দেশের ৬১ জেলায় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি বেছে নিতে প্রথমবারের মত ভোট হচ্ছে বুধবার, যদিও প্রত্যক্ষ ভোট না হওয়ায় নির্বাচনের চিরচেনা সেই আমেজ অনুপস্থিত।
Published : 27 Dec 2016, 10:50 PM
নির্দলীয় প্রতীকে এ নির্বাচনে ভোট দিচ্ছেন স্থানীয় সরকারের সবগুলো প্রতিষ্ঠানের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা। সব মিলিয়ে ভোটার সংখ্যা ৬৩ হাজারের কিছু বেশি হলেও এ নির্বাচন আয়োজনে ইসির খরচ হবে সোয়া পাঁচ কোটি টাকা।
সাধারণ জনগণের সরাসরি অংশগ্রহণ থাকছে না বলে বুধবার নির্বাচনী এলাকায় সাধারণ ছুটি নেই। তবে ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত স্থাপনাগুলোর সব কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
বিএনপি ও জাতীয় পার্টির বর্জনের মধ্যে এ নির্বাচনে ২১ জেলায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে গেছেন ইতোমধ্যে। বাকি অধিকাংশ জেলায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের প্রতিদ্বন্দ্বী মূলত আওয়ামী লীগ নেতারাই।
পরোক্ষ ভোট হলেও এর ফল প্রভাবিত করার চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় এমপিদের বিরদ্ধে। এ নির্বাচনে টাকার খেলা চলছে বলে যে খবর পত্রিকায় এসেছে, তা অস্বীকার করার উপায় নেই বলেও মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
কোনো ধরনের অনিয়ম সহ্য করা হবে না বলে সবাইকে হুঁশিয়ার করেছে নির্বাচন কমিশন। প্রতিটি কেন্দ্রে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি নির্বাহী হাকিমরাও রয়েছেন। কোনো ভোটার মোবাইল ফোন বা কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইস নিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবে না।
ভোট: ২৮ ডিসেম্বর, বুধবার
ভোটগ্রহণ: সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা।
মোট জেলা: পার্বত্য তিন জেলা বাদে দেশের বাকি ৬১ জেলায় ভোট হবে।
পদ: প্রতিটি জেলা পরিষদে একজন চেয়ারম্যান, ১৫ জন সাধারণ সদস্য এবং ৫ জন সংরক্ষিত সদস্য নির্বাচিত করা হবে।
ভোটার: ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, উপজেলা ও সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা ভোট দেবেন এ নির্বাচনে।
মোট ৬৩ হাজার ১৪৩ জন ভোটারের মধ্যে ৪৮ হাজার ৩৪৩ জন পুরুষ, ১৪ হাজার ৮০০ জন নারী।
সর্বোচ্চ ভোটার চট্টগ্রামে, ২৭০৬ জন; সর্বনিম্ন মেহেরপুরে, ২৬৯ জন।
প্রার্থী: চেয়ারম্যান পদে ১৪৬ জন, সাধারণ সদস্য পদে ২ হাজার ৯৮৬ জন এবং সংরক্ষিত সদস্য পদে ৮০৬ জন লড়ছেন। সব মিলিয়ে প্রার্থী সংখ্যা ৩ হাজার ৯৩৮ জন।
ভোট ছাড়াই নির্বাচিত: চেয়ারম্যান পদে ২১ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। আরও একজন বিনা ভোটে জয়ের পর্যায়ে গেলেও আদালতের আদেশে ওই প্রক্রিয়া আটকে গেছে। সংরক্ষিত সদস্য পদে ৬৯ জন এবং সাধারণ সদস্য পদে ১৬৬ জন নির্বাচিত হয়েছেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়।
ভোটের আয়োজন: প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি ভোটকেন্দ্র। প্রতিটি কেন্দ্রে পুরুষ ও মহিলা ভোটারদের জন্য আলাদা কক্ষ রয়েছে। কিছু প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় বুধবার ভোটগ্রহণ চলছে মোট ৮৩৬ কেন্দ্রে।
