৭ খুন: ন্যায় বিচার চান রানার স্ত্রী

নারায়ণগঞ্জের বহুল আলোচিত সাত খুনের ঘটনায় নৌবাহিনীর কর্মকর্তা এম এম  রানা জড়িত নন বলে দাবি করে ন্যায়বিচার চেয়েছেন তার স্ত্রী।

খুলনা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 August 2015, 01:20 PM
Updated : 1 August 2015, 04:03 PM

শনিবার দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে রানার স্ত্রী নুর-এ-হাফজা বলেন, রানা র‌্যাবের একটি গ্রেপ্তার অভিযানে সহায়তা করেন মাত্র।

তিনি বলেন, এক বছর তদন্তের পর কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণ ছাড়াই রানার বিরুদ্ধে কথিত অপহরণে সহযোগিতার অভিযোগে আসামি করা হয়েছে।

“ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতেও রানা অপহরণ ও হত্যার সহায়তার দোষ স্বীকার করেননি।”

এমনকি কমান্ডিং অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ ও অপারেশন অফিসার মেজর আরিফ ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতেও রানাকে জড়িয়ে কোনো বক্তব্য দেননি বলে দাবি করেন হাফজা।

২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড থেকে দুটি গাড়িতে থাকা নজরুল ও চন্দনসহ সাতজনকে তুলে নেওয়া হয়। তিন দিন পর তাদের হাত-পা বাঁধা লাশ ভেসে ওঠে শীতলক্ষ্যা নদীতে।

সাত খুনের সেই অভিযান সম্পর্কে রানার স্ত্রী বলেন, র‌্যাবের মতো একটি সুশৃঙ্খল বাহিনীকে চেইন অব কমান্ড মেনে কাজ করতে হয়। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আদেশ অধঃস্তন কর্তৃপক্ষের অমান্য করার কোনো সুযোগ নেই। নারায়ণগঞ্জের ওই গ্রেপ্তারের দায়িত্বটি কোম্পানি কমান্ডারদের সম্মেলনে মেজর আরিফকে দেন অধিনায়ক তারেক সাঈদ।

“কারণ কাউন্সিলর নজরুল সিদ্ধিরগঞ্জ থানার অধিবাসী, যা মেজর আরিফের টেরিটোরিয়াল জুরিসডিকশনের অন্তর্ভুক্ত।”

রানা নিজের অপারেশন শেষে অধিনায়কের নির্দেশে মেজর আরিফের অভিযানে সহায়তা করেন বলে দাবি করে হাফজা আরও বলেন, কাউন্সিলর নজরুলকে গ্রেপ্তারে সহায়তা না করলে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আদেশ অমান্য করার অপরাধে রানার কোর্ট মার্শাল অথবা বড় ধরনের শাস্তি হত।

এছাড়া প্রকাশ্য দিনের আলোতে চেকপোস্ট বসিয়ে আসামি গ্রেপ্তারের পর তাকে নিয়ে এমন ‘অপহরণ’ গল্প তৈরি হবে এমন ধারণাও রানার থাকার কথা নয় বলে দাবি তার।

রানার স্ত্রী বলেন, “যেহেতু ওই ৭ জনের কেউ রানার আসামি নয় তাই গ্রেপ্তারের পর তাদের মেজর আরিফ কোথায় নিয়ে যাবেন তাও রানার জানার কথা নয়।”

ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে গ্রেপ্তার অভিযানে শুধু ‘লজিস্টিক সাপোর্ট’ দিয়ে প্রায় দেড় বছর ধরে রানাকে কারাবন্দি থাকতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

তিনি বলেন, “নজরুলকে গ্রেপ্তার করা হয় তারেক সাঈদের নির্দেশে এবং মেজর আরিফের নেতৃত্বে। গ্রেপ্তারের পর তাদের রানার কাছে রাখাও হয়নি। ওই অভিযানের পূর্ব ও পরবর্তী মোবাইল রেকর্ডিং তার সাক্ষী।”

রানাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে বলে অভিযোগ করে হাফজা বলেন, যা বাংলাদেশের সংবিধান ও নৌবাহিনী আইনের পরিপন্থী।।

“সামরিক বাহিনীর সদস্য হিসেবে রানাকে সর্বপ্রথম বোর্ড অব ইনকোয়্যারি এবং সর্বশেষ কোর্ট মার্শাল করার বিধান থাকলেও তা করা হয়নি।”

রানাকে ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, উচ্চ আদালতেও তার জামিনের শুনানিতে অপারগতা প্রকাশ করা হয়, যা ফৌজদারী কার্যবিধি ও সংবিধান পরিপন্থী।

ন্যায় বিচারের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সহায়তা কামনা করেন রানার স্ত্রী।

এসময় রানার মা কোহিনুর বেগম, সাড়ে তিন বছর বয়সী মেয়ে মারিহা আলভিনা, শ্বশুর এসএম জামাল উদ্দিন এবং সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী ফরহাদ আব্বাস উপস্থিত ছিলেন।