দুই দিনের বর্ষণে জল আর জটে রাজধানীর দুর্ভোগের চিত্র নিয়ে ‘উপহাসে’ ছেয়ে গেছে ফেইসবুক। ব্যঙ্গচিত্রে কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন ‘নগরপিতাদের’ আশ্বাস, প্রতিশ্রুতি নিয়েও।
Published : 02 Sep 2015, 10:40 PM
পানিতে ডুবে যাওয়া একটি রিকশার ছবি নিয়ে তৈরি ব্যঙ্গচিত্র ফেইসবুকে শেয়ার করেন শিহাব মাহমুদ নামে একজন। ওই ছবিতে লেখা ছিল, “সামনে গুলিস্তান না কবরস্থান কিছু বুঝতাছি না।”
মঙ্গলবার কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে রাজধানীর অধিকাংশ এলাকা হাঁটুপানিতে তলিয়ে যায়। কোথাও কোথাও কোমরপানি দেখা গেছে।
তেল গ্যাস আন্দোলনের নেতা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ তার ফেইসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, “বৃষ্টির উপর দোষ চাপাইলে চলবে? বৃষ্টির দিনে তো বৃষ্টি পড়বেই। শহর অচল হবে কেন?”
এরপরের লাইনে তিনি লিখেছেন, “জলস্থল দখল করবে ভিআইপিরা, উল্টোপথে গাড়ি চালাবে ভিআইপিরা; গাড়ি রাখতে, বাড়ি বানাতে, রাস্তা দখল করবে ভিআইপিরা; বাসের জায়গা দখল করবে ভিআইপিদের বিটকেল সাইজের গাড়ি, শহর অচল হবে না? কতোবার শুনলাম: ‘সমস্যা চিহ্নিত’, ‘এবার সমাধানযাত্রা’; সেই আনিসুল হক কোথায়?”
স্ট্যাটাসের নিচে মোহাম্মদ ইলিয়াস চৌধুরী নামে একজন মন্তব্যে লিখেছেন, “সেই আনিসুল হক আছেন বনানীতেই, তবে তিনি এখন আর সমাধান যাত্রার চাবিটা খুঁজে পাচ্ছেন না।”
‘সমস্যা চিহ্নিত, এবার সমাধান যাত্রা’ এ স্লোগানে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন এফবিসিসিআই এর সাবেক সভাপতি আনিসুল হক। নির্বাচনে আওয়ামীলীগের সমর্থন নিয়ে জয়ীও হন তিনি।
তার দেওয়া নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির মধ্যে অন্যতম ছিল ঢাকার জলাবদ্ধতা নিরসন।
মোহাইমেন লায়েস নামে একজন জলাবদ্ধ শহরের একটি ভিডিও আপলোড করে লিখেছেন, “রোজকার মতো সিবিএস যাইতেছি। কিন্তু এই অবস্থায় পইড়া আমি বেগতিক। রিকশাওয়ালার লগে এই 'বন্যার' ভিতর দিয়া যাইতেছি আর কথা কইতেছি ঢাকার বেগতিক অবস্থা নিয়া।”
“তখন চরের মতো উপ্রে আধা আধা ভাইসা থাকা আইল্যান্ডে খাড়ানো এক ভাই কইলো- ‘ভোট দিছেন না দুই মেয়ররে, এখন মজা বুঝেন’।"
ট্রলটিতে অস্কার জয়ী চলচ্চিত্র টাইটানিক এর একটি জনপ্রিয় দৃশ্য নৌকায় সংযোজন করে লেখা রয়েছে- “আমায় ভাসাইলিরে, আমায় ডুবাইলি রে।”
এদিকে জলাবদ্ধতার জন্য জনগণের অসচেতনতাকে দায়ী করে স্ট্যাটাস দিয়ে ফেইসবুকে সমালোচনায় পড়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।
মঙ্গলবার দেওয়া ওই স্ট্যাটাসে শাহরিয়ার লিখেছেন, “পৃথিবীর প্রায় সব শহরেই অল্পসময়ে হঠাৎ বেশি বৃষ্টি হলে রাস্তা ডুবে যায়। নিউইয়র্ক, ব্যাংকক, মুম্বাই, হ্যানয় নিজের চোখে দেখা। কিন্তু এটা মানি ঢাকার এ অবস্থার উন্নয়ন দরকার।”
“যতটুকুই ড্রেন আছে তা আমরা মনের আনন্দে বাদামের খোসা থেকে শুরু করে, চিপসের প্যাকেট, বাসাবাড়ির বর্জ্য দিয়ে ভরে রেখেছি। আমরা আমাদের যে যার মতো পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করবো, আবার মুষলধারে বৃষ্টি হলেও রাস্তা পানিবিহীন চাইবো, আছেন নাকি পৃথিবীতে এরকম কোন যাদুকর যিনি আমরা নাগরিকরা যা চাই তা করে দিতে পারেন?”
শাহরিয়ারের স্ট্যটাসের বিরোধিতা করে পাল্টা স্ট্যাটাস দিয়েছেন কলাম লেখক ও তেল গ্যাস আন্দোলনের কর্মী কল্লোল মোস্তফা।
অবশ্য ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হকের পেইজ ‘আমরা ঢাকায়’ জলাবদ্ধতার জন্য রাজধানীর অপ্রতুল ড্রেনেজ ব্যবস্থাকে দায়ী করা হয়েছে।
এক স্ট্যাটাসে পেইজটিতে লেখা হয়, “মাস্টার প্লান অনুযায়ী যেখানে ঢাকার আয়তন ১ হাজার ৫২৮ বর্গকিলোমিটার, সেখানে মাত্র এক-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ ৩৬০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় ওয়াসার ড্রেনেজ ব্যবস্থা আছে। রাজধানীর জন্য ওয়াসার একটি ড্রেনেজ মাস্টার প্ল্যান আছে। কিন্তু এর বাস্তবায়ন নির্ভর করছে তহবিলের ওপর। মূলত তহবিল সংকটের কারণে ড্রেনেজ মাস্টার প্ল্যানের বাস্তবায়ন থমকে আছে বলে দাবি করেন ওয়াসার কর্মকর্তারা।”
“আইন অনুযায়ী মে মাসের পর এবং অক্টোবরের আগে কোনো উন্নয়নমূলক কাজ করা যাবে না। কিন্তু ঢাকা ওয়াসা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় এখনও উন্নয়নমূলক কাজ করছে। এর ফলে জল-কাদার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে যানজটের ভোগান্তি।”