উত্তর কোরিয়ায় জাতিসংঘ নিষেধাজ্ঞা নজরদারি বন্ধ করল রাশিয়া

উত্তর কোরিয়ায় আরোপিত নিষেধাজ্ঞা বছরের পর বছর ধরে পর্যবেক্ষণ করে আসা বহুজাতিক একটি বিশেষজ্ঞ প্যানেলের বার্ষিক নবায়ন প্রস্তাবে ভিটো দিয়েছে রাশিয়া।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 March 2024, 12:41 PM
Updated : 29 March 2024, 12:41 PM

জাতিসংঘে উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে আনা একটি প্রস্তাবে ভিটো দিয়েছে রাশিয়া। এতে উত্তর কোরিয়ায় বছরের পর বছর ধরে জাতিসংঘ নিষেধাজ্ঞা পর্যবেক্ষণ করে আসা একটি প্যানেলের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে।

উত্তর কোরিয়ায় আরোপিত নিষেধাজ্ঞার ওপর নজর রেখে আসা বহুজাতিক ওই বিশেষজ্ঞ প্যানেলের বার্ষিক নবায়ন প্রস্তাব নিয়ে বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ভোটাভুটি হয়।

জাতিসংঘের স্থায়ী সদস্যদেশ হিসাবে রাশিয়া এই প্রস্তাবে ভিটো দিয়ে প্যানেলটির নবায়ন আটকে দিয়েছে। অন্য ১৪ টি সদস্যদেশের ১৩ টিই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছিল। আর উত্তর কোরিয়ার মিত্রদেশ চীন ভোটদানে বিরত ছিল।

ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও পরমাণু কর্মসূচির জন্য ২০০৬ সাল থেকে উত্তর কোরিয়া জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের কয়েকদফা নিষেধাজ্ঞার আওতাধীনে আছে। বহুজাতিক বিশেষজ্ঞ প্যানেল গত ১৫ বছর ধরে এ সমস্ত নিষেধাজ্ঞো লঙ্ঘন হচ্ছে কিনা তার ওপর নজর রেখে আসছে।

নিরাপত্তা পরিষদে বার্ষিক ভোটে এই প্যানেলের কার্যক্রম ১৪ বছর ধরে নবায়ন করা হয়ে আসছিল। রাশিয়া এই প্রথম ভিটো দিয়ে প্যানেলটির কার্যক্রম বন্ধ করল।

বিবিসি জানায়, গত সপ্তাহে প্যানেলটি জানিয়েছিল, ইউক্রেইনে ব্যবহারের জন্য উত্তর কোরিয়ার কাছ থেকে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের মতো অস্ত্র কিনে রাশিয়া জাতিসংঘ নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করছে- এমন খবর তদন্ত করে দেখছে তারা।

প্যানেলটির কার্যক্রম আটকে দেওয়ার রাশিয়ার পদক্ষেপের সমালোচনা করেছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ কোরিয়া এবং অন্যান্য পশ্চিমা মিত্রদেশ। মস্কো এবং পিয়ংইয়ংয়ের নেতাদের মধ্যে একবছর ধরে উচ্চ-পর্যায়ের কয়েকদফা বৈঠকের পর এমন পদক্ষেপ এল।

জাতিসংঘে দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত হং জুন-কুক বলেছেন, “রাশিয়ার এই পদক্ষেপ অনেকটা হাতেনাতে ধরা পড়া এড়াতে সিসিটিভি নষ্ট করার মতো ব্যাপার।”

ওদিকে, রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র সামরিক উত্তেজনা বাড়াচ্ছে। আন্তর্জাতিক কড়াকড়িতে নিরাপত্তা পরিস্থিতির কোনও উন্নতি হয়নি। বরং মানবিক দিক থেকে উত্তর কোরিয়ার জনগণের ওপর এর পরিণতি হয়েছে মারাত্মক।

“যুক্তরাষ্ট্র এবং এর মিত্ররা স্পষ্টতই দেখিয়ে দিয়েছে যে, সম্ভাব্য সবরকম উপায়ে উত্তর কোরিয়ার টুঁটি চিপে ধরা ছাড়া তাদের আর কোনও অভিপ্রায় নেই। শান্তিপূর্ণ সামাধান তাদের কর্মসূচিতে আদৌ নেই।”

তাছাড়া, নিষেধাজ্ঞা পর্যবেক্ষণকারী বিশেষজ্ঞ প্যানেলটি বস্তুনিষ্ঠ না এবং পক্ষপাতহীনও না। এই প্যানেল পশ্চিমাদের হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে বলেও রাশিয়া উল্লেখ করেছে।

উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার প্রেক্ষাপটে ২০০৬ সালে প্রথম নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ। এরপরও উত্তর কোরিয়া পারমাণবিক কর্মসিূচি চালিয়ে যেতে থাকায় পরে আরও ১০টি নিষেধাজ্ঞা প্রস্তাব পাস হয়।

উত্তর কোরিয়ার অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়ার পরও দেশটির নেতা কিম জং-উন প্রশাসন বরারবই এসব নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে আসছে। সম্প্রতি উত্তর কোরিয়া আরও দ্রুতগতিতে পারমাণবিক অস্ত্র উন্নয়ন করছে এবং বিপজ্জনক সামরিক কৌশল নিয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘনও করছে দেশটি।

২০১৯ সাল থেকে এসব নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার জন্য নিরাপত্তা পরিষদকে রাজি করানোর চেষ্টা করে এসেছে রাশিয়া ও চীন।