পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছেন, ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য তিনি আর যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনকে ‘দোষ দিচ্ছেন না’।
চলতি বছরের শুরুর দিকে অনাস্থা ভোটে প্রধানমন্ত্রীত্ব হারানোর পর থেকে পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফের (পিটিআই) চেয়ারম্যান বিদেশি ষড়যন্ত্রে তার ক্ষমতাচ্যুতি এবং এই ষড়যন্ত্রের পেছনে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন ছিল বলে বারবার বলে আসছিলেন।
সেই তার মুখ থেকে রোববার ক্ষমতাচ্যুতির জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে আর দোষ না দেওয়ার মন্তব্যকে ‘বিস্ময়কর’ বলছে ডন।
ইমরান বলেছেন, তিনি ওয়াশিংটন ও ইসলামাবাদের মধ্যে ‘মর্যাদাপূর্ণ’ সম্পর্ক চান।
ডন জানিয়েছে, পিটিআই চেয়ারম্যান এসব বলেছেন ব্রিটিশ দৈনিক ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে।
“যতটুকু আমি জানি এটা শেষ। এটা পেছনে পড়ে গেছে,” তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়ে অভিযোগ প্রসঙ্গে ইমরান এমনটাই বলেছেন বলে জানিয়েছে দৈনিকটি।
“যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক প্রভু-চাকরের মতো বা প্রভু-দাসের মতো হয়ে আছে। আমরা ব্যবহৃত হয়েছি ভাড়াটে বন্দুকের মতো। কিন্তু এর জন্য আমি তাদের থেকে বেশি আমাদের সরকারগুলোকে দায় দিচ্ছি,” বলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী।
ইউক্রেইনে রাশিয়া সেনা পাঠানোর প্রাক্কালে নিজের মস্কো ভ্রমণকে ‘বিব্রতকর’ বলেও অ্যাখ্যা দেন ইমরান।
যদিও এই সফর আরও কয়েক মাস আগেই ঠিক করা হয়েছিল, বলেন তিনি।
পাকিস্তান মুসলীম লীগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) শীর্ষ নেতা নওয়াজ শরিফ তার ভাই শাহবাজকে দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন করার ‘অনুমতি না দিয়ে’ দেশকে বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেছেন সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী।
লাহোরে নিজের বাসভবন থেকে ভিডিও লিংকের মাধ্যমে দলীয় সমর্থকদের একাধিক জমায়েতের উদ্দেশ্যে দেওয়া বক্তৃতায় ইমরান তার সমালোচনার বন্দুক শরিফ ভ্রাতৃদ্বয়ের বড়জনের দিকে তাক করে বলেন, ছোট শরিফ নির্বাচনে যাচ্ছেন না, কারণ তার ভয় হচ্ছে তিনি পিটিআইয়ের হাতে পরাজিত হবেন।
“এটা সমগ্র পাকিস্তানি জাতির জন্যই গভীর উদ্বেগের যে সুপ্রিম কোর্টে দণ্ডপ্রাপ্ত এক ব্যক্তি নতুন সেনাপ্রধান কে হবেন তা সহ পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে সিদ্ধান্ত দিচ্ছেন।
“সরকার বদলের ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে যাদের বসানো হয়েছে তারা নির্বাচন না করে পালিয়ে বেড়াচ্ছে, কারণ তারা জানে তারা আমার বিরুদ্ধে নির্বাচনে হারবে এবং তাদের দুর্নীতি আর লুটের টাকা বাঁচাতে পারবে না,” বলেছেন ইমরান।
পিটিআইয়ের এ চেয়ারম্যানের ভাষ্যমতে, ‘সরকার বদলে পরীক্ষানিরীক্ষা’ ব্যর্থ হয়েছে কিন্তু ‘ষড়যন্ত্রকারী ও তা বাস্তবায়নকারীরা’ এখনও তাদের ভুল স্বীকার করে নিচ্ছে না।
ক্ষমতাসীন শাসকরা কখনোই কোনো শীর্ষ পদে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেবে না, কেননা তারা যে কোনো মূল্যে তাদের লুটের অর্থের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে চাইবে, অভিযোগ ইমরানের।
পিটিআই চেয়ারম্যানের দাবি, তার ক্ষমতাচ্যুতি পাকিস্তানের ‘তেজি’ অর্থনীতিকে ‘টালমাটাল’ অবস্থায় নিয়ে গেছে।
“শরিফদের এ নিয়ে কোনো অনুশোচনাও নেই কেননা তারা বিশেষ কারও বানানো আইনের সাহায্যে নিজেদের দায়মুক্তি নিয়েই ব্যস্ত,” বলেছেন তিনি।
পিএমল-এন যে জোটের সদস্য, সেই পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টের (পিডিএম) সরকার তার বিরুদ্ধে পাকিস্তানকে আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে বিচ্ছিন্ন করার যে অভিযোগ করে আসছে তা নিয়েও খোঁচা দেন সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী।
গত ৭ মাসে এই ব্যাপারে কী করেছে, দেশের কাছে সরকারের সে বিষয়ে ব্যাখ্যা দেওয়া উচিত, বলেছেন তিনি।