মালয়েশিয়ায় নির্বাচন, জরিপে এগিয়ে আনোয়ার ইব্রাহিম

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আশা নিয়ে এ সপ্তাহে জোর প্রচার চালিয়েছেন প্রবীণ বিরোধীদলীয় নেতা আনোয়ার ইব্রাহিম।

রয়টার্স
Published : 18 Nov 2022, 06:08 PM
Updated : 18 Nov 2022, 06:08 PM

মালয়েশিয়ায় শনিবার অনুষ্ঠিত হতে চলেছে সাধারণ নির্বাচন। দেশটির প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আশা নিয়ে এ সপ্তাহে জোর প্রচার চালিয়েছেন প্রবীণ বিরোধীদলীয় নেতা আনোয়ার ইব্রাহিম। জনমত জরিপেও তিনি এরই মধ্যে এগিয়ে রয়েছেন।

দুই দশক বিরোধীদলীয় নেতা থাকার পর আনোয়ার ২০২০ সালে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার চেষ্টা করে বিফল হন। এবার তিনি আরও একবার এই স্বপ্ন পূরণের আশায় আছেন।

শুক্রবার আনোয়ার তার তামবুন আসনে প্রচারাভিযান চালানোর পর বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, তিনি নির্বাচনে তার জোটের জয়লাভ এবং রাজনৈতিক আবহ বদলে দেওয়ার সুযোগ পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী।

আনোয়ারের জোট এবারের নির্বাচনে অন্য দুটি কোয়ালিশনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামছে। একটি প্রধানমন্ত্রী ইসমাইল সাবরি ইয়াকুবের এবং অন্যটি সাবেক প্রধানমন্ত্রী মুহিউদ্দিন ইয়াসিনের কোয়ালিশন।

আরও কয়েকটি দলও প্রতিদ্বন্দ্বতায় নামছে। এর মধ্যে আছে আরেক সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদের দল। এই দলের কারণে আগের যে কোনও সময়ের চেয়ে এবার ভোট ভাগ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে মনে করা হচ্ছে।

জনমত জরিপগুলোতে এবার লড়াই হাড্ডাহাড্ডি হবে বলেই আভাস পাওয়া যাচ্ছে। ১৯৫৭ সালের স্বাধীনতার পর মালয়েশিয়ায় এই শনিবারের সাধারন নির্বাচনই হতে চলেছে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ।

জনমত জরিপে ঝুলন্ত পার্লামেন্ট হতে পারে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। অর্থাৎ, কোনও দল কিংবা জোটই সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় সাধারন সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না বলেই মনে করা হচ্ছে।

জাতিগত চীনা ও ভারতীয় সংখ্যালঘুরাসহ শহুরে ভোটারদের একটি অংশ আনোয়ারকে সমর্থন দিচ্ছে। আনোয়ারের নেতৃত্বাধীন কোয়ালিশন বেশির ভাগ আসন জিতবে বলে আশা করা হলেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না বলেই আভাস পাওয়া যাচ্ছে জনমত জরিপগুলোসহ বিশ্লেষকদের বিশ্লেষণেও।

তবে দেশের বেশিরভাগ মালয়ের কাছে আনোয়ার ইব্রাহিমের জনপ্রিয়তা এবং আবেদনে ঘাটতি আছে। আনোয়ারের বিরুদ্ধে অতীতে সমকামিতার অভিযোগ থাকা এবং তিনি মালয় জনগণের অনুকূল ইতিবাচক কর্মসূচির বিরোধিতা করার কারণে তার প্রতি সমর্থনে এই ঘাটতি।

দুর্নীতি এবং সমকামিতার অভিযোগের কারণে আনোয়ার প্রায় এক দশক জেল খেটেছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, আনোয়ারের জোট হেরে যেতে পারেন যদি অন্য ব্লকগুলো তার বিরুদ্ধে দল গঠন করে।

প্রধানমন্ত্রী ইয়াকুব সাবরি এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী মুহিউদ্দিন ইয়াসিনের দলসহ প্রতিদ্বন্দ্বী জোটগুলো একযোগে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ভোট পেয়ে আনোয়ারের দলকে পরাজিত করে ফেলতে পারে।

আনোয়ারের নির্বাচনী অঙ্গীকারের মধ্যে রয়েছে- চাকরির ব্যবস্থা, বিনিয়োগের ব্যবস্থা করে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা তৈরি, জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে বিভাজন দূর করা। ভোটাররা এবারের নির্বাচনে অর্থনীতির দিকেই তাকিয়ে আছে। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা নিয়েও তারা হতাশ।

এই প্রেক্ষাপটে আনোয়ারের দল ভোটারদের দলে টানতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। স্বাধীন জরিপ সংস্থা মার্দেকা সেন্টারের শুক্রবার প্রকাশিত জরিপের ফলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে যে, আনোয়ারের পাকাতান হারাপান জোট পেতে পারে ৩৩ দশমিক ৬ শতাংশ ভোট।

অন্যদিকে, মুহিউদিদনের নেতৃত্বাধীন পেরিকাতান জোট পেতে পারে ২০ দশমিক ৩ শতাংশ ভোট এবং ইসমাইল সাবরি ইয়াকুবের বরিসন ন্যাশনাল পেতে পারে ১৫ দশমিক ৪ শতাংশ ভোট।

জরিপ অনুযায়ী, আনোয়ারের পাকাতান হারপানই মোট ২২২আসনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি (৮২ টি) আসন জয় করার পথে রয়েছে বলে জানিয়েছে মারদেকা সেন্টার। বুধবার থেকে শুক্রবারের মধ্যে চালানো জরিপের ফলে এই পূর্বাভাস পাওয়া গেছে। আর প্রধানমন্ত্রী পদের জন্যও আনোয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রার্থী।