ভারতে প্রায় ১১ দিন ধরে পলাতক খলিস্তানপন্থি নেতা অমৃতপাল সিং। তাকে খুঁজে বের করতে চলছে ব্যাপক অভিযান। কিন্তু কেথায় গা ঢাকা দিয়ে আছেন তিনি? তার অবস্থান নিয়ে রটছে নানা গুজব।
কয়েকটি খবরে শোনা যাচ্ছে, ‘ওয়ারিশ দে পাঞ্জাব’ সংগঠনের এই নেতা গত ১৮ মার্চে পাঞ্জাব পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে পালানোর পর থেকে তাকে ভারতের রাজধানী দিল্লিসহ অন্তত চারটি রাজ্যে দেখা গেছে।
কখনও খবর পাওয়া যাচ্ছে, তিনি হরিয়ানায় পালিয়েছেন, আবার কখনও লখিমপুর খেরির পথ ধরে নেপালে পালানোর গুজব রটেছে। একাধিকবার শেষ মুহূর্তে তিনি পুলিশের হাত ফস্কে পালিয়েছেন বলেও জানানো হচ্ছে কোনও কোনও খবরে।
মঙ্গলবার রাতে খবর পাওয়া যায়, অমৃতপাল পাঞ্জাবের হোসিয়ারপুরের উপর দিয়ে অমৃতসর যাচ্ছেন। পুলিশ সে খবর পেয়ে হোসিয়ারপুরের একটি গ্রামে বাড়িতে বাড়িতে তল্লাশি চালায়। এতে গণমাধ্যমে চাউর হয়,অমৃতপাল হয়ত এখনও পাঞ্জাবেই আছেন।
মঙ্গলবার সকালেই রাজ্য সরকার পাঞ্জাব এবং হরিয়ানা হাইকোর্টকে জানিয়েছিল যে, পুলিশ অমৃতপালকে ধরেই ফেলেছে প্রায়।
এর আগে সোমবার অমৃতপালের একটি ভিডিও প্রকাশ্যে এসেছিল। তাতে দেখা গিয়েছিল, পূর্ব দিল্লির মধু বিহারে রাস্তা দিয়ে হাঁটছেন অমৃতপাল। তার মাথায় পাগড়ি ছিল না। পুলিশও নিশ্চিত করেছে যে, সিসিটিভি ফুটেজে যে ব্যক্তিকে দেখা গেছে, তিনি অমৃতপালই।
নাগালে পেয়েও তকে ধরতে পারছেনা পুলিশ। শোনা যাচ্ছে, ছদ্মেবেশে বার বার পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে পালাতে সক্ষম হচ্ছেন খলিস্তানপন্থি এই নেতা। অবস্থান বদলাচ্ছেন বার বার। গত ১১ দিনে কখনও তাকে উত্তরপ্রদেশেও দেখা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
তার খোঁজ ভারতের চার রাজ্যে অভিযান চলার পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশ নেপালেও অনুসন্ধান চলছে। নেপাল ইতোমধ্যে অমৃতপাল সিংকে তাদের নজরদারির তালিকায় রেখেছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
অমৃতপাল খালিস্তান বা শিখদের জন্য একটি আলাদা মাতৃভূমিকে সমর্থন করেন। পাঞ্জাবে তার দ্রুত উত্থান ১৯৮০’র দশকে খালিস্তান বিদ্রোহের স্মৃতিই পুনরুজ্জীবিত করেছে। যে বিদ্রোহ কেড়ে নিয়েছিল হাজারো মানুষের প্রাণ।
অমৃতপাল ও তার সমর্থকদের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টা, আইনপ্রয়োগে বাধাদান এবং অস্থিরতা তৈরির অভিযোগ করেছে পুলিশ।
গত ফেব্রুয়ারিতে অমৃতপালের সমর্থকরা তাদের এক সতীর্থর মুক্তির দাবিতে একটি পুলিশ স্টেশনে হাঙ্গামা করার কয়েক সপ্তাহ পর গত ১৮ মার্চ পুলিশ খালিস্তানপন্থি এই নেতাকে প্রথম গ্রেপ্তার করতে তৎপর হয়। আনা হয় অভিযোগ।
