কেনো পদত্যাগ করলেন ভারতের নির্বাচন কমিশনার অরুণ গোয়েল?

ভারতে নির্বাচন কমিশনে সদস্য সংখ্যা তিন। সেখানে আগে থেকেই একটি পদ ফাঁকা ছিল। অরুণ গোয়েল পদত্যাগ করায় প্রধান নির্বাচন কমিশনারই এখন একমাত্র প্যানেল সদস্য।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 March 2024, 04:25 AM
Updated : 10 March 2024, 04:25 AM

কয়েক দিনের মধ্যেই ভারতে লোকসভা নির্বাচনের নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করার হবে। এ সময়ে হঠাৎ করেই কেনো দেশটির নির্বাচন কমিশনার অরুণ গোয়েল পদত্যাগ করলেন তা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে।

শনিবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোতে অরুণ গোয়েলের পদত্যাগের খবর প্রকাশ পায়। বলা হয়, দেশটির প্রেসিডেন্ট দ্রৌপোদী মুর্মু তার পদত্যাগ পত্র আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করেছেন। ফলে তাৎক্ষণিকভাবেই অরুণ গোয়লের পদত্যাগ কার্যকর হয়েছে বলে আইন মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া এক নোটিসে বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে এনডিটিভি জানায়, অরুণ তার পদত্যাগপত্রে ‘ব্যক্তিগত কারণে’ পদত্যাগ করছেন বলে উল্লেখ করেছেন। সরকারের পক্ষ থেকে তাকে পদত্যাগ করা থেকে বিরত রাখার প্রচেষ্টা করা হয়েছিল বলেও জানান ওই কর্মকর্তারা।

পদত্যাগের খবর প্রকাশের পর অরুণের স্বাস্থ্যের অবস্থা নিয়েও গুঞ্জণ তৈরি হয়েছিল। যদিও তা সঙ্গে সঙ্গেই বাতিল করে দেওয়া হয়। শীর্ষ কর্মকর্তারা জানান, অরুণ সম্পূর্ণ সুস্থ আছেন। বরং প্রধান নির্বাচন কমিশনার রাজিব কুমারের সঙ্গে অরুণের কিছু বিষয়ে মতপার্থক্য তৈরি হয়েছে বলে নির্বাচন কমিশনের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

ভারতে নির্বাচন কমিশনে সদস্য সংখ্যা তিন। সেখানে আগে থেকেই একটি পদ ফাঁকা ছিল। এখন অরুণ গোয়েল পদত্যাগ করায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার রাজিবই একমাত্র প্যানেল সদস্য।

অবসরপ্রাপ্ত আমলা অরুণ ১৯৮৫ ব্যাচে আইএএস কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন।

আগামী সপ্তাহে ভারতে লোকসভা নির্বাচনের নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা হতে পারে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছিল। তবে অরুণ গোয়েলের এই আকস্মিক পদত্যাগের পর সেটা সম্ভব হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।

এরপর কী হবে?

নতুন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ প্রক্রিয়ায় শুরুতে আইনমন্ত্রীর নেতৃত্ব একটি সার্চ কমিটি গঠন করা হবে। যে কমিটিতে দুইজন ইউনিয়ন সেক্রেটারিও থাকবেন। তারা পাঁচজনের সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরি করে দেবেন।

তারপর প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি সিলেকশন কমিটি, যেখানে প্রধানমন্ত্রীর মনোনয়ন দেওয়া একজন ইউনিয়ন কেবিনেট মন্ত্রী থাকবেন, লোকসভায় বিরোধী দলের নেতা অথবা একক বৃহৎ বিরোধী দলের নেতাসহ ওই কমিটি চূড়ান্ত প্রার্থী বাছাই করবে। তারপর প্রেসিডেন্ট আনুষ্ঠানিকভাবে বেছে নেওয়া সিইসি বা ইসিকে নিয়োগ দেবেন।

এর আগে নির্বাচন কমিশনার বাছাই কমিটিতে ভারতের প্রধান বিচারপতিও অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। কিন্তু গত বছর নতুন একটি আইন প্রণয়ন করে কমিটি থেকে প্রধান বিচারপতিকে বাদ দেওয়া হয়।

কে কী বলছেন?

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস পার্টির প্রধান মল্লিকার্জুন খাড়গে অরুণ গোয়েলের আকস্মিক পদত্যাগের কী প্রভাব পড়বে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

বলেছেন, “ইলেকশন কমিশনার নাকি ইলেকশন ‘ওমিশনার’? ভারতে এখন মাত্র একজন নির্বাচন কমিশনার রয়েছেন, যেখানে কয়েক দিনের মধ্যে লোকসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে হবে। কেনো?”

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স এ তিনি আরো লেখেন, “যেমনটা আমি আগেই বলেছি, আমরা যদি আমাদের স্বাধীন প্রতিষ্ঠানের নিয়মতান্ত্রিক পতন বন্ধ না করি, তাহলে আমাদের গণতন্ত্রের স্থান একনায়কতন্ত্র দখল করে নেবে!

“যেহেতু নির্বাচন কমিশনার বাছাইয়ের নতুন প্রক্রিয়ায় সমস্ত ক্ষমতা কার্যকরভাবে ক্ষমতাসীন দল এবং প্রধানমন্ত্রীর হাতে কুক্ষিগত, তাহলে পরবর্তী মেয়াদ শেষ হওয়ার ২৩ দিন পরেও কেন নতুন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করা হয়নি? মোদী সরকারকে এই প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে এবং যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যা দিতে হবে।”

এখন সাধারণ নির্বাচনের ঠিক আগ মুহূর্তে দুই দুইজন জন নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগ দিতে হবে। এভাবে তাড়াহুড়ো করে নিয়োগ প্রদাণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা সাকিত গোখলে।