উত্তরার দিয়াবাড়ি খাল থেকে উদ্ধার অস্ত্রগুলো ‘নতুন ও অব্যবহৃত’ জানিয়ে ঢাকার পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বিএনপি-জামায়াত জোটের দিকে ইঙ্গিত করে বলেছেন, ‘নারী-শিশু হত্যায়’ জড়িত চক্রটিই ওই অস্ত্র মজুদ করেছিল বলে তাদের ধারণা।
Published : 20 Jun 2016, 02:48 PM
ওই অস্ত্রের ‘প্রকৃত মজুদদারদের’ খুঁজে বের করতে গোয়েন্দা পুলিশকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলেও সোমবার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন তিনি।
শনিবার উত্তরা ১৬ নম্বর সেক্টরের দিয়াবাড়ি খাল থেকে ৯৭টি পিস্তল, ৪৬২টি ম্যাগাজিন, এক হাজার ৬০টি গুলি, ১০টি বেয়নেট ও ১০৪টি গুলি তৈরির ছাচ উদ্ধার করা হয়। পরদিন এক কার্টন বন্দুকের ম্যাগজিন উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, পিস্তলগুলোর মধ্যে ৯৫টিই বিদেশি; বেশিরভাগই সেভেন পয়েন্ট সিক্স টু বোরের। যেসব ম্যাগাজিন শনিবার পাওয়া গেছে তার মধ্যে ২৬৩টি এসএমজির। আর গুলির মধ্যে ২২০টি সেভেন পয়েন্ট সিক্স টু বোর পিস্তলের এবং ৮৪০টি নাইন এমএম পিস্তলের।
পুলিশের গণমাধ্যম কার্যালয়ে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে ডিএমপি কমিশনার বলেন, “এটি কোনো সাধারণ সন্ত্রাসীর কাজ নয়। এগুলো মজুদের সঙ্গে দেশি-বিদেশি চক্র জড়িত।”
“যারা ২০১৫ সালে ৯২ দিন এ দেশের নারী ও শিশুকে পুড়িয়ে মেরেছে, জনজীবনকে দুর্বিসহ করেছে- এই ধরনের চক্র যারা দেশি ও আন্তর্জাতিক মদদপুষ্ট, যারা সংঘবদ্ধভাবে এই দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং দৃশ্যমান উন্নয়ন ব্যাহত করে জনমনে আতঙ্ক তৈরি করতে চায়- সেই ধরনের চক্রের অপতৎপরতার অংশ এটি। প্রাথমিকভাবে তা মনে হচ্ছে। বাকিটা তদন্ত সাপেক্ষে বলতে পারব,” বলেন তিনি।
দশম জাতীয় সংসদের বর্ষপূর্তি ঘিরে দেশের বিভিন্ন এলাকায় গাড়িতে অগ্নিসংযোগের জন্য সংসদ নির্বাচন বর্জনকারী বিএনপি-জামায়াত জোটকে দায়ী করে আসছে সরকার। যেসব ঘটনায় নিহতদের মধ্যে নারী এবং শিশুও রয়েছে।
গত দুই বছরের একের পর এক হত্যাকাণ্ড এবং জঙ্গি কর্মকাণ্ডের জন্যও বিএনপি-জামায়াত জোটকে দায়ী করে আসছে সরকার।
সাংবাদিকদের প্রশ্নে ডিএমপি কমিশনার বলেন, “আমরা ২০১৩ সালের মতিঝিলের তাণ্ডব, ২০১৪ সালের জ্বালাও-পোড়াও এবং ২০১৫ সালের নজিরবিহীন সন্ত্রাস দেশপ্রেমের সঙ্গে কঠোরভাবে দমন করেছি। আজকে এই চক্রের অস্ত্র আবিষ্কার করেছি, উদ্ধার করেছি।”
উত্তরার ওই অস্ত্র উদ্ধারের ফলে জাতি বড় ধরনের সহিংসতা ও নাশকতার হাত থেকে ‘বেঁচে গেছে’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নে মিরপুর ধউড় ব্রিজ ও আশুলিয়া থানার দূরত্ব এক কিলোমিটার জানিয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, “এই এক কিলোমিটারে দুটো স্থায়ী চেকপোস্ট রয়েছে। চেকপোস্ট দিয়ে গাড়ি আসার কোনো প্রশ্নই আসে না।”
তাদের প্রাথমিক ধারণা, এসব অস্ত্র ও গোলাবারুদ কোনো এক সময় উত্তরায় আনা হয়েছিল এবং গাড়িটা উত্তরার ভেতর দিক থেকে এসে দিয়াবাড়ির খালে অস্ত্র ও গোলাবারুদ ফেলে যায়।
প্রেস ব্রিফিংয়ে অস্ত্র উদ্ধার অভিযান সম্পর্কে পুলিশ কমিশনার বলেন, ওই এলাকা থেকে অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের অনেক ঘটনা আছে। পুলিশের এক সদস্য সেখানে সপরিবারে বৌদ্ধ মন্দির দেখতে গেলে একটি কালো গাড়ি দেখতে পান। প্রথমে তার ধারণা হয়েছিল, লাশ কেউ ফেলে রেখে যাচ্ছে। তাৎক্ষণিক ওই পুলিশ সদস্য থানায় জানালে ওসি ২০ মিনিটের মধ্যেই সেখানে হাজির হয়ে অস্ত্রগুলো উদ্ধার করেন।
চট্টগ্রামে পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী হত্যার পর ঘোষণা দিয়ে শুরু হওয়া সাঁড়াশি অভিযান সম্পর্কেও সাংবাদিকরা তার কাছে জানতে চান।
পুলিশ সুকৌশলে সুপরিকল্পিতভাবে জননিরাপত্তা নিশ্চিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে বলেও দাবি করেন তিনি।
উত্তরায় উদ্ধারকৃত অস্ত্রগুলো নতুন ও ব্যবহার উপযোগী জানিয়ে ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান বলেন, “অস্ত্রগুলো একেবারই আনইউজড এবং নতুন। এই অস্ত্রগুলো কোথায় তৈরি হয়েছে- তা লেখা নেই। কোনো লট নম্বর নেই। ঢাকার বাইরে থেকে এগুলো আসতে পারে।”
এ ঘটনায় কারা জড়িত- তা জানতে তদন্তে জোর দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “এই অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়ে তদন্ত করবে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। ইতোমধ্যে এই ঘটনায় রাজধানীর তুরাগ থানায় জিডি করা হয়েছে। পুলিশের যতটুকু মেধা, সামর্থ্য ও যোগ্যতা রয়েছে পুলিশ খুঁজে বের করবে কারা, কেন- এই অস্ত্রগুলো মজুদ করেছিল।”