যুক্তরাষ্ট্রের জন্য গোয়েন্দাগিরির সুযোগ করে দিয়েছে চীনের মহড়া

তাইওয়ান ঘিরে চীনের চালানো সামরিক মহড়া যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্রদের জন্য গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের জানালা খুলে দিয়েছে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকেরা

রয়টার্স
Published : 12 August 2022, 03:19 PM
Updated : 12 August 2022, 03:19 PM

তাইওয়ান ঘিরে বড় পরিসরে এবং বাড়তি সময় নিয়ে সামরিক মহড়া চালিয়েছে চীন। দ্বীপদেশটিতে বাইরের হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে এটি ছিল চীনের নজিরবিহীন সামরিক ও রাজনৈতিক সতর্কবার্তা।

কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্রদের জন্য এই মহড়া গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের জানালা খুলে দিয়েছে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকেরা

যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির তাইপে সফরের জেরে ক্ষুব্ধ চীন গত সপ্তাহে চার দিনের নজিরবিহীন মহড়ার পর চলতি সপ্তাহেও বাড়তি অনুশীলন চালায়।

এই মহড়া ভবিষ্যতে কোনও ধরনের আগ্রাসনের পাশাপাশি চীনের কমান্ড, নিয়ন্ত্রণ এবং যোগাযোগ ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপকারী বিদেশি সামরিক বাহিনীকে তাড়াতে বেইজিং যেসব ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করতে পারে, তা যাচাই করার সুযোগ করে দিয়েছে বলে কূটনীতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা মনে করছেন।

আর কৌশলগত গোয়েন্দা তথ্যের দিক থেকে বলতে গেলে, কোনও ধরনের আগ্রাসন বা আগ্রাসনের পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে দ্বীপদেশ তাইওয়ানকে অবরুদ্ধ করে ফেলার ক্ষেত্রে চীনের সক্ষমতারও ধারণা পাওয়া গেছে এ মহড়া থেকে।

মহড়ায় তাইওয়ানের ওপর দিয়ে প্রথম ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে চীন। তাইওয়ানের পূর্ব উপকূলের জাহাজগুলোর ওপর বিমান ও নৌ হামলার অনুকরণেও মহড়া চালানো হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের দুজন সামরিক কর্মকর্তা চীনের মহড়া থেকে তথ্য সংগ্রহ চলছে বলে স্বীকার করেছেন। তবে তারা সতর্ক করে এও বলেছেন, এই মহড়া থেকে নিবিড় গোয়েন্দা তথ্য পাওয়ার সম্ভাবনা নেই; যা শিরোনামের বাইরে অন্যান্য মহড়া থেকে পাওয়া যায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, এ মহড়ায় চীনের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ যুদ্ধকৌশল দেখানোর সম্ভাবনা কম। কারণ, তারা জানে তাদের এই মহড়া নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

ওই কর্মকর্তারা আরও বলেন, মহড়ায় চীনের ব্যবহৃত সামরিক ব্যবস্থা ও ক্ষেপণাস্ত্রের বেশিরভাগই যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্রদের কাছে পরিচিত বলে মনে হয়েছে। তাই গত কয়েক সপ্তাহে তাদের সক্ষমতা সম্পর্কে আরও কতটা তথ্য সংগ্রহ করা যেতে পারত, তা স্পষ্ট নয়।

সিঙ্গাপুর-ভিত্তিক নিরাপত্তা বিশ্লেষক কলিন কোহ বলেন, অস্ত্রের চেয়ে এ মহড়ায় চীনের সামরিক বাহিনীর মূল শাখাগুলোকে পর্যবেক্ষণের মোক্ষম সুযোগ মিলেছে। চীনের সংস্কার করা ইস্টার্ন থিয়েটার কমান্ড, এই বাহিনীর রকেট ফোর্স ও স্ট্র্যাটেজিক সাপোর্ট ফোর্স কীভাবে মহড়ায় সমন্বিত ও সুসংহতভাবে কাজ করেছে সেটি দেখতে পাওয়া গেছে।

কলিন কোহ বলেন, “আমার পূর্ণ ধারণা- যুক্তরাষ্ট্র সংকেত, যোগাযোগ এবং ইলেকট্রনিক ইন্টেলিজেন্স থেকে শুরু করে সবক্ষেত্রেই তথ্যই সংগ্রহ করছে। কারণ, এ এক সুবর্ণ সুযোগ। এ সুযোগ হাতছাড়া করা যায় না।”

তিনি আরও বলেন, “আপনি যখন অন্য পক্ষের এ ধরনের তথ্য সংগ্রহ করবেন, তার মানে আপনি তাদের দুর্বলতাগুলো কোথায় তাও খুঁজে বের করতে পারবেন। আর তখন তা আপনার নিজস্ব পাল্টা ব্যবস্থা ও জ্যামিং সিস্টেম তৈরিতে সহায়ক হবে।”

চীনের মহড়ার সময় যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানের পূর্বে ফিলিপিন্স সাগরে বিমানবাহী রণতরী ইউএসএস রিগ্যানের পাশাপাশি অন্তত চারটি যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন রেখেছিল। এ জাহাজগুলো যেমন শক্তিশালী হামলা চালানোর হুমকি দিতে পারে, তেমনি সমুদ্রের বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে পানির ওপর-নিচে ব্যাপক নজরদারিও করতে পারে।