সংবিধান পরিবর্তনে ঐতিহাসিক গণভোটের পরিকল্পনা জানাল অস্ট্রেলিয়া

গণভোটে সংবিধান সংশোধনের পক্ষে রায় এলে অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাসে প্রায় ৫০ বছরের মধ্যে প্রথমবার সংবিধান পরিবর্তন হবে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 March 2023, 04:41 PM
Updated : 23 March 2023, 04:41 PM

অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ দেশের পার্লামেন্ট এবং সরকারের নীতিতে আদিবাসীদেরকে  আরও বেশি বক্তব্য রাখার সুযোগ দিতে সংবিধান সংশোধন প্রশ্নে পরিকল্পিত গণভোটের বিস্তারিত খুঁটিনাটি প্রকাশ করেছেন।

গণভোটে সংবিধান সংশোধনের পক্ষে রায় এলে অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাসে প্রায় ৫০ বছরের মধ্যে প্রথমবার সংবিধান পরিবর্তন হবে।

আগামী অক্টোবর এবং ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে অস্ট্রেলীয়রা এ গণভোট দেবে বলে আশা করা হচ্ছে। ভোটের ফল পক্ষে গেলে প্রতিষ্ঠা পাবে আদিবাসীদের জন্য ‘অ্যাবোরিজিনাল অ্যান্ড টোরেস স্ট্রেইট আইল্যান্ডার ভয়েস’ নামের নতুন একটি উপদেষ্টা পরিষদ।

এই পরিষদে থাকবেন নির্বাচিত প্রতিনিধিরা। তাদের কাজ হবে আদিবাসীদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কথা বলা এবং নীতিমালার ক্ষেত্রে পার্লামেন্টকে উপদেশ-পরামর্শ দেওয়া। তবে আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে তাদের ভোট দেওয়া কিংবা ভেটো দেওয়ার কোনও ক্ষমতা থাকবে না।

এই পরিবর্তন আনাটাকে ‘খুব সাধারণ’ কিন্তু ‘গুরুত্বপূর্ণ’ বলে বর্ণনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। কারণ, দ্য ভয়েস সংবিধানে ঠাঁই পেলে অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাসে আদিবাসী জনগণের বিশেষ স্থানের স্বীকৃতি মিলবে; সরকারের নীতিতেও তারা অবদান রাখতে পারবে।

অস্ট্রেলিয়ায় সংবিধান প্রশ্নে গণভোট আয়োজনে সাফল্য খুবই কম এসেছে। এর আগে ৪৪ বার এ ধরনের গণভোট আয়োজন করা হয়। তার মধ্যে মাত্র আটবার সাফল্য এসেছে। 

দ্য ভয়েস নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে পক্ষে-বিপক্ষে তীব্র বিতর্ক হচ্ছে।

দ্য ভয়েস কী?

২০১৭ সালে ‘উলুরু স্টেটমেন্ট ফ্রম দ্য হার্ট’ নামে একটি ঐতিহাসিক নথিতে দ্য ভয়েসের বিষয়ে সুপারিশ করা হয়েছিল।

আড়াইশ’র বেশি আদিবাসী নেতা দ্য ভয়েসের খসড়া তৈরি করেন। তারা ওই বিবৃতিকে সর্বোত্তম বলে বিবেচনা করেন। যদিও সেটি সর্বসম্মত নয়।

ওই বিবৃতিতে সংবিধানের যে অংশের সংস্কারের প্রস্তাব রাখা হয় তা ‘ফার্স্ট নেশন্স অস্ট্রেলিয়ান্স’ কে প্রভাবিত করবে।

বিবিসি জানায়, প্রধানমন্ত্রী আলবানিজ বৃহস্পতিবার গণভোটের জন্য একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেন এবং জনগণের রায় নিতে একটি বাধ্যতামূলক গণভোট আয়োজনের প্রস্তাব রাখেন।

তিনি বলেন, ‘‘এটি অ্যাবোরিজিনাল অ্যান্ড টরেস স্ট্রেইট আইল্যান্ডার ভয়েস প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ফার্স্ট পিপলস অব অস্ট্রেলিয়াকে স্বীকৃতি দিতে সংবিধান পরিবর্তন করার জন্য একটি প্রস্তাবিত আইন৷ আপনি কী এই প্রস্তাবিত পরিবর্তনকে অনুমোদন করেন?”

