গাইবান্ধায় শিশু গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় অভিযুক্ত সংসদ সদস্যের পদ বাতিল ও তার দ্রুত বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে শিশু অধিকার নিয়ে কাজ করা কয়েকটি সংগঠন।
Published : 07 Oct 2015, 06:30 PM
এছাড়া এসব ঘটনার স্বচ্ছ বিচার নিশ্চিত করতে আইন মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি মনিটরিং সেল গঠনেরও দাবি এসেছে।
বুধবার রাজধানীর রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে শিশু হত্যা ও নির্যাতনের ঘটনাগুলোর দ্রুত এবং স্বচ্ছ বিচারের দাবিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান হয়।
শিশু অধিকার নিয়ে কাজ করছে এমন ১০টি জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক সংগঠন ও নেটওয়ার্ক নিয়ে গঠিত চাইল্ড রাইটস অ্যাডভোকেসি কোয়ালিশন ইন বাংলাদেশ এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
সংবাদ সম্মেলনে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সুলতানা কামাল বলেন, “এটা আমাদের জন্য বিব্রতকর ও লজ্জাকর যে এরকম একজন ব্যক্তিকে আমরাই জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করেছি।”
“কিন্তু এ ঘটনার পর আমরা আর তাকে ওই পদে দেখতে চাই না। আমরা অবিলম্বে তার সংসদ সদস্যপদ বাতিল চাই। তাকে আমাদের প্রতিনিধি হিসেবে আর দেখতে চাই না।”
গত ২ অক্টোবর ভোরে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের ব্র্যাক মোড়ের গোপালচরণ এলাকায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের গুলিতে নয় বছর বয়সী শাহাদাত হোসেন সৌরভ আহত হয় বলে তার পরিবারের অভিযোগ।
গুলিবিদ্ধ শিশুটির বাবা সাজু মিয়া ৩ অক্টোবর এ ঘটনায় সংসদ সদস্য লিটনের বিরুদ্ধে সুন্দরগঞ্জ থানায় একটি মামলাও করেছেন।
পরবর্তীতে লিটনের এক আত্মীয় তার পিস্তল ও শটগান থানায় জমা দেওয়ার পর ৪ অক্টোবর লিটনের আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল করে প্রশাসন।
গাইবান্ধার ওই ঘটনা নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনার মধ্যেই ‘আসল ঘটনা’ তদন্ত করে দেখার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও।
লিটনকে গ্রেপ্তারের দাবি উঠেছে বিএনপির পক্ষ থেকেও।
এরই মধ্যে গাইবান্ধার ধুবনী কঞ্চিবাড়ী কলেজ, সুন্দরগঞ্জ মহিলা কলেজ ও সুন্দরগঞ্জ ডি ডব্লিউ কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি পদ থেকে লিটনকে প্রত্যাহার করেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ।
শিশুকে গুলির ঘটনায় প্রশাসনের ভূমিকার সমালোচনা করে সুলতানা কামাল পুলিশের বক্তব্যকে ‘অত্যন্ত দায়িত্বজ্ঞানহীন’ বলে আখ্যায়িত করেন।
তিনি বলেন, “আমাদের আশঙ্কা বিচারের জন্য তাকে (সংসদ সদস্যকে) আর কোন সময়ই খুজেঁ পাওয়া যাবে না। এটা এমন কিছু কঠিন কাজ না, কিন্তু প্রশাসন না চাইলে তাকে পাওয়া যাবে না।”
শিশুর পায়ে গুলি করার অভিযোগ ওঠার পর থেকে ওই সংসদ সদস্যকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
বুধবার আলাদা এক অনুষ্ঠানে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালকে।
সরকারদলীয় সংসদ সদস্য হওয়ার কারণেই তাকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছেন না বলে অভিযোগের প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, “আইন সবার জন্য সমান। তিনি সরকারি দলের সাংসদ, নেতা-কর্মী বা যিনিই হন, তাকে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।”
জাতীয় দলের ক্রিকেটার শাহাদাত হোসেনের বাসায় শিশু গৃহকর্মী নির্যাতনের ঘটনায়ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন সুলতানা কামাল।
“ক্রিকেটারদের প্রতি মানুষের অনেক আগ্রহ। তারা মানুষের এত ভালবাসা ও সন্মান পান, কিন্তু এসবের কিছুই কি তাদের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে না?”
অত্যাচারের মাত্রা ও ধরন যে ভয়াবহ পর্যায়ে গিয়েছে তাতে আর চুপ করে থাকার অবকাশ নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন সেভ দ্য চিলড্রেন বাংলাদেশের ডেপুটি ডিরেক্টর শামসুল আলম বকুল।
বকুল জানান, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী- আগস্ট-সেপ্টেম্বর দুই মাসে দেশে ৩৭ জন শিশু শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এদের মধ্যে মারা গেছে একজন।
ঘটনাপরবর্তী অবস্থাও কোনভাবে শিশুদের পক্ষে ছিল না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
“শিশুটি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর সংসদ সদস্য গাড়িতে করে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাননি বরং শিশুটিকে বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সটিকে বাধা দেওয়া হয়েছে। জনপ্রতিনিধি হলেও শিশু নিরাপত্তা বিষয়ে তাদের কোন ‘মাইন্ড সেট’ নেই।”
সংবাদ সম্মেলনে উদ্দীপনের নির্বাহী পরিচালক ইমরান উল হক, টিডিএইড নেদারল্যান্ডস এর প্রতিনিধি এহসানুল হক বক্তব্য রাখেন।