গাজায় জাতিসংঘ সংস্থার কার্যালয়ের নিচে হামাসের সুড়ঙ্গ পাওয়ার দাবি ইসরায়েলের

ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরে ইউএনআরডব্লিউএ-র বিরুদ্ধে হামাসকে সহযোগিতা করার অভিযোগ করে আসছে।

রয়টার্স
Published : 11 Feb 2024, 08:51 AM
Updated : 11 Feb 2024, 08:51 AM

গাজায় নতুন করে হামাসের একটি সুড়ঙ্গ নেটওয়ার্ক খুঁজে পাওয়ার দাবি করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। যেটি কয়েশ মিটার দীর্ঘ এবং সেটির কিছু অংশ গাজায় অবস্থিত জাতিসংঘের ফিলিস্তিন ত্রাণ সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ-র সদরদপ্তরের নিচে দিয়ে গেছে বলেও দাবি তাদের।

ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরে ইউএনআরডব্লিউএ-র বিরুদ্ধে হামাসকে সহযোগিতা করার অভিযোগ করে আসছিল। নতুন আবিষ্কার হওয়া সুড়ঙ্গটিকে তারা তাদের সেই দাবির পক্ষে প্রমাণ বলছে।

এর আগে ইসরায়েল ইউএনআরডব্লিউএ- এর কয়েকজন কর্মচারীর বিরুদ্ধে গতবছর ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে ঢুকে হামাসের হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগ করে।

ইসরায়েলের ওই অভিযোগের পর যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ইতালি, অস্ট্রেলিয়া, ফিনল্যান্ড,নেদারল্যান্ডস ও কানাডা ইউএনআরডব্লিউ সংস্থায় তহবিল বন্ধের ঘোষণা দেয়।

তখন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস তাদের তহবিল বন্ধ না করার অনুরোধ করে বলেছিলেন, সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে জড়িত যে কোনো জাতিসংঘ কর্মীকে এর জন্য দায়ী করে তার বিচার অবশ্যই করার হবে।

ইসরায়েল ইউএনআরডব্লিউএ- এর বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে বলে সে সময় অভিযোগ করেছিল ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ। প্রায় ১৩ হাজার কর্মীর সাহায্যে গাজায় প্রাণরক্ষাকারী ত্রাণ বিতরণ করে যাচ্ছে ইউএনআরডব্লিউএ।

ইসরায়েলি বাহিনী জানিয়েছে, নতুন করে খুঁজে পাওয়া সুড়ঙ্গটি প্রায় ৭০০ মিটার দীর্ঘ এবং ১৮ মিটার গভীর। সুড়ঙ্গের ভেতর অফিসের মত একটি জায়গা রয়েছে। যেখানে স্টিলের একাধিক আলমারি আছে, যেগুলো খোলা এবং খালি। এছাড়া, টাইল করা একটি শৌচাগারও রয়েছে। বড় একটি চেম্বারে কম্পিউটারের সার্ভার রাখা, আরেকটিতে বড় বড় ব্যাটারি রয়েছে।

সুড়ঙ্গের বিষয়ে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর লেফটেনেন্ট কর্নেল আইডো বলেন, “এখান থেকেই সবকিছু পরিচালিত হয়। সুড়ঙ্গের জন্য সমস্ত শক্তি, এখান দিয়ে হেঁটে যেতে যেতে আপনি যা কিছু দেখছেন তার সবই এখান থেকে চালিত হয়।

“এটি গোয়েন্দা সংস্থার কেন্দ্রীয় কমান্ডগুলির মধ্যে একটি। এই স্থানটি হামাসের গোয়েন্দা ইউনিটগুলির মধ্যে একটি, যেখান থেকে তারা বেশিরভাগ যুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছে।”

ইসরায়েলি অগ্রগতির মুখে হামাস সুড়ঙ্গটি থেকে সরে গেছে বলে ধারণা প্রকাশ করেন এই কর্মকর্তা। বলেন, তারা যোগাযোগের তারগুলি কেটে ফেলেছে, যা মাটির উপরিভাগের দিকে উঠে গেছে। তিনি দেখান, সুড়ঙ্গটি ইউএনআরডব্লিউএ সদর দপ্তরের বেসমেন্টের মেঝে নিচ দিয়ে চলে গেছে।

এ বিষয়ে এক বিবৃতিতে ইউএনআরডব্লিউএ বলেছে, গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পাঁচ দিন পর গত ১২ অক্টোবর তারা তাদের ওই সদরদপ্তরটি খালি করে দেয়। এবং সেখানে ইসরায়েল যা খুঁজে পাওয়ার দাবি করছে যে বিষয়ে ‘কোনো কিছু নিশ্চিত করা বা অন্যকোনো মন্তব্য করা তাদের পক্ষে সম্ভব না’।

“ইউএনআরডব্লিউএ এর কাছে কোনো সামরিক বা নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ নেই বা তাদের এমন কোনো সক্ষমতা নেই যার মাধ্যমে তারা তাদের কার্যালয় প্রাঙ্গনের নিচে কি আছে বা কি থাকতে পারে সে বিষয়ে সামরিক পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা করতে পারে।”

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, অতীতে, যখনই ইউএনআরডব্লিউএ প্রাঙ্গণের কাছাকাছি বা নীচে সন্দেহজনক গহ্বর পাওয়া গেছে, গাজার প্রশাসন (হামাস) এবং ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ উভয়সহ সংঘর্ষে লিপ্ত পক্ষগুলিকে অবিলম্বে প্রতিবাদ পত্র দাখিল করা হয়েছে।"

ইউএনআরডব্লিউএ-র সমর্থকরা বলছেন, এটাই একমাত্র সংস্থা যারা চরম মানবিক বিপর্যকর পরিস্থিতির মধ্যে থাকা ফিলিস্তিনিদের ত্রাণ সহায়তা দিচ্ছে।

আইডো বলে, “আমরা জানি তাদের (হামাস) লোকজন ইউএনআরডাব্লিউএ তে কাজ করছে। আমরা চাই প্রতিটি আন্তর্জাতিক সংস্থা গাজায় কাজ করুক। আমাদের জন্য সেটা কোনো সমস্যা না। আমাদের সমস্যা হচ্ছে হামাস।”