চার/পাঁচ দশক আগে দ্বীপটিকে শ্রীলঙ্কার হাতে ছেড়ে দেওয়ার কংগ্রেসের সিদ্ধান্ত নিয়ে আক্রমণ শানাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। পাল্টা জবাব দিচ্ছে বিরোধীদল কংগ্রেসও।
Published : 03 Apr 2024, 10:05 PM
ভারতে আসন্ন লোকসভা ভোটের জন্য প্রচার এবং প্রার্থীদের বাক-বিতন্ডা চলার মধ্যেই শ্রীলংকার একটি ক্ষুদ্র দ্বীপ ‘কাচ্চাতিভু’কে কেন্দ্র করে বহু বছর আগে কংগ্রেসের এক সিদ্ধান্ত নিয়ে রীতিমত সরগরম হয়ে উঠেছে রাজনীতি।
১৯৭৪ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এই দ্বীপের দাবি ছেড়ে দিয়ে তা শ্রীলঙ্কাকে দিয়ে দিয়েছিলেন বলে এক জনসভায় অভিযোগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
ওদিকে, পাল্টা যুক্তি দিয়ে বিরোধীদল কংগ্রেস পার্টি বলেছে, ভোট আসছে, তাই ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) কাচ্চাতিভু নিয়ে সরব হয়েছে।
বিবিসি জানায়, কাচ্চাতিভূ তামিলনাড়ু রাজ্যে রামনাথপুরম জেলার রামেশ্বরম শহরে পাক স্ট্রেইট এর একটি দ্বীপ। এই স্ট্রেইটের অপর পাশে আছে শ্রীলংকা। শ্রীলংকার দিক থেকে কাচ্চাতিভুর অবস্থান জাফনা নগরীর দক্ষিণ-পশ্চিমে।
এ দ্বীপের আয়তন প্রায় ১ দশমিক ৯ বর্গকিলোমিটার। দ্বীপটিতে একটি গির্জা আছে। ভারত ও শ্রীলংকা দুই দেশের পুণ্যার্থীরা সেখানে বার্ষিক ধর্মীয় উৎসব পালন করে থাকে।
১৯২১ সাল থেকে ভারত এবং শ্রীলংকা (তখন নাম ছিল সিলন) দু’দেশের জেলেরাই দ্বীপটিতে মাছ ধরার অধিকার দাবি করে আসছিল। পরে ১৯৭৪ সালে ভারত দ্বীপটির ওপর দাবি ছেড়ে দিলে বিরোধ নিষ্পত্তি হয়। দু’বছর পর একটি চুক্তির মধ্য দিয়ে দু’দেশেরই জেলেদের মাছ ধরা বন্ধ হয়। এতে ক্ষোভ বাড়ে ভারতীয় মৎসজীবীদের।
কংগ্রেসের সেই কয়েকদশক পুরোনো সিদ্ধান্তই এখন আবার খবরের শিরোনাম হয়েছে নরেন্দ্র মোদীর তোলা অভিযোগ থেকে।
গত রোববার মোদী ‘টাইমস অব ইন্ডিয়া’র একটি নিবন্ধ এক্সে (সাবেক টুইটার) শেয়ার করে লেখেন, “চোখ খুলে দেওয়া আর চমকে ওঠার মতো বিষয়। নতুন যে তথ্য উঠে এসেছে, তাতে ফাঁস হয়ে গেছে যে, কতটা উদাসীনভাবে কংগ্রেস কাচ্চাতিভু দিয়ে দিয়েছিল।”
কাচ্চাতিভু নিয়ে বিতর্ক দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে। সম্প্রতি তামিলনাড়ুর বিজেপি প্রধান কে আন্নামালাই তথ্যের অধিকার বা আরটিআই আইনের অধীনে কাচ্চাতিভু সম্পর্কে সমস্ত তথ্য প্রকাশ্যে আনার আবেদন করেছিলেন। সেই তথ্যের ভিত্তিতেই লেখা হয় ওই নিবন্ধ।
আর তাতেই উঠে এসেছে- দ্বীপটি নিয়ে সেই সময়কার বিস্তারিত খুঁটিনাটি। ফলে নতুন করে শুরু হয়েছে বিতর্ক। নতুন তথ্যানুযায়ী, সেই সময় ভারত সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, এলাকার দাবি করা এবং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। শেষ পর্যন্ত ১৯৭৪ সালে ইন্দো-শ্রীলঙ্কা সামুদ্রিক চুক্তির মধ্য দিয়ে কাচ্চাতিভুর দাবি ছেড়ে দেয় ভারত।
ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু দ্বীপটিকে ‘তুচ্ছ’ বলে অভিহিত করেছিলেন। এমন তথ্যও বেরিয়ে এসেছে। তিনি বলেছিলেন, “এই ছোট্ট দ্বীপের কোনও গুরুত্ব আমি দেখছি না। তাই এর ওপর ভারতের দাবি আমি নির্দ্বিধায় ছেড়ে দিতে পারি।” যদিও নেহেরুর আমলে দ্বীপটি শ্রীলংকার কাছে ছেড়ে দেওয়া হয়নি।
পরে নেহেরুর মেয়ে ইন্দিরা গান্ধী সরকার কাচ্চাতিভু নিয়ে শ্রীলংকার সঙ্গে বিরোধ নিষ্পত্তি করে, যা নিয়ে এখনও ব্যাপক অসন্তোষ আছে তামিলনাড়ু রাজ্যে। আর এখন ভারতে ভোটের আগে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদীও সেই সিদ্ধান্ত নিয়ে কংগ্রেসকে আক্রমণ শানাচ্ছেন।
উত্তর প্রদেশের মেরেঠের এক জনসভায় মোদী বলেছেন, “সুরক্ষার দিক থেকে দ্বীপটি গুরুত্বপূর্ণ। স্বাধীনতার সময় এটি আমাদের ছিল। ভারতের অভিন্ন অঙ্গ ছিল। কিন্তু চার/পাঁচ দশক আগে কংগ্রেস দ্বীপটিকে ফালতু বলে দেয়।”
মোদীর এমন অভিযোগের পর আরও বহু বিজেপি নেতা এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কংগ্রেসের সমালোচনায় সরব হয়েছেন। ১৯৭৪ সালে তামিল নাড়ুর ক্ষমতায় থাকা দ্রাবিড় মুনেত্রা কাজাগাম (ডিএমকে) দ্বীপটি ধরে রাখতে যথেষ্ট চেষ্টা করেনি বলেও তারা অভিযোগ করছেন।
ওদিকে, কংগ্রেসের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে মোদী আরও বলেছেন, তাদের অপরিণত রাজনীতির জেরে কাচ্চাতিভু দ্বীপ ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে। শাসনের দায়িত্ব যাদের ওপর ছিল তারাই করেছে দেশবাসীর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা। দ্বীপটি নিয়ে কংগ্রেসের গা-ছাড়া ভাব ভারতের গরিব মৎসজীবীদের ক্ষতি করেছে। এর জন্য তারা ভুলও স্বীকার করছে না।
তবে এর জবাবে কংগ্রেস নেতা রশিদ আলভি বলেছেন, তখনকার পরিস্থিতি আলাদা ছিল। এখনকার পরিস্থিতিও অনেক আলাদা। ১৯৭৪ সালে দ্বীপটি ছেড়ে দেওয়া হয়ে থাকলে তখনকার পরিস্থিতি বিবেচনাতেই তা করা হয়েছিল। আর এখন মোদী সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে কারও দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ না করে দ্বীপটি ফিরিয়ে আনা।