চীনে কোভিড সংক্রমণ ‘চূড়ায় থাকবে ২-৩ মাস, পরবর্তী আঘাত গ্রামে’

দেশটির চান্দ্র নববর্ষের ছুটিতে কোটি কোটি লোক বাড়ি যাওয়া শুরু করলে গ্রামাঞ্চলে সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি দেখা যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Jan 2023, 10:39 AM
Updated : 13 Jan 2023, 10:39 AM

চীনে কোভিড-১৯ সংক্রমণের ঢেউয়ের চূড়া দুই থেকে তিন মাস পর্যন্ত স্থায়ী হবে এবং প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের দাপট শিগগিরই বিস্তৃত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা চীনের এক শীর্ষ মহামারী বিশেষজ্ঞের।

দেশটির চান্দ্র নববর্ষের ছুটিতে কোটি কোটি লোক বাড়ি যাওয়া শুরু করলে বিস্তৃত গ্রামাঞ্চলে সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি দেখা যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।

চলতি মাসের ২১ জানুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে চান্দ্র নববর্ষের ছুটি শুরু হতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

মহামারী শুরুর আগে এ ছুটিতে মানুষের এক অঞ্চল থেকে আরেক অঞ্চলে ছোটা ও পরে ফিরে আসা বিশ্বের সর্ববৃহৎ বাৎসরিক অভিবাসন হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিল।

নভেম্বরে বিরল বিক্ষোভের জের ধরে চীন গতমাসে তড়িঘড়ি করেই লকডাউনসহ তাদের কোভিড সংক্রান্ত সব কঠোর বিধিনিষেধ তুলে নেয়; গত রোববার থেকে তারা সীমান্তও পুরোপুরি খুলে দিয়েছে।

তড়িঘড়ি বিধিনিষেধ প্রত্যাহার চীনের ১৪০ কোটি বাসিন্দাকে প্রাণঘাতী ভাইরাসটিতে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকিতে ফেলে দিয়েছে।

এই ১৪০ কোটি বাসিন্দার এক তৃতীয়াংশের বেশি এমন অঞ্চলগুলোতে আছেন, যেখানে সংক্রমণ এরই মধ্যে চূড়া অতিক্রম করেছে, বলেছে চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম।

কিন্তু প্রাদুর্ভাবের সবচেয়ে খারাপ অংশ এখনও অতিক্রান্ত হয়নি বলে চীনের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের সাবেক প্রধান মহামারী বিশেষজ্ঞ জেং গুয়াং সতর্ক করেছেন বলে বৃহস্পতিবার দেশটির স্থানীয় গণমাধ্যম কাইজিনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

“আমাদের নজর এতদিন ছিল বড় বড় শহরগুলোর দিকে। এখন সময় হয়েছে নজর গ্রামাঞ্চলের দিকে দেওয়ার,” জেং এমনটাই বলেছেন বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

এই মহামারী বিশেষজ্ঞের মতে, চীনের বিস্তৃত গ্রামাঞ্চলে চিকিৎসা সুবিধা তুলনামূলক দুর্বল, সেখানকার বিপুল সংখ্যক মানুষ, বিশেষ করে বৃদ্ধ, অসুস্থ ও প্রতিবন্ধীরা এখন কোভিডের ভয়াবহ ঝুঁকির মুখে পড়বেন।

চীনা কর্তৃপক্ষ বলছে, দেশজুড়ে ভাইরাসরোধী ওষুধের সরবরাহ বাড়াতে তারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। মার্ক অ্যান্ড কো’র কোভিড চিকিৎসার ওষুধ মোলনুপিরাভির শুক্রবার থেকেই চীনে পাওয়া যাবে বলেও আশা করা হচ্ছে।

কয়েকদিন আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও (ডব্লিউএইচও) দীর্ঘপথ ভ্রমণকারীদের মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করার নিয়ম চালু করতে দেশগুলোকে তাগাদা দিয়েছে।

জাতিসংঘের এই সংস্থাটি বলছে, চীন এখন আগের তুলনায় কোভিড প্রাদুর্ভাব সম্পর্কিত বেশি তথ্য দিলেও তাদের হিসাবে মৃত্যুর আসল চিত্র উঠে আসছে না।

তবে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, তারা কোভিডের ব্যাপারে স্বচ্ছ এবং গত মাস থেকে তাদের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা ডব্লিউএইচও-র সঙ্গে ৫ দফা কৌশলগত তথ্য বিনিময় করেছেন।

দেশটির স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষগুলো গত এক মাস ধরে প্রতিদিন কোভিডে ৫ জন বা তার কম মৃত্যুর তথ্য দিলেও তার সঙ্গে শবাগারগুলোতে দেখা দীর্ঘ সারি কিংবা হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে আসা বিপুল সংখ্যক মৃতদেহবাহী ব্যাগের মিল পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

Also Read: ছড়াচ্ছে কোভিডের নতুন উপধরণ, ভ্রমণকারীদের মাস্ক ব্যবহারের তাগিদ ডব্লিউএইচও’র

সোমবার থেকে দেশটি কোভিডে প্রতিদিন কতজনের মৃত্য হচ্ছে সে তথ্যও দিচ্ছে না। ডিসেম্বরেই অবশ্য চীনের কর্মকর্তারা দৈনিক শনাক্ত-মৃত্যুর তথ্যের বদলে মাসিকভিত্তিতে তথ্য দেওয়ার পরিকল্পনা কার্যকরে তাদের আগ্রহ ব্যক্ত করেছিলেন।

আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা চীনে এ বছর কোভিডে অন্তত ১০ লাখ মানুষের মৃত্যু হবে বলে ধারণা করছেন। আর চীন মহামারীর শুরু থেকে এখন পর্যন্ত কোভিডে ৫ হাজারের কিছু বেশি মানুষের মৃত্যুর কথা জানিয়েছে, যা বিশ্বের বেশিরভাগ দেশের থেকেই অনেক কম।