আবেগপূর্ণ ভাষায় তিনি আরো বলেন, ‘‘দ্য ভয়েসের স্বীকৃতি নিশ্চিত করবে যে, অস্ট্রেলীয়রা মহান এই দ্বীপ মহাদেশটিকে বিশ্বের প্রাচীনতম ধারাবাহিক সংস্কৃতির সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছে।

‘‘আমাদের জাতির জন্মসনদে এটির স্বীকৃতি দেওয়া উচিত এবং এটি নিয়ে গর্বিত হওয়া উচিত।”

প্রধানমন্ত্রীর পাশে এসময় আদিবাসী বিষয়ক মন্ত্রী লিন্ডা বার্নি দাঁড়িয়ে ছিলেন। একজন আদিবাসী হিসেবে নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে গিয়ে তিনি জানান, কীভাবে তাকে তার জীবনের প্রথম ১০টি বছর ‘অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক হিসেবে নিবন্ধিত না হয়েই কাটাতে হয়েছে’।

গণভোট আয়োজনের নতুন এই প্রস্তাব নিয়ে এখনো পার্লামেন্টে বিতর্ক হওয়া বাকি আছে বলে জানায় বিবিস।

উলুরু স্টেটমেন্ট কী বলছে?

আদিবাসী অস্ট্রেলীয়রা তাদের জীবন উন্নত করতে কাঠামোগত সমস্যা মোকাবেলা করার সময় নিজেদের ‘শক্তিহীনতা’ অনুভব করে বলে উলুরু স্টেটমেন্টে দাবি করা হয়।

অস্ট্রেলিয়ায় অ-আদিবাসীদের তুলনায় আদিবাসীদের গড় আয়ু কম, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতেও তারা পিছিয়ে এবং নানা অপরাধে জড়িয়ে তাদের করাবন্দি হওয়ার প্রবণতা উচ্চ।

কীভাবে এসব সমস্যার সমাধান করে তাদের মূলস্রোতে সংযুক্ত করা যায় তা নিয়ে আদিবাসীদের সঙ্গে ঠিকঠাক আলোচনা হচ্ছে না বলে মনে করেন অনেকে।

উলুরু স্টেটমেন্টে সই করা অধ্যাপক মেগান ডেভিসে মনে করেন, ‘‘অ-আদিবাসী লোকজন ওইসব সম্প্রদায়ের জন্য সিদ্ধান্ত নিচ্ছে যাদের কাছে তারা কখনও যায়নি এবং যাদের (আদিবাসী) সম্পর্কে তারা কিছুই জানে না।”

 বিরোধীপক্ষ কী বলছে?

কেউ কেউ অবশ্য বলছেন, এরই মধ্যে আদিবাসী সম্প্রদায়ের অনেক প্রতিনিধি পার্লামেন্টে এসে গেছেন।

অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্টে বর্তমানে আদিবাসী সম্প্রদায়ের ১১ জন প্রতিনিধি আছেন। যা দেশটির পার্লামেন্টের মোট প্রতিনিধির ৪ দশমিক ৮ শতাংশ।

‘দ্য ভয়েসের পক্ষের লোকজন ‍অবশ্য এই যুক্তির পাল্টা হিসেবে বলেছেন, একজন পার্লামেন্টে সদস্য তার নির্বাচনী এলাকার প্রতিনিধিত্ব করেন। তাই তাদের পক্ষে পুরো আদিবাসী সম্প্রদায়ের স্বার্থ দেখা সম্ভব না।

আদিবাসীদের পক্ষে এ সমর্থন সার্বজনীন নয়। কেউ কেউ মনে করেন, আদিবাসীদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে একটি চুক্তিকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। যেখানে আইনত বাধ্যবাধকতা থাকবে।