ভোট নেবেন যারা: এ নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন জেলা প্রশাসক। আর তার সহকারী হিসেবে রয়েছেন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা। প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন অন্য নির্বাচন কর্মকর্তারা।
যেভাবে হবে ভোট
# এ নির্বাচনের জন্য প্রতিটি জেলার সীমানা ১৫টি ওয়ার্ডে ভাগ করা হয়েছে। তিনটি করে ওয়ার্ড নিয়ে হবে একটি সংরক্ষিত ওয়ার্ড, যার সদস্য হবেন একজন নারী।
# কোন এলাকার ভোটার কোন কেন্দ্রে ভোট দেবেন তা আগেই গেজেট আকারে প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন।
# কেন্দ্রে যাওয়ার পর একজন ভোটারকে তিনটি আলাদা ব্যালট দেওয়া হচ্ছে। চেয়ারম্যান পদের ব্যালট সাদা, সাধারণ ওয়ার্ডের সদস্য পদের জন্য সবুজ এবং নারী সদস্য পদের জন্য গোলাপী ব্যালটে ভোট দেওয়ার নিয়ম।
# প্রতিটি ব্যালটে একজন করে প্রার্থীর প্রতীকে সিল দিয়ে ব্যালট বাক্সে ফেলতে হবে ভোটারকে।
নিরাপত্তা
এ নির্বাচনে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ, বিজিবি, আনসার ও ভিডিপি, কোস্ট গার্ড, ব্যাটালিয়ন আনসার সদস্যরা নিয়োজিত রয়েছেন। মোবাইল/স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসাবে রয়েছে পুলিশ, র্যাব, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসার।
ভোটের দিন এবং তার আগে একদিন ও পরে একদিন মিলিয়ে মোট তিনদিন ভোটকেন্দ্রে ও সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন থাকছে। প্রতিটি কেন্দ্রে রয়েছে ২০ জন করে।
প্রতিটি ভোটকেন্দ্রের জন্য পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসার নিয়ে একটি মোবাইল/স্ট্রাইকিং ফোর্স এবং র্যাবের একটি করে মোবাইল/স্ট্রাইকিং ফোর্স রয়েছে।
তবে বাস্তব অবস্থা ও স্থানীয় চাহিদার ভিত্তিতে গুরুর্ত্বপূর্ণ প্রতিটি ভোটকেন্দ্রের জন্য এক প্লাটুন বিজিবি/কোস্ট গার্ড মোতায়েন করা হবে।
মোবাইল ফোর্সের একটি দলকে ভোটকেন্দ্রের আশপাশের এলাকায় নিবিড় টহলে থাকতে বলেছে ইসি।
প্রতি কেন্দ্রে রয়েছেন একজন করে নির্বাহী হাকিম। এছাড়া ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার লক্ষ্যে ৬১ জেলায় ৯১ জন নির্বাহী হাকিম দায়িত্ব পালন করছেন ১২ ডিসেম্বর থেকে। আর নির্বাচনী অপরাধ আমলে নিয়ে বিচার করতে ৯১ জন বিচারিক হাকিম সোমবার থেকে মাঠে রয়েছেন।
ভোটের আগের দিন মধ্যরাত ১২টা থেকে ভোটের দিন মধ্যরাত ১২টা পর্যন্ত ভোটকেন্দ্রের আশপাশের এলাকায় যান্ত্রিক যানবাহন ও নৌ-যান চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে ভোটের পরদিন সকাল ৬টা পর্যন্ত ভোটকেন্দ্রের আশপাশে মোটর সাইকেল চলাচলে থাকবে কড়াকড়ি।
ভোট বৃত্তান্ত
# ১৯৮৯ সালে তিন পার্বত্য জেলায় একবারই সরাসরি নির্বাচন হয়েছিল। আর কোনো জেলা পরিষদ নির্বাচন হয়নি।
# ১৯৮৮ সালে এইচ এম এরশাদ সরকার প্রণীত স্থানীয় সরকার (জেলা পরিষদ) আইনে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে সরকার কর্তৃক নিয়োগ দেওয়ার বিধান ছিল; পরে আইনটি অকার্যকর হয়ে পড়ে।
# ২০০০ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচিত জেলা পরিষদ গঠনের জন্য নতুন আইন করে।
# এরপর ২০১১ সালের ১৫ ডিসেম্বর সরকার ৬১ জেলায় আওয়ামী লীগের জেলা পর্যায়ের নেতাদের প্রশাসক নিয়োগ দেয়। অনির্বাচিত এই প্রশাসকদের মেয়াদ শেষেই এবারের নির্বাচন হচ্ছে।
# ২০ নভেম্বর ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মনোনয়নপত্র নেওয়া হয়। ৩ ও ৪ ডিসেম্বর বাছাইয়ের পর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সুযোগ ছিল।