ফ্লাইট সূচিতে জট, বিপর্যস্ত যুক্তরাষ্ট্রের বিমান চলাচল

বিমান পরিচালনা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় বিভ্রাটে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে; তবে এটা সাইবার হামলা নয় বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Jan 2023, 02:53 PM
Updated : 11 Jan 2023, 02:53 PM

বিমান পরিচালনা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় বিভ্রাটে কয়েক ঘণ্টার অচলাবস্থা কাটিয়ে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে উড়োজাহাজ চলাচল পুনরায় শুরু হলেও লেগেছে ভয়াবহ জট।

ফ্লাইটের এই জট কাটিয়ে সবকিছু সম্পূর্ণ স্বাভাবিক হতে শুক্রবার পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পরে বলে জানিয়েছেন অ্যালাইড পাইলট অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ক্যাপ্টেন ক্রিস টরেস।

তিনি রয়টার্সকে বলেন, ‘‘স্থানীয় সময় সকাল ৯টায় গ্রাউন্ড স্টপ তুলে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে ৯টা থেকেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে। এটার কারণে একটির সঙ্গে সংযুক্ত আরেকটি সমস্যা মিলিয়ে একগুচ্ছ সমস্যা তৈরি হয়েছে।

‘‘বিশেষ করে এই বিলম্বের কারণে ফ্লাইট সূচিতে যে জট লেগেছে সেটার জের শুক্রবার পর্যন্ত থাকবে। খারাপ আবহাওয়ার কারণ বিমান চলাচল বিঘ্নিত হলে যে ধরণের প্রভাব পড়ে এক্ষেত্রে অনেকটা তেমন প্রভাবই পড়বে।”

অ্যালাইড পাইলট অ্যাসোসিয়েশনের পাইলটরা যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বৃহৎ এয়ার লাইন আমেরিকান এয়ারলাইন্সের হয়ে কাজ করেন।

স্থানীয় সময় (ইটি) বুধবার প্রথম প্রহরের দিকে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লাইট নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার নোটিস টু এয়ার মিশন-এনওটিএএম সিস্টেম ধসে (ক্রাশ) পড়ে।

ফলে সেখান থেকে পাইলটদের বারবার ‘ফ্লাইট রুটে সম্ভাব্য বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করা শুরু হয়’।

সংকট সমাধানে স্থানীয় সময় রাত ২টার দিকে এফএএ পুরো সিস্টেম ‘রিসেট’ দিতে বাধ্য হয় বলে রয়টার্সকে জানান কর্মকর্তারা।

ওই সময় আকাশে থাকা ফ্লাইটগুলোকে নিজ নিজ গন্তব্যে চলে যেতে বলা হয় এবং এয়ার লাইনগুলোতে তাদের সব অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটের উড্ডয়ন বন্ধ রাখার নির্দেশ জারি হয়।

ফ্লাইটঅ্যাওয়ার ওয়েবসাইটের তথ্যানুযায়ী, এই গোলযোগের কারণে এখন পর্যন্ত সাত হাজার ৩০০ ফ্লাইট বিলম্বিত হয়েছে এবং প্রায় ১১০০ ‍হাজার ফ্লাইট বাতিল হয়েছে।

রাত নয়টা থেকে বিমান চলাচল ব্যবস্থা স্বাভাবিক হতে শুরু করলেও ফ্লাইট সূচিতে জটের কারণে এখনো ফ্লাইট দেরিতে ছাড়ছে বা বাতিল হচ্ছে। যে কারণে বিলম্বিত ও বাতিল হওয়ার ফ্লাইটের সংখ্যা বাড়ছে।

কী কারণে এনওটিএএম সিস্টেম বা পাইলট-এলার্টিং সিস্টেমে এই গোলযোগ দেখা দিয়েছে তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা বলেছেন, এখন পর্যন্ত তারা ‘সাইবার হামলার’ কোনো প্রমাণ পাননি।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এ ঘটনায় পূর্ণাঙ্গ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

বড়দিন ও নতুন বছর উপলক্ষে লম্বা ছুটি কাটিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ কাজে ফিরেছেন। ফলে বছরের এই সময়ে ভ্রমণের চাপ কিছুটা কম থাকে। কিন্তু কোভিড-১৯ এর বিধিনিষেধ কাটিয়ে অনেক দেশে নিজেদের সীমান্ত খুলে দেওয়ার কারণে এ বছর এই সময়েও ভ্রমণকারীদের চাপ রয়েছে বলে জানায় বিবিসি।

বুধবার স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৮টার কিছুক্ষণ আগে নিউয়ার্ক এবং আটলান্টা বিমানবন্দরে উড়োজাহাজ চলাচল শুরু করার মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পুনরায় বিমান চলাচল কার্যক্রম স্বাভাবিক হওয়া আরম্ভ করে।

তখন এক বিবৃতিতে এফএএর পক্ষে থেকে সকাল ৯টার মধ্যে সব বিমানবন্দরে উড়োজাহাজ চলাচল স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়েছিল।

কিন্তু অনেক বিমানবন্দরে নানামুখী সমস্যা দেখা দিয়েছে বলে জানায় রয়টার্স।

এখন বিমানবন্দরগুলোকে যেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হচ্ছে তার অন্যতম একটি হচ্ছে, ভিড়পূর্ণ ফটক দিয়ে উড়োজাহাজগুলোকে ভেতরে ঢোকানো এবং বাইরে বের করে আনা।

বুধবারের বিভ্রাটের কারণে শুধু যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট চলাচল ব্যাহত হয়েছে, তা নয়; বরং আন্তর্জাতিক অনেক ফ্লাইটকেও এর জের টানতে হচ্ছে।

এয়ার কানাডা জানিয়েছে, বুধবারের গোলযোগের কারণে তাদের আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চলাচলও ব্যাহত হয়েছে।

তবে কী মাত্রায় ব্যাহত হয়েছে তা তারা জানাননি। তারা বলেছেন, এ সংকটে তারা তাদের ‘গুডউইল পলিসি’ কার্যকর করবেন। যাতে ক্ষতিগ্রস্ত যাত্রীরা চাইলে তাদের ভ্রমণ পরিকল্পনা পরিবর্তন করার সুযোগ পান।

প্যারিসের দুটি বিমানবন্দর থেকে জানানো হয়েছে, তাদের যুক্তরাষ্ট্রগামী ফ্লাইট ছাড়তে বিলম্ব হবে বলে তারা ধারণা করছেন।

এয়ার ফ্রান্স জানিয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের পরিস্থিতি গভীর মনযোগে লক্ষ্য করছে।

তবে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ তাদের যাত্রীদের জানিয়েছে, তারা তাদের যুক্তরাষ্ট্রগামী এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা ফ্লাইট যথা সূচি অনুযায়ী পরিচালনা করবে।

জার্মানির লুফৎহান্সা এবং স্পেনের ইবেরিয়া এয়ার লাইন্স থেকে জানানো হয়েছে, এখন পর্যন্ত তাদের যুক্তরাষ্ট্রগামী এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে ছেড়ে আসা ফ্লাইট সূচি স্বাভাবিক আছে।