সন্ত্রাসবাদবিরোধী লড়াইয়ে বাংলাদেশ ও ভারত ‘এক অবস্থানে’ রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকায় দেশটির হাই কমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা।
Published : 31 Aug 2016, 08:17 PM
ঢাকার ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজে বুধবার এক ব্ক্তৃতায় তিনি একথা বলেন।
শ্রিংলা বলেন, “আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীগুলো যেভাবে কাজ করছে তা চমৎকার সহযোগিতার নিদর্শন হয়ে দাঁড়িয়েছে- হোক সেগুলো তথ্য বিনিময় কিংবা অপরাধীদের ধরার ক্ষেত্রে।”
সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির প্রথম বাংলাদেশ সফরের একদিন পরই শ্রিংলা একথা বললেন। সংক্ষিপ্ত ওই সফরে কেরি সন্ত্রাসবাদবিরোধী যুদ্ধে বাংলাদেশকে সহযোগিতার প্রস্তাব দেন।
বক্তব্যে বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলার কথা স্মরণ করে সন্ত্রাসবাদ
মোকাবেলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর পদক্ষেপের প্রশংসা করেন শ্রিংলা।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের ভবিষ্যৎ এক সূত্রে গাঁথা।
“উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে আমরা একে অপরের অংশীদার।”
‘কনটেম্পরারি ইন্ডিয়া, ইটস ফরেন পলিসি অ্যান্ড সিকিউরিটি স্ট্র্যাটেজি: ইমপ্লিকেশনস ফর বাংলাদেশ’ শিরোনামের ওই আলোচনায় শ্রিংলা বাংলাদেশ ও ভারতের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক অন্যদের জন্য ‘দৃষ্টান্ত’ হিসাবে অভিহিত করেন।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আজকে সফলতার নমুনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্য প্রতিবেশীদের সঙ্গেও আমরা এটা করতে চাই।”
তবে এটা কেবল ‘শুরু’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আমাদের অনেক দূর পাড়ি দিতে হবে। আমরা একসঙ্গে কাজ করে যেতে পারলে আমরা এই অঞ্চলকে প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের মডেলে রূপান্তর করতে পারব।”
শ্রিংলা জানান, জাতিসংঘে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণের জন্য মতৈক্য তৈরিতে ভারত চেষ্টা করে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, জঙ্গিদের অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ, তাদের চলাচল বাধা তৈরি, জঙ্গিদের অর্থায়ন আটকে দেয়া, ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সন্ত্রাসীদের পদচারণা সীমিত করে সাইবার জগতকে নিরাপদ করতে ভারত সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
“এ ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশও; তারা আমাদের সন্ত্রাসবাদবিরোধী লড়াইয়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার।”
শ্রিংলা বলেন, ভারতের পররাষ্ট্রনীতি হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা; যার মাধ্যমে উন্নয়নের দিকে মনোযোগ দেওয়া সহজ হবে।
উন্নয়নের স্বার্থে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ‘প্রতিবেশীরাই প্রথম’ নীতি নিয়েছেন বলে জানান তিনি।
“আমাদের অ্যাক্ট ইস্ট পলিসির লক্ষ্য হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে যোগাযোগ বাড়ানো। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ এই পলিসিতে বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।”
ভারতের পাঁচ রাজ্যের সঙ্গে সীমান্ত থাকায় বাংলাদেশ ভারত ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে ‘আন্তর্জাতিক গেটওয়ে’ হয়ে উঠতে পারে বলেও মন্তব্য করেন ভারতের হাই কমিশনার।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধিতে গুরুত্ব
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ভারত-বাংলাদেশের সহযোগিতা আরও বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন হর্ষবর্ধন শ্রিংলা।
তিনি বলেন, জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সব দেশের পররাষ্ট্র নীতিরই অন্যতম প্রধান লক্ষ্য।
“যদি ভারত ও বাংলাদেশ এই খাতে সহযোগিতায় সর্বোচ্চ নজর দেয়, তাহলে আমরা এ অঞ্চল বদলে দিতে পারব। একসঙ্গে কাজ করলে আমাদের সামনে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে।”
দুই দেশের জ্বালানি সহযোগিতার ক্ষেত্রে নবায়নযোগ্য ও বেসামরিক পরমাণু শক্তিও ‘গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক’ হয়ে উঠতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
জ্বালানি সহযোগিতা দিয়ে দক্ষিণ এশিয়া ‘স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের’ স্বাক্ষর রাখতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেন শ্রিংলা।
“ভারতের বেসরকারি উদ্যেক্তারা এ খাতে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করছে; এটা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি নিয়ে বিনিয়োগকারীদের ক্রমবর্ধমান আত্মবিশ্বাসের প্রতিফলন।”
জ্বালানি সহযোগিতার অংশ হিসেবে চট্টগ্রামে একটি এলপিজি টার্মিনাল নির্মাণে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে চুক্তি হয়েছে জানিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, আন্তঃসীমান্ত ডিজেল পাইপলাইন বসানোর বিষয়ে এখন দুই দেশের মধ্যে আলোচনা চলছে।