জল আর জটে ঢাকা অচল

ভারি বর্ষণে রাজধানী ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সড়ক ও নিচু এলাকা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় তীব্র যানজটে নাকাল হতে হয় নগরবাসীকে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Sept 2015, 09:59 AM
Updated : 1 Sept 2015, 09:59 AM

মঙ্গলবার সকাল থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির পর বেলা সোয়া ১১টার দিকে শুরু হয় মুষলধারে বর্ষণ। এরপর প্রধান সড়ক থেকে অলিগলিতে যানজট ছড়িয়ে পড়লে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় বলে ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা জানান।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রতিবেদকরা জানান, পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন সড়ক, কাকরাইল, মৎস্য ভবন মোড়, শান্তিনগর, মিন্টো রোড, মগবাজার, রামপুরা শাহবাগ চত্বর, সায়েন্সল্যাব, বাংলা মোটর, ফার্মগেইট, মহাখালী, মিরপুরের বিভিন্ন এলাকা ও উত্তরার পথে যানবাহন প্রায় থমকে আছে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনের সড়ক, সংসদ ভবনের দক্ষিণের প্রবেশ মুখ, মানিক মিয়া এভিনিউসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সড়কে পানি জমে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করেছে বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক সুমন মাহবুব জানান।

মহানগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম ফটো সাংবাদিক আসিফ মাহমুদ অভি জানান, ধানমণ্ডি ২৭ নম্বর, মিরপুরের কালশি, ১০ নম্বর থেকে শেওড়াপাড়া, নয়াপল্টন, শান্তিনগর, মালিবাগ, মৌচাক, রাজারবাগ এলাকায় জলাবদ্ধতা তিনি দেখেছেন।

বিকেল ৫টার দিকে তার সঙ্গে কথা হলে জানান, এই জলাবদ্ধতায় পথে পথে সিএনজি চালিত অনেক যানবাহনই আটকে পড়ে থাকতে দেখা যায়। সেই সঙ্গে গাড়ির গতি কম থাকায় দীর্ঘ যানজটে নাকাল হতে হয় অফিস ফেরত চাকরিজীবীদের।

মিরপুরে যানজটে আটকে পড়া অবস্থায় কথা হয় গার্মেন্ট কর্মকর্তা সাইদুজ্জামান পলাশের সঙ্গে।

বৃষ্টিতে রাজধানীর এই চিত্রে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা হলো আটকে আছি। দেখেন, চারদিকে পানি আর পানি। এই পানি নামার পথ তো থাকতে হবে। সিটি করপোরেশনের উন্নয়নের দৃশ্য দেখে নয়ন জুড়িয়ে যাচ্ছে।”

আর আসাদগেটে দাঁড়িয়ে একজন অভিভাবক জানান, মিরপুর থেকে আসাদগেট সংলগ্ন একটি স্কুলে আসতে তার প্রায় চার ঘণ্টা সময় লেগেছে।

তিনি বলেন, “ছেলে আরানের স্কুল ছুটি হয়েছে বেলা দেড়টায়। আর এখন দেখেন কয়টা বাজে, বিকাল সাড়ে ৫টা। ছেলেটা এই দীর্ঘ সময় এখানে দাঁড়িয়ে ছিল। একবার ভাবেন, তার মনের মধ্যে কী ঘটে গেছে।”

এর আগে বেলা সাড়ে ৩টায় মহাখালী ফ্লাইওভারের ওপর যানবাহনের দীর্ঘ জট দেখা যায়। সড়কের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টির পানির সঙ্গে নর্দমার কাদা একাকার হয়ে পায়ে হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছানোর পথও কঠিন করে তোলে।

পুলিশের ট্রাফিক কন্ট্রোল রুম থেকে দুপুরে জানানো হয়, বৃষ্টির কারণে রাজধানী জুড়ে ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে মহাখালী, বিজয় সরণি, বাংলামোটর, ফার্মগেইট, শাহবাগ, মগবাজার এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সমস্যা হচ্ছে।

রাস্তায় পানি জমে যাওয়ায় ভিআইপি সড়কগুলোতে সিএনজিচালিত বহু অটোরিকশার ইঞ্জিন বিকল হয়ে আটকে থাকতে দেখা গেছে। এসব বিকল বাহন যানজট আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে বলে ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা জানান।

