তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের বিতর্কিত ৫৭ ধারা বাতিলের জন্য সরকারকে উকিল নোটিস পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী।
Published : 26 Aug 2015, 03:05 PM
বুধবার এই উকিল নোটিসের পাশাপাশি একই ধারার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে একটি রিট আবেদন করেছেন রাজধানীর পল্লবীর এক ব্যক্তি।
অ্যাডভোকেট ইউনুছ আলী আকন্দ ৫৭ এর পাশাপাশি ৮৬ ধারা বাতিলের জন্য রেজিস্ট্রি ডাকে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, আইন সচিব, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সচিব এবং তথ্য সচিবকে উকিল নোটিস পাঠান।
এতে বলা হয়, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ওই দুটি ধারা বাতিলের ব্যবস্থা নেওয়া না হলে নোটিসদাতা রিট আবেদন নিয়ে হাই কোর্টে যাবেন।
২০০৬ সালে পাস হওয়া তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন ২০০৯ ও ২০১৩ সালে দুই দফা সংশোধন করা হয়। সর্বশেষ সংশোধনে সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর থেকে ১৪ বছর কারাদণ্ড করা হয়। আর ৫৭ ধারার অপরাধকে করা হয় অজামিনযাগ্য।
৫৭ ধারায় বলা হয়েছে- ওয়েবসাইটে প্রকাশিত কোনো ব্যক্তির তথ্য যদি নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ হতে উদ্বুদ্ধ করে, এতে যদি কারও মানহানি ঘটে, রাষ্ট্র বা ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়, তা হবে অপরাধ। এর শাস্তি অনধিক ১৪ বছর কারাদণ্ড এবং অনধিক ১ কোটি টাকা জরিমানা।
আর ৮৬ ধারায় বলা হয়েছে, এ আইনের অধীনে ‘সরল বিশ্বাসে করা’ কোনো কাজের কারণে কোনো ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হলে বা হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিলে সে জন্য সরকারি কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারীর বিরুদ্ধে মামলা বা কোনো আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না।
ওই আইন হওয়ার পর থেকেই বিষয়টিকে ‘বাক স্বাধীনতা পরিপন্থি’ হিসেবে চিহ্নিত করে তা বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছেন অধিকার আন্দোলনের কর্মীরা।
সম্প্রতি ফেইসবুকে একজন প্রভাবশালী মন্ত্রীকে নিয়ে মন্তব্যের কারণে এক সাংবাদিককে এ আইনের মামলায় গ্রেপ্তার করার পর বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় আসে।
অধিকার আন্দোলনের কর্মীরা গ্রেপ্তারের ওই ঘটনাকে তথ্য-প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারার ‘অপব্যবহার’ হিসেবে চিহ্নিত করেন। সম্পাদক পরিষদের পক্ষ থেকেও ৫৭ ধারা বাতিলের দাবি জানানো হয়।
ইউনুছ আলী আকন্দ বলছেন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ও ৮৬ ধারা সংবিধানের ৭, ২৭, ৩৯ ও ৪০ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদে প্রজাতন্ত্রের সকল নাগরিককে ‘সমান অধিকার’ দেওয়া হয়েছে। ৩৯ অনুচ্ছেদে দেওয়া হয়েছে ‘চিন্তা ও বিবেকের’ এবং বাক, ভাব প্রকাশ ও সংবাদপত্রের ‘স্বাধীনতার নিশ্চয়তা’।
৪০ অনুচ্ছেদে নাগরিকদের আইনসঙ্গত পেশা বা বৃত্তি গ্রহণের অধিকারের কথা বলা হয়েছে। আর ৭ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ।
ইউনুছ আলীর নোটিসে বলা হয়, তথ্য-প্রযুক্তি আইনের ৮৬ ধারা বৈষম্যমূলক এবং মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতার পরিপন্থি। এই ধারায় সরকারি কর্মচারীদের ক্ষেত্রে যে ছাড় দেওয়া হয়েছে তা সংবিধানের ২৭ ও ২৮ ধারারও লঙ্ঘন।
সংবিধানের ২৮ ধারায় বলা হয়েছে, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ বা অন্য কোনোভাবে রাষ্ট্র নাগরিকের প্রতি বৈষম্য করতে পারবে না।
৫৭ ধারার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে পল্লবীর বাসিন্দা জাকির হোসেনের পক্ষে আইনজীবী শিশির মনির সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিট আবেদনটি দায়ের করেন।
এই ধারা সংবিধানের ২৭, ৩১, ৩২ এবং ৩৯ ধারার সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ায় কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না, এই রুল চাওয়া হয়েছে আবেদনে।
আইনজীবী শিশির মনির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “৫৭ ধারা আইনের চোখে সবাই সমান এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা সংক্রান্ত সংবিধানের মৌলিক অধিকার খর্ব করে।”
রিট আবেদনে আইন সচিব এবং যোগাযোগ ও প্রযুক্তি সচিবকে বিবাদী করা হয়েছে।
আবেদনে একই সঙ্গে রিট আবেদনকারী জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় করা মামলার কার্যকম স্থগিতের আর্জি জানানো হয়েছে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে চলতি বছরের ২৪ জুলাই জাকিরের বিরুদ্ধে পল্লবী থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন তার সাবেক স্ত্রী।
জাকিরের বিরুদ্ধে তার ফেইসবুকে ছবি এবং বিভিন্ন পোস্ট দিয়ে লেখালেখি করে হয়রানি ও হেয় করার অভিযোগ এনেছেন এই নারী।
এই মামলায় গত ১০ অগাস্ট নিম্ন আদালত থেকে জামিন পান জাকির। এরপর বুধবার রিট আবেদনটি করেন তিনি।