সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের সময় পুলিশের উপস্থিতিতে সাংবাদিক নিহতের ঘটনায় পৌর মেয়র হালিমুল হক মিরুকে দায়ী করা হচ্ছে। তিনি নিজেও স্বীকার করেছেন, ওই সময় তিনি ‘ফাঁকা’ গুলি ছুড়েছিলেন।
Published : 04 Feb 2017, 12:46 AM
জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিরুর এক ভাইয়ের নেতৃত্বে ছাত্রলীগ নেতা বিজয় মাহমুদকে মারধরের জের ধরে বৃহস্পতিবার বিকালে ওই সংঘর্ষ হয় বলে সংশ্লিষ্টদের কথায় উঠে এসেছে।
এ ঘটনায় নিহত দৈনিক সমকালের স্থানীয় প্রতিনিধি আব্দুল হাকিম শিমুলের স্ত্রীর করা মামলায়ও মেয়র মিরু ও তার অন্য এক ভাইকে আসামি করা হয়েছে।
সংঘর্ষে আরেক মামলায় গ্রেপ্তার মেয়রের ভাই হাবিবুল হক মিন্টুকে এ হত্যা মামলাতেও গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে বলে শাহজাদপুর থানার ওসি রেজাউল করিম জানিয়েছেন। মেয়রের শটগান শুক্রবার জব্দ করেছে পুলিশ।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ঘটনার তদন্ত শুরুর কথা জানিয়ে তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগের যে-ই এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকুক না কেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দলীয় ও প্রশাসনিক উভয় ব্যবস্থাই নেওয়া হবে।
বৃহস্পতিবার দুপুরের ওই সংঘর্ষের সময় মোবাইল ফোনে ধারণ করা একটি ভিডিও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের হাতে এসেছে।
আহত ওই ব্যক্তিই সমকালের সাংবাদিক শিমুল বলে জানান শাহজাদপুর পৌর ছাত্রলীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক ফয়সাল ইসলাম সেতু।
শুক্রবার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, শাহজাদপুর সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি বিজয় মাহমুদকে মারধর করলে তার কর্মী-সমর্থকরা মেয়র মিরুর বাড়ি ঘেরাও করেন।
বিজয়ের উপর হামলার পর মেয়র থানায় খবর দিলে পুলিশ এসে তার বাড়ির সামনে অবস্থান নেয়।
“পুলিশ বিজয়ের লোকদের লাঠিপেটা করার পরপরই মেয়রের বাড়ি থেকে প্রথমে মেয়রের ভাই মিন্টু এবং পরে মেয়র নিজে শটগান নিয়ে বের হন। অস্ত্র ছিল তিনজনের হাতে, অন্যরা লাঠি নিয়ে বের হয়।”
ভিডিওতে যখন জোরালো আওয়াজ শোনা যায়, তার পরপরই একজন বলেন, “একটা পইড়া গেছে মনে হয়, না?”
পাশ থেকে একজন বলেন, “হ।”
আরেকজন প্রশ্ন করেন, “একটা পড়ছে?”
আহত ব্যক্তিকে ধরাধরি করে আনার সময় একজনকে ফোনে বলতে শোনা যায়, “গুলি লাগছে ভাই। হ ভাই হ, গুলি লাগছে যে। ভাই সেই লাগা লাইগ্যা গেছে ভাই, হ ভাই সেই মারামারি। আচ্ছা রাখলাম ভাই, আচ্ছা আচ্ছা, হ, আচ্ছা ঠিক আছে।”
সাংবাদিক শিমুলকে উন্নত চিকিৎসার জন্য শুক্রবার সকালে ঢাকা আনার পথে তার অবস্থার অবনতি হয়। পরে সিরাজগঞ্জের হাটিকুমড়ুল এলাকায় একটি হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
শিমুলের চোখ দিয়ে একটি গুলি ঢুকে মাথার মগজে প্রবেশ করেছিল বলে ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক জানিয়েছেন।
“তারা গুলি শুরু করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আমিও বাড়ির ভেতর থেকে এক রাউন্ড ফাঁকা গুলি করি।”
এই পিন্টু তার আরেক ভাই হাফিজুল হক পিন্টু, যিনি ছাত্রলীগ নেতা বিজয়কে মারধরের পরপরই গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। আর মিন্টুকে গ্রেপ্তার করা হয় ওই সংঘর্ষের পর রাতে।
ভিডিও হাতে আসার পর রাতে আবারও মেয়রের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে মোবাইল ফোনে তাকে পাওয়া যায়নি।
মারধরের আগে বিজয়কে একটি মাইক্রোবাসে তুলে নেওয়া হয়েছিল জানিয়ে তার সহকর্মী সেতু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সে সময় ৮ থেকে ১০ জন ছিল। তাদের মধ্যে শুধু পিন্টুকে বিজয় চিনতে পেরেছেন, অন্য সবাই অপরিচিত।”
বিজয়কে মারধরের ঘটনায় তার চাচা এরশাদ আলী বাদী হয়ে শুক্রবার সকালে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
মেয়র মিরু, তার ভাই পিন্টু ও মিন্টুসহ ১১ জনের নাম উল্লেখ করার পাশাপাশি অজ্ঞাতপরিচয় পাঁচ-সাতজনকে আসামি করেন তিনি।
নিহত সাংবাদিক শিমুলের স্ত্রী নুরুন্নাহার রাতে হত্যা মামলাটি দায়ের করেন। এতে মেয়র মিরু ও তার ভাই মিন্টুসহ ১৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত পরিচয় ২০ থেকে ২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে বলে শাহজাদপুরের ওসি রেজাউল জানান।
ঘটনার প্রতিবাদে শনিবার শাহজাদপুরে অর্ধদিবস হরতালের ডাক দিয়েছে ছাত্রলীগ।