‘ই-নাগেটস’ নামে এই মোবাইল গেইমিং অ্যাপের মাধ্যমে গ্রাহকদের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে কলকাতার ব্যবসায়ী আমির খানের বিরুদ্ধে।
Published : 11 Sep 2022, 11:48 AM
ভারতের আর্থিক খাতের সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের কর্মকর্তারা কলকাতার ব্যবসায়ী আমির খানের বাসায় ঢুকেছিলেন শনিবার সকালে, প্রায় সাড়ে ১৪ ঘণ্টা পর বেরিয়ে এসে ১৭ কোটি ৩২ লাখ রুপি উদ্ধারের খবর দিয়েছেন তারা।
তদন্তকারীরা বলছেন, ‘ই-নাগেটস’ নামে এই মোবাইল গেইমিং অ্যাপের মাধ্যমে গ্রাহকদের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ আছে আমির খানসহ আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে।
সেই অভিযোগেই কলকাতার গার্ডেনরিচের শাহি আস্তাবল গলিতে আমিরের বাড়ি, পার্ক স্ট্রিট, মোমিনপুরের বন্দর এলাকা, নিউটাউনে তার অফিসসহ ছয় জায়গায় একযোগে অভিযান চালিয়ে আরও কয়েক কোটি রুপি উদ্ধারের কথা জানিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় এই তদন্তকারী সংস্থা। এই ব্যবসায়ীর বিপুল পরিমাণ সম্পত্তিরও হদিস মিলেছে ইডির তদন্তে।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, শনিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে শুরু করে ইডি কর্মকর্তাদের অভিযান শেষ হয় রাত ১১টা নাগাদ।
টাকা উদ্ধারের পর আমিরের পরিবারের সদস্য এবং ওই বাড়িতে থাকা লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন ইডি কর্মকর্তারা। এছাড়া ওই অর্থের উৎসও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে আনন্দবাজার জানিয়েছে।
গার্ডেনরিচের ব্যবসায়ী নিসার আহমেদ খানের ছেলে আমির খানের বিরুদ্ধে চলতি বছরের শুরুর দিকে মামলা হয় পার্ক স্ট্রিট থানায়। সেখানে ভারতীয় দণ্ডবিধির আওতায় প্রতারণা, বিশ্বাসভঙ্গসহ বিভিন্ন অভিযোগ আনা হয়।
তল্লাশির চিত্র
ইডি কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে ভারতীয় পত্রিকাগুলো লিখেছে, গার্ডেনরিচের শাহি আস্তাবল গলিতে আমির খানের ওই সাদামাটা দোতলা বাড়িতে তল্লাশি শুরু হয়।
ঘণ্টাখানেকের মধ্যে খাটের নিচসহ বাসার বিভিন্ন জায়গা থেকে পলিথিনে মোড়ানো ৫০০ ও দু হাজার রুপির বান্ডিল বান্ডিল নোট বেরিয়ে আসতে থাকে।
এক পর্যায়ে রুপি গুণতে স্টেট ব্যাংক অব ইনডিয়ার কর্মীরা আটটি যন্ত্র নিয়ে আসেন। সেই রুপি নিতে বাড়ির সামনে শুরুতে দশটি স্ট্রিলের ট্রাঙ্ক ভর্তি ট্রাক আনা হয়। রাতের দিকে আরও কয়েকটি অতিরিক্ত ট্রাঙ্ক লাগে।
গণনা শেষে রাত ১১টার পর শুধুমাত্র গার্ডেনরিচের বাড়ি থেকেই উদ্ধার করা ১৭ কোটি ৩২ লাখ রুপি ওই ট্রাঙ্কলোতে ভরে নিয়ে যান ইডি কর্মকর্তারা।
অভিযানের পুরোটা সময় কেন্দ্রীয় রিজার্ভ পুলিশের সদস্যরা বাড়ির বাইরে সতর্ক অবস্থায় ছিলেন।
যেভাবে প্রতারণা
ইডি কর্মকর্তারা জানান, আমিরের বিরুদ্ধে করা অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নেমে তারা জানাতে পারেন, গ্রাহকদের অর্থ হাতানোর জন্যই মূলত ‘ই-নাগেটস’ নামের ওই মোবাইল গেইমিং অ্যাপটি তৈরি করা হয়।
শুরুর দিকে আর পাঁচটা সাধারণ গেইমিং অ্যাপের মতোই চলত। অ্যাপের মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের ওয়ালেটে কমিশন হিসেবে অর্থ দেওয়া হত। নিজের ইচ্ছামত সময়ে সেই টাকা সহজেই তুলে নিতে পারতেন ব্যবহারকারীরা। ফলে শুরুতে কারও মনে সন্দেহ ছিল না।
গ্রাহক যখন নিশ্চিন্ত মনে আরও বেশি টাকা ওই গেইমিং অ্যাপে ব্যবহার করতে শুরু করতেন, তখনই শুরু হত প্রতারণা। হঠাৎ ওয়ালেট থেকে টাকা তোলার সুযোগ বন্ধ করে দেওয়া হত। বলা হত ‘সিস্টেম আপগ্রেড’ করার জন সাময়িক সমস্যা। কিন্তু এক পর্যায়ে অ্যাপের সার্ভার থেকে গ্রাহকের প্রফাইলসহ সকল তথ্যও মুছে ফেলা হত।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ইডি জানিয়েছে, আমির খানের বাড়ি থেকে যেসব নথিপত্র উদ্ধার হয়েছে, তাতে বেনামে একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্টেরও খোঁজ পাওয়া গেছে।