বাখমুতে ফসফরাস বোমা ব্যবহার করছে রাশিয়া, অভিযোগ ইউক্রেইনের

সাদা ফসফরাসমৃদ্ধ যুদ্ধাস্ত্র নিষিদ্ধ নয়, তবে বেসামরিক এলাকায় এর ব্যবহার যুদ্ধাপরাধ হিসেবে গণ্য হতে পারে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 May 2023, 07:20 AM
Updated : 7 May 2023, 07:20 AM

অবরুদ্ধ বাখমুত শহরে রাশিয়া ফসফরাস বোমা দিয়ে হামলা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে ইউক্রেইন।

কিইভের সামরিক বাহিনীর প্রচারিত ড্রোন ফুটেজে বোমায় বাখমুতকে জ্বলতে দেখা গেছে, মনে হয়েছে যেন সাদা ফসফরাস বৃষ্টির মতো শহরটির ওপর আছড়ে পড়ছে।

সাদা ফসফরাসমৃদ্ধ যুদ্ধাস্ত্র নিষিদ্ধ নয়, তবে বেসামরিক এলাকায় এর ব্যবহার যুদ্ধাপরাধ হিসেবে গণ্য হতে পারে, বলেছে বিবিসি।

এই সাদা ফসফরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে সক্ষম এমন আগুন সৃষ্টি করতে পারে, যা নিয়ন্ত্রণে আনা অত্যন্ত কঠিন। রাশিয়া এর আগেও এই ধরনের যুদ্ধাস্ত্র ব্যবহার করেছে বলে অভিযোগ আছে।

মস্কো গত কয়েক মাস ধরেই বাখমুত দখলে নেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে, যদিও শহরটির কৌশলগত গুরুত্ব নিয়ে পশ্চিমা সমরবিদদের প্রশ্ন আছে।

এই শহর দখলে নেওয়ার চেষ্টায় কয়েক হাজার রুশ সেনা প্রাণ দিয়েছে বলেও অনুমান যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্রদের। 

ইউক্রেইনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় টুইটারে লিখেছে, আগুন ধরে যায় এমন যুদ্ধাস্ত্রের মাধ্যমে বাখমুতের বেদখল এলাকায় হামলা চালায় রাশিয়া।

কখন এই হামলা হয়েছে তা স্পষ্ট নয়। তবে ইউক্রেইনের দেওয়া ফুটেজে বেশ কয়েকটি সুউচ্চ ভবনকে আগুনে পুড়তে দেখা গেছে। ফুটেজটি নজরদারি ড্রোন থেকে নেওয়া হয়েছে বলেই অনুমান বিবিসির।

অন্যান্য ভিডিওতে মাটিতে আগুন জ্বলতে এবং রাতের আকাশকে আলোকিত করা সাদা মেঘ দেখা গেছে।

বিবিসির পর্যালোচনা বলছে, ইউক্রেইনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দেওয়া ফুটেজে বাখমুতের যে অংশকে জ্বলতে দেখা গেছে, সেটি সিটি সেন্টারের খানিকটা পশ্চিমে এবং একটি শিশু হাসপাতালের নিকটে; ওই হামলায় আগুন ধরাতে সক্ষম এমন যুদ্ধাস্ত্র ব্যবহৃত হয়েছে বলে ধারণা মিললেও সেটি ফসফরাস কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

সাদা ফসফরাস বেশ বিপজ্জনক হলেও এটি বিপজ্জনক যুদ্ধাস্ত্রের তালিকায় নেই বলে দাবি হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ)।

তবে অনেক বিশ্লেষক বলেন, বেসামরিক এলাকার কাছে দাহ্য অস্ত্র ব্যবহার অবৈধ হিসেবে গণ্য হতে পারে।

তবে যুদ্ধের আগে ৮০ হাজার বাসিন্দার শহর বাখমুত এখন কার্যত জনশূন্য, যে কারণে মস্কোর এই অস্ত্র ব্যবহারে তেমন বাধা দেখা যাচ্ছে না।

ফসফরাস নিয়ে ইউক্রেইনের অভিযোগের আগের দিনই বাখমুতে যুদ্ধ করা রাশিয়ার ওয়াগনার আধাসামরিক গ্রুপের কমান্ডার ইয়েভগেনি প্রিগোজিন গোলাবারুদ সংক্রান্ত জটিলতায় তার বাহিনী ১০ মে-র মধ্যেই শহরটি ছেড়ে দেবে বলে জানিয়েছিলেন।

প্রিগোজিন বলেছিলেন, পর্যাপ্ত গোলাবারুদ না থাকায় ওয়াগনারের প্রাণহানি প্রতিদিন ‘জ্যামিতিক হারে বাড়ছে’। এই গোলাবারুদ না পাওয়ার দায় রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কেও দিয়েছেন তিনি।

শনিবার প্রিগোজিন বলেছেন, রাশিয়ার আধা-স্বায়ত্তশাসিত চেচনিয়া অঞ্চলের নেতা রমজান কাদিরভ তার বাহিনীকে ওয়াগনারের স্থলাভিষিক্ত হিসেবে বাখমুতে পাঠাতে রাজি হয়েছেন।

“আমি তার প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলেছি, যেন দ্রুত স্থানান্তর প্রক্রিয়া শুরু করা যায়,” বলেছেন ওয়াগনার কমান্ডার।

তবে প্রিগোজিন এ কথা বললেও, ৯ মে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জয়লাভের স্মরণে রাশিয়ায় বিজয় দিবস পালনের আগেই বাখমুতের দথল নিতে ওয়াগনার উল্টো বিভিন্ন ফ্রন্ট থেকে তাদের সেনাদের বাখমুতে জড়ো করছে বলে ভাষ্য ইউক্রেইনীয় কর্মকর্তাদের।

বাখমুতের এই লড়াইয়ের পাশাপাশি ইউক্রেইনের আসন্ন পাল্টা-আক্রমণ নিয়েও জল্পনা কল্পনা চলছে। কিইভ ১৫ মে নাগাদ ওই পাল্টা আক্রমণ করতে পারে বলে অনুমান প্রিগোজিনের।

কিইভ এবার জাপোরিজিয়া অঞ্চলে এই পাল্টা আক্রমণ চালাতে পারে বলে মনে হচ্ছে; অঞ্চলটির ৮০ শতাংশই রাশিয়ার দখলে।

শুক্রবার রাশিয়া নিযুক্ত জাপোরিজিয়ার গভর্নর যুদ্ধক্ষেত্রের কাছাকাছি গ্রামগুলো খালি করে দিতে বেসামরিকদের নির্দেশও দিয়েছেন।