কিন্তু শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী এই নেতাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা সফল হয়নি। শুরু থেকেই ধরা ছোঁয়ার বাইরে আছেন তিনি। গত ২৪ মার্চের গণমাধ্যম রিপোর্টে বলা হয়েছিল, তাকে রাজধানী দিল্লিতে দেখা গেছে।
সিসি ক্যামেরায় ফুটেজে দেখা যায়, অমৃতপাল সিং মাথায় পাগড়ি ছাড়া ঘুরে বেড়াচ্ছেন। পরনে ছিল একটি জ্যাকেট, চোখে সানগ্লাস। হরিয়ানা হয়ে অমৃতপাল সিং ও তার এক সহযোগী দিল্লি গিয়েছিলেন বলে শোনা যায়।
এরপর দিল্লি ও পাঞ্জাব পুলিশ তার খোঁজে রাজধানী এবং এর সীমান্ত এলাকাগুলোতে তল্লাশি শুরু করে এবং অমৃতপালের সমর্থক সন্দেহে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে।
পরে হরিয়ানায় এক নারীর বাড়িতে অমৃতপালের আশ্রয় নেওয়ার খবর পাওয়া যায় এবং গত ২৬ মার্চে ওই নারীকে গ্রেপ্তার করার পর জিজ্ঞসাবাদে তার সঙ্গে অমৃতপালের সম্পৃক্ততার বিষয়টি বেরিয়ে আসে। পুলিশের প্রকাশিত সিসিটিভি ফুটেজেও অমৃতপালকে ছাতায় মুখ ঢেকে হরিয়ানার ওই নারীর বাড়ি থেকে পালাতে দেখা যায়।
একই সময়ে কয়েকটি খবরে বলা হয়, অমৃতপাল সিং উত্তরাখণ্ডে পালিয়ে গিয়ে থাকতে পারেন। তবে পাঞ্জাব পুলিশ খবরটি নিশ্চিত করে জানায়নি।
তাহলে কোথায় গা ঢাকা দিয়েছেন অমৃতপাল? সেটি কেউ জানে বলে মনে হয় না। তবে পুলিশ গত ১০ দিনের অভিযানে কয়েকজন পালের গোদার হদিস পেয়েছে বলে দাবি করেছে এবং তাদেরকে অনুসরণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে।
ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকা জানায়, পুলিশ গোপন সূত্রে খবর পেয়েছিল, পাঞ্জাবের ফাগওয়ারা থেকে হোসিয়ারপুরে সড়কপথে একটি সাদা ইনোভা গাড়িতে ভ্রমণ করছেন অমৃতপাল। সেই খবর পেয়ে পুলিশ পিছু নেয় সেই গাড়ির।
ইনোভা গাড়িটিকে অনুসরণ করছিল আরও একটি গাড়ি। হোসিয়ারপুর যাওয়ার পথে পুলিশের একটি চেকপোস্ট নির্বিঘ্নে পেরিয়ে মেহতিয়ানায় একটি গুরুদ্বারের কাছে দাঁড়ায় অমৃতপালের গাড়ি।
হোসিয়াপুরের সিআইডি জানায়, গুরুদ্বারের কাছে গাড়িটি রেখে দিয়ে পালিয়ে যান অমৃতপাল ও তার সঙ্গীরা। তল্লাশি চালিয়ে অমৃতপালের দুই সঙ্গীকে আটক করে পুলিশ। দু’জনই অমৃতপালের গাড়িকে অনুসরণ করছিলেন।
পুলিশ মনে করছে, হোসিয়ারপুরেই আত্মগোপন করে আছেন অমৃতপাল। গত মঙ্গলবার রাত থেকেই হোসিয়ারপুরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। পুলিশ সূত্রে বলা হচ্ছে, হোসিয়ারপুরের মারনাইগ্রাম গ্রামে আত্মগোপন করে থাকতে পারেন খলিস্তানপন্থি নেতা।