প্রতিবেদক হাসিবা আলী বর্ণা জানান, প্রেসক্লাব থেকে সিএনজি অটোরিকশায় করে মহাখালী আসার পথে হাই কোর্টের সামনে তিনি যানজটে পড়েন। পরে টিএসসি হয়ে এগোনোর চেষ্টা করলেও ফের আটকে যান।

নাজিম উদ্দিন রোডে বেশ কিছু অটো রিকশা ও প্রাইভেট কার বিকল হয়ে আটকে থাকতে দেখেছেন বলে জানিয়েছেন প্রতিবেদক কামাল তালুকদার।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মর্তুজা হায়দার জানান, মোহাম্মদুপুরের নুরজাহান রোড ও আশেপাশের প্রতিটি সড়কে যানজট দেখেছেন তিনি। অনেকে বিকল্প পথে গন্তব্যে যাওয়ার চেষ্টা করায় গলিপথেও যানজটের সৃষ্টি হয়।

তিনি বলেন, “টানা বর্ষণ রাস্তায় আটকে পড়া মানুষের ভোগান্তি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। স্কুল-কলেজ ছুটির পর শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন।”

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক নুরুল ইসলাম হাসিব জানান, মিন্টো রোডে গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে কয়েক ঘণ্টা ধরে। অনেক উল্টোপথে যাওয়ার চেষ্টা করায় ঝামেলা আরও বেড়েছে।

বাংলা মোটরে কর্মরত ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক বজলুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বৃষ্টির কারণেই এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ফার্মগেইট বিজয় সরণি, সোনারগাঁ লিংক রোড, মানিক মিয়া এভিনিউর পশ্চিম পাশে পানি জমে রয়েছে। পানির কারণেই যানজট ছাড়ানো যাচ্ছে না।”

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম কর্মী সোহাগ জানান, তিনি রায়ের বাজার থেকে মহাখালী আসার পথে ধানমণ্ডি ২৭ নম্বর সড়কের মাঝামাঝি থেকে মিরপুর রোডের সংযোগস্থল পর্যন্ত রাস্তায় (রাপা প্লাজার সামনে) কোমর পানি দেখেছেন।

এছাড়া মানিক মিয়া এভিনিউয়ের মোড়ে চলাচল করতে হচ্ছে হাঁটু পানি ভেঙে।

প্রবল বৃষ্টির মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনের সড়কেও পানি জমে যায়। কিছুক্ষণ পর ওই সড়কের পানি নেমে গেলেও যানজট থেকে যায় বলে জানান জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক সুমন মাহবুব।

ফার্মগেইট থেকে সার্ক ফোয়ারা পর্যন্ত সড়কটির দুই পাশে হাঁটুপানি দেখা গেছে। উত্তরা থেকে মহাখালী আসার পথে কাকলিতে এক ঘণ্টার বেশি সময় যানজটে আটকে থাকতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের বার্তা সম্পাদক গাজী নাসির উদ্দিন আহমেদ খোকন।

নেছার উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি ক্যান্টনমেন্ট থেকে গুলিস্তান আসতে গিয়ে ফার্মগেইটে দীর্ঘ সময় ধরে আটকা থাকার কথা জানান।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, বেলা ১২ টা থেকে বিকাল ৩ টা পর্যন্ত রাজধানীতে ৪২ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে।

ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি এসেও মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকায় দেশের সর্বত্র মাঝারি থেকে ভারি বর্ষণ হচ্ছে বলে জানান আবহাওয়াবিদরা।

বুধবারও বৃষ্টি হওয়া সম্ভাবনা রয়েছে বলে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে। এদিন রাজশাহী, রংপুর, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।

সেই সঙ্গে বরিশাল, চট্টগ্রাম, ঢাকা ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে।

সমুদ্রবন্দরে তিন নম্বর সতর্কতা

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, মৌসুমি বায়ু সক্রিয় হওয়ার কারণে উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা তৈরি হচ্ছে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্র বন্দরসমূহের উপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।

ঝড়ো হাওয়ার শঙ্কায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে অধিদপ্তর।

এছাড়া উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে ।