কাউন্সিলের ১৪টি সদস্য পদের আওয়ামীসমর্থক আইনজীবীদের মোর্চা সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ (সাদা প্যানেল) পেয়েছে ১১টি পদ।
আর বিএনপির সমর্থক জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেল (নীল প্যানেল) এবার তিনটি পদ পেয়েছে, যাদের হাতে গত তিন বছর কাউন্সিলের নিয়ন্ত্রণে ছিল।
গত ২৬ অগাস্ট ভোটের পর প্রাথমিক গণনাতেই সরকারসমর্থকদের জয়ের বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। রীতি অনুযায়ী বুধবার বার কাউন্সিলে সব ফলাফল হিসেব করে বৃহস্পতিবার সকালে কাউন্সিলের চেয়ারম্যান অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আনুষ্ঠানিকভাবে এই ফল ঘোষণা করেন।
সাদা প্যানেল হিসেবে পরিচিত সমন্বয় পরিষদের প্রার্থীরা সাতটি সাধারণ সদস্য পদের মধ্যে পাঁচটিতে জয় পেয়েছেন।
সমন্বয় পরিষদের নেতৃত্বে থাকা ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম ১৪ হাজার ৪৩ ভোট, আবদুল বাসেত মজুমদার ১৫ হাজার ১০৯ ভোট, আবদুল মতিন খসরু ১৪ হাজার ৪২৪ ভোট, জেড আই খান পান্না ১৩ হাজার ৭৮ ভোট এবং শ ম রেজাউল করিম ১৩ হাজার ১৯২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন।
এদের মধ্যে ব্যারিস্টার আমীর-উল ও বাসেত মজুমদার দুজনেই আগে বার কাউন্সিলের ভাইস-চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন। সুপ্রিমকোর্ট বারের সভাপতিও ছিলেন তারা।
সাংসদ আবদুল মতিন খসরু আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক। তিনি ১৯৯৬-২০০১ সময়ে আওয়ামী লীগ সরকারের আইনমন্ত্রী ছিলেন। জেড আই খান পান্না পরিচিত মানবাধিকার আইনজীবী হিসেবে; শ ম রেজাউল করিম সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সাধারণ সম্পাদক।
নীল প্যানেল হিসেবে পরিচিত জাতীয়তাবাদী ঐক্য প্যানেলের প্রার্থীদের মধ্যে কেবল কাউন্সিলের বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেন ১৪ হাজার ২৫৯ ভোট এবং এম এম মাহবুব উদ্দিন খোকন ১৫ হাজার ৬৯ ভোট পেয়ে সদস্য নির্বাচিত হতে পেরেছেন।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার মাহবুব সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতির দায়িত্বে আছেন। আর বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকন আছেন সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে।
কাউন্সিলের ১৪টি সদস্য পদের মধ্যে বাকি সাতটি পদে প্রতিনিধি নির্বাচিত হন অঞ্চলভিত্তিক আইনজীবী সমিতির সদস্যদের মধ্য থেকে। এর মধ্যে ছয়টিই জিতে নিয়েছে আওয়ামী লীগ সমর্থকরা।
সাদা প্যানেলের বিজয়ী এই ছয়জন হলেন- কাজী মো. নজীবুল্লাহ হিরু (গ্রুপ-এ: বৃহত্তর ঢাকা জেলা), এইচ আর জাহিদ আনোয়ার (গ্রুপ-বি: বৃহত্তর ময়মনসিংহ ও ফরিদপুর অঞ্চল ), মো. ইব্রাহীম হোসেন চৌধুরী (গ্রুপ-সি: বৃহত্তর চট্টগ্রাম ও নোয়াখালী অঞ্চল), পারভেজ আলম খান (গ্রুপ-ই: খুলনা, বরিশাল ও পটুয়াখালী অঞ্চল), মো. ইয়াহিয়া (গ্রপ-এফ: বৃহত্তর রাজশাহী, যশোর ও কুষ্টিয়া অঞ্চল) ও মো. রেজাউল করিম (গ্রুপ-জি: দিনাজপুর, রংপুর, বগুড়া ও পাবনা অঞ্চল)।
আর নীল প্যানেলের প্রার্থীদের মধ্যে ডি-গ্রুপ (বৃহত্তর সিলেট ও কুমিল্লা অঞ্চল) থেকে কেবল কাইমুল হক কাউন্সিলের সদস্য হতে পেরেছেন।
সরাসরি ভোটে নির্বাচিত এই ১৪ জন পরে নিজেদের মধ্যে ভোটাভুটি করে বার কাউন্সিলের নতুন ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচন করবেন। নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের একজনকেই এবার এ পদে দেখা যাবে।
গত ২৬ অগাস্ট সারা দেশের ৭৭টি কেন্দ্রে একযোগে বার কাউন্সিল নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হয়, যাতে ভোটার ছিলেন ৪৩ হাজার ৩০২ জন। এবার মোট ৬১ জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
এর আগে ২০১২ সালে অনুষ্ঠিত বার কাউন্সিল নির্বাচনে এই ১৪ সদস্য পদের মধ্যে নয়টিতে বিএনপি সমর্থকরা এবং পাঁচটিতে আওয়ামী লীগ সমর্থকরা জয় পেয়েছিল। আর তাদের মধ্যে ভোটাভুটিতে ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার মাহবুব হোসেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম পদাধিকার বলে বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন।