তাইওয়ান প্রণালীর কল্পিত মধ্যরেখা মুছে দেওয়া শুরু করেছে চীন

এখন চীনের অনেক শক্তিশালী হয়ে ওঠা নৌবাহিনীর জাহাজগুলো নিয়মিতভাবে ওই মধ্যরেখা লঙ্ঘন করে চলছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 August 2022, 10:44 AM
Updated : 26 August 2022, 10:44 AM

চীন ও তাইওয়ান দ্বীপের মধ্যবর্তী তাইওয়ান প্রণালীর মাঝ বরাবর একটি কল্পিত রেখা বয়ে চলে প্রায় ৭০ বছর ধরে শান্তি বজায় রেখেছিল, কিন্তু চীনের আধুনিকৃত নৌবাহিনী তাদের শক্তি জাহির করতে থাকায় তথাকথিত এই মধ্যরেখাটি ক্রমশ অর্থহীন হয়ে উঠছে।

স্নায়ু যুদ্ধের উত্তুঙ্গ সময়ে কমিউনিস্ট চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থিত তাইওয়ানের মধ্যে উত্তেজনার প্রেক্ষিতে ১৯৫৪ সালে এক মার্কিন জেনারেল এই রেখাটি উদ্ভাবন করেন। চীন কখনোই এই রেখাটি আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার না করলেও দেশটির গণমুক্তি ফৌজ অনেকাংশে এটাকে মেনে চলেছে।

কিন্তু কয়েক সপ্তাহ আগে মার্কিন কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি তাইপে সফর করলে বেইজিং অত্যন্ত ক্ষিপ্ত হয়। এর প্রতিক্রিয়ায় তাইওয়ান দ্বীপকে ঘিরে থাকা জলসীমায় ব্যাপক সামরিক মহড়া চালায় চীন। এখন দেশটির অনেক শক্তিশালী হয়ে ওঠা নৌবাহিনীর জাহাজগুলো নিয়মিতভাবে ওই মধ্যরেখা লঙ্ঘন করে চলছে।

“আমরা যেন মধ্যরেখা ছেড়ে দেই সেই লক্ষ্য নিয়ে তারা আমাদের ওপর অনবরত চাপ বাড়াচ্ছে,” বলেছেন ওই অঞ্চলের নিরাপত্তা পরিকল্পনার বিষয়ে জ্ঞাত এক তাইওয়ানি কর্মকর্তা, জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

“তারা এটাকে বাস্তব রূপ দিতে চাইছে,” বলেছেন ওই কর্মকর্তা, তবে বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় নিজের পরিচয় প্রকাশে রাজি হননি তিনি।

Also Read: যুক্তরাষ্ট্রের আইনপ্রণেতাদের আরেকটি দল তাইওয়ান যাচ্ছে

ওই মধ্যরেখাটিকে একটি বাফার হিসেবে কাজ করছে, এমন ধারণা ত্যাগ করা দ্বীপটির পক্ষে ‘অসম্ভব’ হবে বলে জানিয়েছেন কিছু তাইওয়ানি কর্মকর্তা।

চলতি মাসে এক সংবাদ সম্মেলনে তাইওয়ানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী যোশেফ উ বলেছেন, স্থিতাবস্থা বদলানোর চেষ্টা সহ্য করা হবে না।

“তাইওয়ান প্রণালীতে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে, শান্তি রক্ষা করতে মধ্যরেখাটি যেন সেখানে বজায় থাকে, তা নিশ্চিত করতে আমাদের সমমনা অংশীদারদের সঙ্গে আমাদের হাত মেলানো দরকার,” বলেছেন উ।

অন্য কর্মকর্তারা ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা সতর্ক করে বলেছেন, বিপজ্জনক পরিস্থিতির ঝুঁকি বাড়ানো ছাড়া ওই লাইনটি রক্ষা করা দ্বীপটির পক্ষে কঠিন হবে।

