীব্র সমালোচনা করে গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার বলেছেন, মৌলবাদীদের ‘তুষ্ট করতে নোংরা রাজনৈতিক খেলায়’ নেমেছে সরকার।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 May 2017, 12:48 PM
Updated : 29 May 2017, 05:14 PM

বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে স্থাপিত রোমান যুগের ন্যায় বিচারের প্রতীক লেডি জাস্টিসের আদলে গড়া ভাস্কর্যটি সরানোর পর এই প্রতিক্রিয়া জানান তিনি।

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের জামাতা ইমরান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এর মাধ্যমে হেফাজতে ইসলামসহ মৌলবাদী উগ্র মৌলবাদীদেরকে আরও উস্কানি দেওয়া হচ্ছে। তাদের নৈরাজ্য করবার পথ তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে। আমি মনে করি যে, মৌলবাদের উত্থানের পথ সুগম করে দিচ্ছে সরকার।”

সুপ্রিম কোর্টের উদ্যোগে স্থাপিত ভাস্কর্যটি অপসারণে হেফাজতে ইসলামের দাবিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমর্থন প্রকাশের পর রোজার তিন দিন আগে এটি সরানো হয়।

ভাস্কর্য সরানোর আগে আইনজীবী নেতাদের সঙ্গে পরামর্শ করেছিলেন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা।

সমালোচনার মুখে মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ভাস্কর্য সরানোয় সরকারের কোনো ভূমিকা ছিল না, সুপ্রিম কোর্টই পদক্ষেপ নিয়েছে।

বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদও বলেছেন, আইনজীবীদের পরামর্শ নিয়ে প্রধান বিচারপতিই ভাস্কর্য সরানোর সিদ্ধান্ত নেন।

তবে গণজাগরণ মঞ্চের সমালোচনার তীর সরকারের দিকেই।

যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে গণজাগরণ আন্দোলনের বিরোধিতায় নামা হেফাজতের দাবির মুখেই সরানো হয়েছে ভাস্কর্যটি।

সুপ্রিম কোর্টের প্রবেশ পথে ফোয়ারার সামনে এখন আর নেই ভাস্কর্যটি

ইমরান বলেন, “এটা খুবই ন্যক্কারজনক, এই ভাস্কর্যের বিষয়টি সরকার সামনে এনে অন্যান্য অপরাধগুলো আড়াল করার অপচেষ্টা করছে।

“সামগ্রিকভাবে কোন ঘটনার বিচার নাই, স্বাধীনভাবে মানুষ কথা বলতে পারছে না। এই সবগুলো আড়াল করতে সরকার ভাস্কর্য ও মৌলবাদীদের সামনে নিয়ে আসছে, সাম্প্রদায়িকীকরণকেও সামনে আনছে, যাতে মৌলবাদীর সরকারে প্রতি তুষ্ট থাকে।”

মন্ত্রীর জামাতার মতো বিএনপিও বলে আসছে যে বাংলাদেশে স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের সুযোগ নেই। তবে ভাস্কর্যটি অপসারণের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে তাদের মতের অমিল নেই, যদিও এই ভাস্কর্যটির শিল্পী মৃণাল হক খালেদা জিয়ার সরকারের মন্ত্রী ব্যারিস্টার আমিনুল হকের শ্যালক।

ইমরান এক বিবৃতিতে বলেন, “ভাস্কর্যটি নিয়ে সরকার নোংরা রাজনৈতিক খেলায় নেমেছে বলে মনে করে মঞ্চ।

“প্রতিদিন খুন, ধর্ষণ, অবিচার বেড়েই চলছে, তার কোনোটিরই বিচার করা হচ্ছে না। জনগণের সম্পদ লুটে খাচ্ছে দুর্নীতিবাজ কর্তৃপক্ষ। বিদেশে পাচার হচ্ছে জনগণের কষ্টার্জিত অর্থ।

“এসব থেকে জনগণের চোখ ফিরিয়ে রাখতেই মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিকে পুঁজি করে ধর্মকে রাজনৈতিকভাবে আত্মরক্ষার ঢাল হিসাবে ব্যবহার করছে সরকার।”

জনগণকে ‘ভুল দ্বন্দ্বে ব্যস্ত রেখে’ সরকার নিজেদের ‘আখের গোছানোতে ব্যস্ত’ বলেও মন্তব্য করেন ইমরান।

“অপশাসন, অনিয়ম, দুর্নীতির বিরুদ্ধে যেন জনগণ সোচ্চার হতে না পারে, মানুষ যেন অধিকার সচেতন হতে না পারে, সেজন্য মুক্তিযুদ্ধ পূর্ববর্তী শোষকদের মতো ধর্মের অপব্যবহার করে জনগণকে বিভক্ত করা হচ্ছে।”

শাসকগোষ্ঠীর ব্যক্তিগত লাভের উদ্দেশ্যে ধর্মকে রাজনীতিতে ব্যবহারের এই প্রক্রিয়া বাংলাদেশকে পাকিস্তানি অন্ধকার সময়ের দিকে পিছিয়ে নিয়ে যাবে বলেও মনে করেন ইমরান।