জাতীয় শিক্ষা নীতির আলোকে প্রাথমিক শিক্ষাকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত উন্নীত করে তা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে ন্যস্ত করার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে।
Published : 18 May 2016, 01:43 PM
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজারসহ শীর্ষস্থানীয় শিক্ষাবিদদের উপস্থিতিতে বুধবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন সংক্রান্ত সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়।
পরে নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, “আমরা ২০১০ সালের শিক্ষানীতির আলোকে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।... দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার পুরো ইতিহাসে এ ধরনের সিদ্ধান্ত এই প্রথম।”
শিক্ষামন্ত্রী জানান, শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন সংক্রান্ত সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সকল শিক্ষা কার্যক্রম প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে চলে যাবে।
“এরপরে একটু আনুষ্ঠানিকতা আছে। এখন একটা সারমর্ম প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠিয়ে অনুশাসন নিয়ে আসতে হয়। প্রয়োজনে মন্ত্রিসভার অনুমোদন করতে হবে পরে। সেটা আনুষ্ঠানিকতা। শিক্ষা নীতির আলোকে এই সিদ্ধান্ত নিতে আমরা ক্ষমতাবান। দুই মন্ত্রণালয় মিলে ঠিক করে নিয়েছি, এতে কেউ দ্বিমত করবে না।”
যা কিছু বদলাবে
>> প্রাথমিক শিক্ষা হবে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত।
>> প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষা কার্যক্রম দেখভাল করবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
>> পরিবর্তন আসবে তদারকি পর্যায়ে, অর্থাৎ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে।
>> যেসব স্কুল এখন পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ায়, আপাতত সেগুলো অষ্টম পর্যন্ত হবে না। সব মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিও খোলা হবে না।
>> পঞ্চম শ্রেণির বদলে অষ্টম শ্রেণি ধরা হবে প্রাথমিকের সমাপনি কাল।
>> এখনকার মতো প্রাথমিক ও অষ্টম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা থাকবে কি-না, থাকলে তা কীভাবে, সে সিদ্ধান্ত মন্ত্রণালয় পরে জানাবে।
“অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত যে যেখানে যেভাবে আছে, সেভাবেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে চলে যাবে,” বলেন নাহিদ।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার এ প্রসঙ্গে বলেন, শিক্ষানীতি হওয়ার পর অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন, অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা হলে হয়তো সব প্রাইমারি স্কুলে ক্লাস এইট পর্যন্ত খোলা হবে, যদিও তা সঠিক নয়।
“আমাদের দেশের প্রায় সব ইউনিয়নেই নিম্ন এবং মাধ্যমিক স্কুলের সংখ্যা অনেক। কোথাও ৫-৭টাও আছে। সব প্রাইমারিতে যদি হাই স্কুল খোলা হয়, সব হাই স্কুলেই যদি একাদশ দ্বাদশ খোলা হয়, তাহলে বড় ধরনের ম্যাসাকারের মতো ব্যাপার হবে। কোনো ছাত্রই কেউ পাবে না।
“এসব কিছু মাথায় রেখে সব স্কুলে আর ক্লাস এইট খোলা যাবে না, দরকার নাই। যেখানে যেভাবে আছে, সেভাবেই শিক্ষা নীতির আলোকে আমরা অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত বাস্তবায়ন করব।”
প্রাথমিকের খতিয়ান
দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়, এক্সপেরিমেন্টাল স্কুল, ইবতেদায়ি মাদরাসা, কিন্ডারগার্টেন, এনজিও স্কুল, কমিউনিটি স্কুল, হাইস্কুল ও হাই মাদরাসার সঙ্গে সংযুক্ত প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি, ব্রাক স্কুল, শিশু কল্যাণ প্রাইমারি স্কুল, অন্যান্য স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা দেওয়া হয়।
# মোট প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: ১ লাখ ৮হাজার ৫৩৭টি
শিক্ষক: ৪ লাখ ৮২ হাজার ৮৮৪জন
শিক্ষার্থী: ১ কোটি ৯৫ লাখ ৫২ হাজার ৯৭৯জন
# মোট সরকারি প্রাথমিক স্কুল: ৬৩ হাজার ৪১টি
শিক্ষক: ৩ লাখ ১৯ হাজার ১১২ জন
শিক্ষার্থী ১ কোটি ৪৬ লাখ ৭১ হাজার ৯১৪জন
# মোট মাধ্যমিক বিদ্যালয়: ১৯ হাজার ৬৮৪টি
এর মধ্যে নিম্ন মাধ্যমিক ২ হাজার ৪১২টি
মাধ্যমিক ১৬ হাজার ৩১৯টি
কলেজের সঙ্গে যুক্ত ৯৫৩টি
শিক্ষক: ২ লাখ ৩২ হাজার ৯৯৪ জন
শিক্ষার্থী: ৯১ লাখ ৬০ হাজার ৩৬৫ জন
লক্ষ্যপূরণ ‘আগেই’
শিক্ষানীতিতে ২০১৮ সালের মধ্যে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা হিসেবে বিবেচনার কথা বলা হয়েছিল জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ২০১৬ সালেই সে লক্ষ্য পূরণ সম্ভব হয়েছে। ২০১৮ সালের মধ্যে এর পূর্ণাঙ্গ রূপ দেওয়া সম্ভব হবে।
এ সিদ্ধান্তের ফলে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত সার্বিক শিক্ষা কার্যক্রমে বড় পরিবর্তন আসবে। পাঠ্যক্রম, কাঠামো, শিক্ষক, প্রশিক্ষণ, আয়োজন, জনবল, ব্যবস্থাপনা- সব কিছুই নতুন করে সাজাতে হবে। সবার সহযোগিতা নিয়েই এ বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানান মন্ত্রী।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “যার যার মন্ত্রণালয়ের কাজগুলো স্থির করুন। কার কী সহযোগিতা দরকার সেটা বলুন, আমরা বলছি, আমাদের এই বড় পরিবর্তনে সব ধরনের সহযোগিতা আমরা দিয়ে যাব।”
মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার বলেন, “অনেক কিছু বাকি। এর তদারকি যা করা দরকার সেটা আমরা করব। এই ঐতিহাসিক দিনে এই সিদ্ধান্তটা আমরা নিলাম। কোথায় পড়ছে, কী পড়ছে, বেসরকারি নাকি মাদরাসায়- এসব না, অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত যে ডিগ্রি হবে, সেটা হবে প্রাথমিক শিক্ষার।”
অন্যদের মধ্যে শিক্ষা সচিব মো. সোহরাব হোসাইন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ফাহিমা খাতুন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন সংক্রান্ত সভায় উপস্থিত ছিলেন।