শ্রমিক সংগ্রামের সেই দিন

শ্রমিক সংগঠনগুলোর নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পালিত হচ্ছে শ্রমিকের অধিকার আদায়ের রক্তস্নাত ঐতিহাসিক ঘটনাপ্রবাহের দিন মে দিবস।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 May 2016, 03:20 AM
Updated : 1 May 2016, 06:49 AM

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও পহেলা মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংহতি দিবস হিসাবে পালন করছে; এ উপলক্ষে রোববার সাধারণ ছুটি।

কল কারখানার পাশাপাশি সব সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালত, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এদিন বন্ধ রয়েছে। সংবাদপত্রগুলো প্রকাশ করেছে বিশেষ ক্রোড়পত্র, টেলিভিশন ও বেতারে সম্প্রচার করা হচ্ছে মে দিবসের তাৎপর্য নিয়ে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা।

এবারের মে দিবসের প্রতিপাদ্য- ‘মে দিবসের মর্মবাণী, শ্রমিক মালিক ঐক্য জানি।’

১৮৮৬ সালে আমেরিকার শিকাগো শহরে হে মার্কেটের শ্রমিকরা শ্রমের ন্যায্য মূল্য এবং আট ঘণ্টা কাজের সময় নির্ধারণ করার দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোলে।

আন্দোলন দমনে সেদিন শ্রমিকদের ওপর গুলি চালানো হয়। ১০ শ্রমিকের আত্মত্যাগে গড়ে ওঠে বিক্ষোভ। প্রবল জনমতের মুখে যুক্তরাষ্ট্র সরকার শ্রমিকদের আট ঘণ্টা কাজের সময় নির্ধারণ করতে বাধ্য হয়।

১৮৮৯ সালের ১৪ জুলাই ফ্রান্সের প্যারিসে আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে শিকাগোর শ্রমিকদের সংগ্রামী ঐক্যের অর্জনকে স্বীকৃতি দিয়ে ১ মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংহতি দিবস ঘোষণা করা হয়।

১৮৯০ সাল থেকে সারাবিশ্বে শ্রমিক সংহতির আন্তর্জাতিক দিবস হিসেবে মে মাসের ১ তারিখে 'মে দিবস' পালিত হচ্ছে।

দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আলাদা বাণী দিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেছেন, বিশ্বায়ন ও মুক্তবাজার অর্থনীতিতে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে উন্নত কর্মপরিবেশ, শ্রমিক-মালিক সুসম্পর্ক, শ্রমিকের অধিকার নিশ্চিতকরণসহ বিশ্বমানের পণ্য উৎপাদনের বিকল্প নেই। এজন্য উৎপাদনশীলতা ও শ্রমিকদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি, নিরাপদ কর্মপরিবেশ, ন্যায্য মজুরি, শ্রমিকদের অধিকার ও কল্যাণ নিশ্চিত করাসহ সুস্থ শিল্পসম্পর্ক প্রতিষ্ঠা জরুরি।

“সরকার বাংলাদেশকে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যআয়ের এবং ২০৪১ সালে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করতে ‘রূপকল্প ২০২১’ ও ‘রূপকল্প ২০৪১’ ঘোষণা করেছে। এ কর্মসূচির সফল বাস্তবায়নে শ্রমিক-মালিকের মধ্যকার বিদ্যমান আন্তরিক সম্পর্ক অব্যাহত রেখে নতুন নতুন শিল্প স্থাপন ও আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির সার্থক ব্যবহারের মাধ্যমে উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।”

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেন, জাতির পিতার আদর্শ অনুসরণ করে তার সরকার দেশের শ্রমজীবী মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ও কল্যাণে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

‘‘মহান মে দিবস শ্রমজীবী-মেহনতি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার এক অবিস্মরণীয় দিন। এ দিবস উপলক্ষে আমি বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল মেহনতি মানুষের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করছি।”

শ্রমিক কল্যাণে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমাদের এসকল উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের সুফল শ্রমজীবী  সমাজ পেতে শুরু করেছে। আমরা শ্রমজীবী মানুষের কল্যাণে লাগসই প্রযুক্তির উদ্ভাবন ও ব্যবহার এবং উন্নত ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে ‘রূপকল্প ২০২১’ ও ‘রূপকল্প ২০৪১’ বাস্তবায়নে বদ্ধপরিকর।

এ দিবসে রাষ্ট্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসাবে সকালে দৈনিক বাংলা মোড় থেকে প্রেসক্লাব পর্যন্ত বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার আয়োজন করে শ্রমমন্ত্রণালয়। বিকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় আয়োজিত মে দিবসের আলোচনা সভায় বক্তব্য দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বিএনপির শ্রমিক সংগঠন জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল বিকালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শ্রমিক সমাবেশের আয়োজন করেছে, যেখানে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ারও বক্তৃতা করার কথা।

সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির (জাপা) শ্রমিক সংগঠন জাতীয় শ্রমিক পার্টি বিকালে তাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করবে। পার্টি চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ সেখানে বক্তব্য দেবেন।

সকালে পল্টনে মুক্তি ভবনের সামনে শ্রমিক সমাবেশ করবে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। জিপিও মোড়ে লাল পতাকা সমাবেশ করবে জাতীয় শ্রমিক জোট। পল্টন মোড়ে জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন করবে শ্রমিক দিবসের সমাবেশ।

এ ছাড়া শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ), বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, জাতীয় গার্মেন্টস কর্মচারী ফেডারেশন, বস্ত্র ও পোশাক শিল্প শ্রমিক লীগ, লেবার ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন, গৃহকর্মী অধিকার প্রতিষ্ঠা নেটওয়ার্ক, জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন, রেডিমেট গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশন, সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন, গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরাম, ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন, জাতীয় মানবাধিকার সমিতি, শ্রমিক ঐক্য, কর্মজীবী নারী, সীমান্ত কালচারাল ফাউন্ডেশন, জাগো বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন, বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশন, আওয়ামী মোটর চালক লীগসহ বিভিন্ন সংগঠন মে দিবস উপলক্ষে সভা-সমাবেশ, মিছিল ও শোভাযাত্রার কর্মসূচি নিয়েছে।