সম্প্রতি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মাদ্রাসাছাত্রদের তাণ্ডবের সময় ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ সঙ্গীতাঙ্গনে ভাংচুর ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্লিপ্ত ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম।
Published : 19 Jan 2016, 02:31 PM
মঙ্গলবার রাজধানীর শাহবাগে এক মানববন্ধনে তিনি বলেন, “প্রথমে আমি নিন্দা জানাই আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর ভূমিকাকে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সেদিন যদি সাহসিকতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবেলা করত তাহলে এই ঘটনা এত দূর গড়াত না।
“আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নির্লিপ্তভাবে কাজ করছে। হামলাকারীদের কোনোভাবে প্রতিহত করে নাই। কোনো ধরনের কাঁদুনে গ্যাস ছোড়েনি। যার কারনে এই ঘটনা এত বেশি করে ছড়িয়েছে।”
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তাণ্ডবের প্রতিবাদে ঢাকাস্থ ব্রাহ্মণবাড়িয়াবাসি এ মানববন্ধনের আয়োজন করে।
গত ১১ জানুয়ারি বিকালে শহরের জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুছিয়া মাদ্রাসার এক ছাত্র মোবাইল ফোনসেট কেনার জন্য জেলা পরিষদ মার্কেটে গেলে বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে তাকে চড় মারেন এক দোকানি।
এ খবর পেয়ে ওই মাদ্রাসার অর্ধশতাধিক ছাত্র দোকানটি ভাঙচুর করে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে শুরু হয় সংঘর্ষ। এতে আহত মাদ্রাসাছাত্র মাসুদুর রহমান মঙ্গলবার ভোরে মারা যান।
এর জেরে পরদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত শহরজুড়ে তাণ্ডব চালায় মাদ্রাসাছাত্ররা। জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় ও ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ সংগীতাঙ্গন ভাংচুরের পাশাপাশি সুর সম্রাটের স্মৃতিবিজড়িত বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রও পুড়িয়ে দেয় মাদ্রাসাছাত্ররা।
তারা জেলা শিল্পকলা একাডেমি, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমপ্লেক্সের ব্যাংক এশিয়া, প্রশিকা মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্রেও ভাংচুর চালায়। সেদিন রেলস্টেশন ভাংচুর এবং লাইন থেকে স্লিপার তুলে নেওয়ায় ঢাকার সঙ্গে চট্টগ্রাম ও সিলেটের ট্রেন চলাচল সাত ঘণ্টা বন্ধ ছিল।
মানববন্ধনে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, “সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গায় যেভাবে হামলা করা হয়েছে এবং যেভাবে একাত্তরের ঘাতকদের বিচার শুরু হওয়ার পর সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক স্থানসহ সারাদেশে সাম্প্রদায়িক মৌলবাদি গোষ্ঠী তাণ্ডব চালিয়েছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনা এই ঘটনাগুলোর সঙ্গে একই সূত্রে গাঁথা।
“এটি কোনো বিচ্ছিন ঘটনা নয়। রামুর ঘটনাসহ অতীতে যতগুলো ঘটনা ঘটেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনা তারাই ঘটিয়েছে। এ হামলায় যে ক্ষতি হয়েছে, তা অর্থ দিয়ে পরিমাপ করা যাবে না। এগুলো নষ্ট করার মধ্য দিয়ে তারা আমাদের ঐতিহ্যের ওপর আঘাত হেনেছে।”
ব্রাহ্মণবাড়িয়া ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত করতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাংসদ রবিউল আলম মোক্তাদির চৌধুরীর সভাপতিত্বে মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মিজানুর রহমান, দৈনিক আমাদের সময়ের সম্পাদক আবু হোসেন শাহরিয়ার প্রমুখ।