কোনো পক্ষের ক্ষতি না করে তিস্তার পানি বণ্টনের বিষয়ে সমাধানের উপায় খুঁজতে দিল্লিতে ভারতের কেন্দ্র সরকার ও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আমলাদের মধ্যে একটি বৈঠক হয়েছে।
Published : 07 Apr 2017, 08:33 PM
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চার দিনের সফরে দিল্লি পৌঁছার বেশ কয়েক ঘণ্টা আগে বৃহস্পতিবার ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ওই বৈঠক হলেও গণমাধ্যমে তা প্রকাশ পায়নি।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সবচেয়ে আস্থাভাজন আমলা স্বরাষ্ট্র সচিব মলয় কুমার দের সঙ্গে তিন ঘণ্টার ওই বৈঠকে নরেন্দ্র মোদীর মুখ্যসচিব নৃপেন্দ্র মিশ্র ও প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সচিব ভাস্কর কুলবে অংশ নেন।
ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তারা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ওই বৈঠক ছিল ‘হৃদ্যতাপূর্ণ’। তিস্তা বিষয়ে শীতলতা ভাঙতে সব বিকল্প নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
সিকিমে আটটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের কারণে শুকনো মৌসুমে তিস্তার প্রবাহ কমে যাওয়ার বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গের উদ্বেগের কথা তুলে ধরেছেন স্বরাষ্ট্র সচিব মলয়। রাজ্য সরকারের তৈরি বিশেষ একটি প্রতিবেদনের কথা তিনি কেন্দ্রের দুই আমলার কাছে তুলে ধরেছেন।
মমতা ব্যানার্জীর অনুরোধে নদী বিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্র কমিশনের ওই প্রতিবেদনে তিস্তার বিষয়ে মৌসুমি পানি ব্যবস্থাপনার সুপারিশ করা হয়েছে, যাতে ভরা মৌসুমে উপচে পড়া পানি ও শুষ্ক মৌসুমে পানি কমলেও সমস্যা না হয়।
ভারতীয় কর্মকর্তারা বলছেন, শুকনো মাসগুলোতে নদীটির নিম্নাঞ্চলের তীরবর্তী প্রতিবেশী বাংলাদেশকে পর্যাপ্ত বা প্রায় পর্যাপ্ত পানির প্রবাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আলোচিত তিস্তা চুক্তিতে পশ্চিমবঙ্গ যাতে বাগড়া না দিতে পারে, তার জন্য মিশ্র ও কুলবে ওই সুপারিশগুলো খুব গুরুত্ব দিয়ে দেখেছেন।
বৈঠকের আলোচনার বিষয়ে অবগত এক কর্মকর্তা বলেন, “শীত ও শুষ্ক মৌসুমে ব্যবহারের জন্য বর্ষাকালে তিস্তার উদ্বৃত্ত পানি ধরে রাখতে উত্তর বাংলায় কয়েকটি জলাধার তৈরিতে পুরো অর্থায়নের প্রস্তাব মমতা ব্যানার্জীকে কেন্দ্র দেবে বলেই মনে হচ্ছে।”
মমতা বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গের স্বার্থ রক্ষা করে বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তা চুক্তিতে তার আপত্তি নেই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই কর্মকর্তা বলেন, “বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলোর জন্য ভারত যদি বড় ধরনের ঋণ দেওয়ার প্রস্তাব দিতে পারে, তাহলে নিশ্চিতভাবেই জলাধারের জন্য অর্থায়নের বিষয়টিও বিবেচনা করতে পারে। বাংলার ক্ষতি না করে দিল্লির বহুকাঙ্ক্ষিত এই চুক্তিতে মমতাকে রাজি করাতে আরও কোনো ব্যবস্থা করতে হলে সেটাও নিশ্চয়ই বিবেচনা করতে পারে।”
“কাজেই এখন কেন্দ্র যদি শুকনো মৌসুমে পানি সংরক্ষণে জলাধারের জন্য টাকা দেয়, তাহলে মমতা ব্যানার্জী রাজি হতে পারে।”
তিস্তা চুক্তির বিষয়ে বাংলাদেশ নীরবতার কৌশল অবলম্বন করেছে। প্রধানমন্ত্রী হাসিনার উপদেষ্টারা বারবারই বলে আসছেন, তিস্তার চুক্তি সইয়ের বিষয়ে তারা মোদী ও মমতা উভয়ের উপর পূর্ণ আস্থাশীল।
ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্কর বৃহস্পতিবার বলেন, “আমি আপনাদের বিভ্রান্ত করতে চাই না। সত্যি বলতে আমার কাছে এই মুহূর্তে এমন কোনো কিছু নেই যাতে মনে করতে পারি, আগামী দুই দিনে নাটকীয় কিছু হতে পারে।”
তবে এই বিষয়ে একটি সমাধান বের করতে কাজ এগিয়ে চলছে বলে জানান তিনি।