শক্তি প্রদর্শন

যদি চীনের বাহিনী জলসীমার ১২ নটিক্যাল মাইলের মধ্যে ঢুকে পড়ে তাহলে তাইওয়ান সামরিকভাবে এর জবাব দিবে বলে জানিয়েছেন উ; কিন্তু এর বাইরে এ ধরনের কোনো পরিস্থিতিতে জবাব দেওয়ার জন্য সামরিক বাহিনীকে বা কোস্টগার্ডকে বাড়তি কর্তৃত্ব দেওয়ার আশু কোনো পরিকল্পনা নেই বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

প্রেসিডেন্ট সাই ইং ওয়েন বারবার বলেছেন, তাইওয়ান সংঘাত উস্কে দেবে না, বাড়াবেও না।

দ্বীপটির পাশের বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ত শিপিং লাইনের ভেতরে চীনের টহল দেওয়া আটকানোর জন্য তাইওয়ানের পক্ষে থাকা আন্তর্জাতিক সমর্থন যথেষ্ট কিনা এবং তাইওয়ানের বন্ধুরা ওই মধ্যরেখা বজায় রাখার ক্ষেত্রে দ্বীপটিকে সাহায্য করবে কিনা তা প্রশ্নবিদ্ধ বলে জানাচ্ছে রয়টার্স।

যুক্তরাষ্ট্র ও অন্য পশ্চিমা নৌবাহিনীর জাহাজগুলো ওই প্রণালীর ভেতর দিয়ে যায় এটা দেখাতে যে তারা এর আন্তর্জাতিক মর্যাদা বজায় রাখছে, কিন্তু আইনি অবস্থানহীন ওই কাল্পনিক রেখা কঠোরভাবে বজায় রাখার জন্য তারা সেখানে যায় না।

তাইওয়ান প্রণালী ১৮০ কিলোমিটার চওড়া আর এর সবচেয়ে সংকীর্ণ অংশে মধ্যরেখাটি তাইওয়ানের জলসীমা থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে।

তাইওয়ানের কর্মকর্তারা সতর্ক করে বলেছেন, তাইওয়ানের জলসীমার কাছে চীনের প্রতিষ্ঠিত নৌ উপস্থিতি তাইওয়ানের সামরিক বাহিনীকে চাপে ফেলবে আর চীনের অবরোধ বা আক্রমণকে অনেক সহজ করে তুলবে।

শেষ পর্যন্ত একটি অপ্রয়োজনীয় মধ্যরেখা চীনের নিকটবর্তী সাগরগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে অধিপত্য ধরে রাখা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য আরও চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দেবে এবং প্রশান্ত মহাসাগরে চীনকে তার শক্তি প্রদর্শনে সহায়তা করবে।

তাইওয়ান প্রণালীর মধ্যরেখায় এটি চিহ্নিত করা কোনো ব্যবস্থা নেই। অনেক বছর ধরে চীন শান্তভাবে এটিকে স্বীকার করে গেছে কিন্তু ২০২০ সালে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বিবৃতি দিয়ে এর ‘অস্তিত্ব নেই’ বলে দাবি করেন। পরে দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও তাইওয়ান সম্পর্কিত কাউন্সিলও একই কথা বলে।

সম্প্রতি তাইওয়ান প্রণালীতে এই দুপ পক্ষের যুদ্ধজাহাজগুলো ‘ইঁদুর-বিড়াল’ খেলছে, চীনের জাহাজগুলো তাইওয়ানের টহল জাহাজগুলোকে পাশ কাটানোর কৌশল নিয়ে মধ্যরেখা অতিক্রম করছে।

চলতি মাসে চীনের যুদ্ধ বিমানগুলোও ওই রেখাটি অতিক্রম করেছে, যদিও তারা সেটি পার হয়ে অল্প দূরত্ব পর্যন্ত যাচ্ছে কিন্তু অতীতে চীনের বিমান বাহিনী খুব কমই এমনটি করেছে।

এসব বিষয়ে রয়টার্সের মন্তব্যের অনুরোধে সাড়া দেয়নি চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।