আনুষ্ঠানিকভাবে ফল ঘোষণা করা না হলেও বিএনপিসমর্থক জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি বলে জানিয়েছে।
বুধবার দেশের ৭৭টি কেন্দ্রে একযোগে বার কাউন্সিলে ভোট হয়। সব কেন্দ্রের ফলাফল আসা শেষ হলে গণনার পর আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণার কথা রয়েছে।
আর দুপক্ষের দাবি ঠিক থাকলে তিন বছর পর আবারও বার কাউন্সিলের নিয়ন্ত্রণ পেতে যাচ্ছে সরকারসমর্থক আইনজীবীরা।
কাউন্সিলের চেয়ারম্যান অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বৃহস্পতিবার বিকেলে সাংবাদিকদের বলেন, “ঢাকা, সুপ্রিম কোর্ট বার ও আশেপাশের কয়েকটি বারের ফলাফল আমরা পেয়ে গেছি। সেগুলো সিলগালা অবস্থায় আছে। অন্যান্য ফল সোমবারের মধ্যে পেয়ে গেলে সবার সামনে অফিসিয়ালি ফলাফল ঘোষণা করা হবে।”
বার কাউন্সিলের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) নাজমুল আহসান জানান, সব ফল হাতে আসার পর তা একত্র করে কেন্দ্রীয়ভাবে আবার গণনা হবে। এরপর আনুষ্ঠানিকভাবে ফল ঘোষণা করবেন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান।”
এবারের বার কাউন্সিলের নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৪৩ হাজার ৩০২ জন। কাউন্সিলের ১৪টি সদস্য পদের জন্য মোট ৬১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
এর আগে ২০১২ সালে অনুষ্ঠিত বার কাউন্সিল নির্বাচনে এই ১৪ সদস্য পদের মধ্যে নয়টিতে বিএনপি সমর্থকরা এবং পাঁচটিতে আওয়ামী লীগ সমর্থকরা বিজয়ী হয়। আর তাদের মধ্যে ভোটাভুটিতে ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার মাহবুব হোসেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম পদাধিকার বলে বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন।
আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণার অপেক্ষার মধ্যে বৃহস্পতিবার দুপুরে সাদা প্যানেল হিসেবে পরিচিত সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের নেতা আবদুল বাসেত মজুমদার সাংবাদিকদের বলেন, “বার কাউন্সিল আইনজীবীদের কল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, বার কাউন্সিল আইনজীবীদের কল্যাণ না করে একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের এজেন্ডা এখানে পালন করছে। আইনজীবীরা এর পরিবর্তন চেয়েছে।
“সেই পরিবর্তনের স্রোতে সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের প্যানেল সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করেছে। ১৪টি পদের মধ্যে সাধারণ চারটি এবং গ্রুপের ছয়টি পেয়েছি।”
এই বিএনপি নেতা বলেন, “সরকার বলেছে, যদি তারা নির্বাচিত হয়, সরকার বার কাউন্সিলের জন্য অনেক কল্যাণমূলক কাজ করবেন।… তার ফলে আইনজীবীরা আশান্বিত হয়েছেন। এইভাবে একটা রঙিন স্বপ্ন তাদের দেখানো হয়েছে। আমি আশাবাদী; তারা সেই রঙিন স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারলে আমি খুশি হব।”
বার কাউন্সিলের নির্বাচন হয় তিন বছর পরপর। সারাদেশের আইনজীবীরা মোট ১৪ জনকে ভোটের মাধ্যমে এর সদস্য নির্বাচিত করেন। এর মধ্যে সাধারণ পদে সাতজন এবং সাতটি অঞ্চলভিত্তিক আইনজীবী সমিতির সদস্যদের মধ্য থেকে একজন করে আরও সাতজন সদস্য নির্বাচিত হন।
সরাসরি ভোটে নির্বাচিত ১৪ জন পরে নিজেদের মধ্যে ভোটাভুটি করে বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচন করেন।
জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেলে সাধারণ পদে এবার প্রার্থী ছিলেন বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেন, বর্তমান নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান এ জে মোহাম্মদ আলী, এনরোলমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, ফাইন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান সানাউল্লাহ মিয়া, বদরুদ্দোজা বাদল, মো. বোরহান উদ্দিন ও মহসিন মিয়া।
এই প্যানেলে স্থানীয় বার ক্যাটাগরিতে এ-গ্রুপ থেকে গোলাম মোস্তফা খান, বি-গ্রুপ থেকে মোহাম্মদ আবদুল বাকি মিয়া, সি-গ্রুপ থেকে কবির চৌধুরী, ডি-গ্রুপ থেকে কাইমুল হক, ই-গ্রুপ থেকে আবদুল মালেক, এফ-গ্রুপ থেকে মো. ইসহাক ও জি-গ্রুপ থেকে এ কে এম হাফিজুর রহমান প্রার্থী হন।
আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীদের মোর্চা সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ থেকে সাধারণ পদের প্রার্থীরা ছিলেন এম আমীর-উল ইসলাম, আবদুল বাসেত মজুমদার, রোকন উদ্দিন মাহমুদ, আবদুল মতিন খসরু, পরিমল চন্দ্র গুহ, জেড আই খান পান্না ও শ ম রেজাউল করিম।
এই প্যানেলে স্থানীয় বার ক্যাটাগরিতে এ-গ্রুপ থেকে কাজী নজিবুল্লাহ হিরু, বি-গ্রুপ থেকে এইচ আর জাহিদ আনোয়ার, সি-গ্রুপ থেকে ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী, ডি-গ্রুপ থেকে সরোয়ার আহম্মেদ চৌধুরী আবদাল, ই-গ্রুপ থেকে পারভেজ আলম খান, এফ-গ্রুপ থেকে মো. ইয়াহিয়া ও জি-গ্রুপ থেকে মো. রেজাউল করিম নির্বাচনে অংশ নেন।
এর বাইরে আইনজীবী ঐক্য ফ্রন্ট ও আইনজীবী ঐক্য পরিষদ নামে আরও দুটি প্যানেল এবার নির্বাচনে অংশ নেয়।
ঐক্য ফ্রন্টের প্যানেলে সাধারণ আসনে প্রার্থী হন সুব্রত চৌধুরী, শাহ মো. খসরুজ্জামান, এ কে এম জগলুল হায়দার আফ্রিক, সরওয়ার-ই-দীন, মো. হেলাল উদ্দিন, আবদুল মোমেন চৌধুরী ও মো. শামছুল হক।
ঐক্য পরিষদ মনোনীত প্যানেলে সাধারণ পদে প্রার্থী হন মো. মাহবুব আলী ভূইয়া, মো. ইউনুস আলী আকন্দ, মো. আবুল কালাম আজাদ, মো. আবুল হোসেন, মো. দেলোয়ার হোসেন মল্লিক, মো. শওকত হায়াত ও সুলতান এ সবুর চৌধুরী।