আরও একটি ভোগান্তির দিন

সকাল থেকে বৃষ্টি আর সড়কে জমে থাকা পানির মধ্যে আরও একটি ভোগান্তির দিন পার করছে ঢাকাবাসী।   

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Sept 2015, 04:34 AM
Updated : 2 Sept 2015, 01:09 PM

আগের দিনের কয়েক ঘণ্টার ভারি বর্ষণের পর বুধবার ভোর থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি চলছে। আগামী কয়েক দিন এই ধারা চলতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

সকাল ১০টা পর্যন্ত ঢাকার রাজপথে মঙ্গলবারের মতো অচলাবস্থা তৈরি না হলেও পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোড, হাজারীবাগের কিছু অংশ, শুক্রাবাদ, ধানমন্ডি ২৭ নম্বর, মিরপুর রোড, মগবাজার, মৌচাক, মালিবাগ, রামপুরা, গ্রিন রোড, ফার্মগেইট, বিজয় সরণী, খিলক্ষেত ও উত্তরার কিছু অংশে বিভিন্ন সড়কে পানি জমে উঠতে দেখা গেছে।

ট্রাফিক পুলিশের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কনস্টেবল কামরুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন,

“গতকালের মত ভয়াবহ জট এখনো কোথাও দেখা যায়নি। তবে বৃষ্টিতে পানি জমে থাকায় যানবাহনের গতি ধীর।”

বাংলামোটরে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক বজলুর রহমান বলেন, “বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাস্তায় তো গাড়ি বাড়ছে। বৃষ্টি চলতে থাকলে পানি নামবে না। তখন পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হবে।”

মিরপুরের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকুরে মাহমুদুর রহমান জানান, তিনি সকালে ধানমন্ডি ৫ নম্বর সড়ক থেকে মিরপুরে যাওয়ার পথে বিভিন্ন স্থানে পানি জমে থাকতে দেখেছেন। বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন স্থানে যানজটেও পড়তে হয়েছে।

“গতকাল দুপুরে এই পথে ফিরতে আমার তিন ঘণ্টা লেগেছিল। এভাবে বৃষ্টি চললে আজকেও গতকালের মত নাকাল হতে হবে।”

মঙ্গলবার দুপুরের আগে আগে ঘণ্টা দেড়েকের ভারি বর্ষণে ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সড়ক ও নিচু এলাকা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় দিনভর তীব্র যানজটে নাকাল হতে হয় নগরবাসীকে।

ওয়াসার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, বৃষ্টির কারণে ঢাকার আশেপাশের নদীর পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় শহরের পানি বের হতে পারছে না।

এদিকে হাতিরঝিল হয়ে নদীতে নিষ্কাশনের পথেও পানির উচ্চতা বেড়ে গেছে। এর মধ্যে অল্প সময়ে ভারি বৃষ্টির ফলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে।

মঙ্গলবার দিনভর ভোগান্তির পর জাতীয় সংসদেও এ নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে।

সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য বেগম রওশন আরা মান্নান বলেন, ঢাকা শহরে বৃষ্টির কারণে যে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়, তাতে কোনো কোনো এলাকায় পানি জমে ‘সাঁতার পানি’ হয়ে যায়। এতে মানুষের জীবনে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়।

“মন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন, সিটি করপোরেশনের মাধ্যমে ঢাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে কোনো প্রকল্প গ্রহণ করেছেন কি-না। ঢাকা শহরের মেয়রগণ প্রায়ই মিটিং-সিটিং করেন। কিন্তু আমরা কোন ফলপ্রসূ কাজ দেখছি না।”

জবাবে খন্দকার মোশাররফ বলেন, “এবার বৃষ্টির ইনটেনসিটি অনেক বেশি। গত ৩০ বছরেও এত ইনটেনসিটির বৃষ্টি হয় নাই।... কোন ড্রেনেজ ব্যবস্থা এত অতিরিক্ত অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের জন্য ডিজাইন করা হয় না।”

ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি এসেও মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকায় দেশের সর্বত্র মাঝারি থেকে ভারি বর্ষণ হচ্ছে বলে আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন।

আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, বুধবারও দিনভর চলতে পারে বৃষ্টি। রাজশাহী, রংপুর, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ স্থানে বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে বরিশাল, চট্টগ্রাম, ঢাকা ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও হতে পারে ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ।

সমুদ্রবন্দরে তিন নম্বর সতর্কতা

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, মৌসুমি বায়ু সক্রিয় হওয়ার কারণে উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় গভীর সঞ্চরণশীল মেঘমালা তৈরি হচ্ছে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্র বন্দরসমূহের উপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।

ঝড়ো হাওয়ার শঙ্কায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে অধিদপ্তর।

এছাড়া উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে ।