গণভোটের ফল ‘পক্ষে’, ইউক্রেইনের ৪ অঞ্চল রাশিয়ায় যোগ হচ্ছে

“যে প্রহসন হয়েছে তাতে একে এমনকি নকল গণভোটও বলা যাবে না,” বলেছেন ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Sept 2022, 10:01 AM
Updated : 28 Sept 2022, 10:01 AM

ইউক্রেইনের যে চার অঞ্চল এখন রাশিয়া ও তার মিত্রদের দখলে আছে সেখানে ৫ দিন ধরে চলা গণভোটে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পক্ষে ‘বিপুল জনরায়’ এসেছে বলে জানিয়েছেন ওই এলাকাগুলোর মস্কোপন্থি প্রশাসনের কর্মকর্তারা। 

গণভোটের ফল পক্ষে আসায় রাশিয়া স্বল্প সময়ের মধ্যেই ওই অঞ্চলগুলো নিজেদের ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করার উদ্যোগ নেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

লুহানস্ক, দোনেৎস্ক, জাপোরিঝিয়িা ও খেরসনকে ভূখণ্ডভুক্ত করতে রাশিয়ার এ বেপরোয়া মনোভাবের পাল্টায় যুক্তরাষ্ট্র সেখানে অনুষ্ঠিত গণভোটকে ‘কলঙ্কজনক’ অ্যাখ্যা দিয়ে জাতিসংঘে নিন্দাপ্রস্তাব আনার পরিকল্পনা করছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মস্কো ইউক্রেইনের ওই ৪ অঞ্চলের আনুষ্ঠানিক নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পরপর তাদের ওপর আরেক দফা নিষেধাজ্ঞা এবং ইউক্রেইনকে ১১০ কোটি ডলারের অস্ত্র সহায়তা দিতেও ওয়াশিংটন প্রস্তুতি নিচ্ছে।

এদিকে রাশিয়ার দুটি জ্বালানি পাইপলাইনে বড় ধরনের লিকের পেছনে নাশকতা, জার্মানি, সুইডেন ও ডেনমার্ক এমনটা বলার পর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র এবং এর মিত্ররা ইউরোপের জ্বালানি নিরাপত্তার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। গ্যাস পাইপলাইনে নাশকতায় কারা, তা এখনও অস্পষ্ট।

প্রায় ৭ মাসের যুদ্ধের পর গত ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে শিল্পসমৃদ্ধ দনবাস যে দুটি প্রদেশ নিয়ে ‍গঠিত, সেই দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক এবং জাপোরিঝিয়া ও খেরসনে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার প্রশ্নে গণভোট শুরু হয়েছিল। মঙ্গলবার সেটি শেষ হয়। এই ৪ অঞ্চল ইউক্রেইনের মোট ভূখণ্ডের প্রায় ১৫ শতাংশ।

গণভোটের যে ফল প্রকাশিত হয়েছে, তাতে অঞ্চলভেদে ভোটের ৮৭ শতাংশ থেকে ৯৯ দশমিক ২ শতাংশই রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার প্রশ্নে ‘হ্যাঁ’ বলেছে।

গণভোটের এই ফল রাশিয়ার পার্লামেন্ট আগামী ৪ অক্টোবর বিবেচনা করে দেখতে পারে বলে জানিয়েছেন পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষের প্রধান।

“ফল সুস্পষ্ট। ঘরে, রাশিয়ায় স্বাগতম,” টেলিগ্রামে নিজের উচ্ছ্বাস ব্যক্ত করে লিখেছেন রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট, বর্তমানে দেশটির নিরাপত্তা পরিষদের ডেপুটি চেয়ারম্যান, এখনকার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠ মিত্র দিমিত্রি মেদভেদেভ।

গণভোটের সময় দখলকৃত অঞ্চলগুলোর অনেক এলাকাতেই রুশপন্থি কর্মকর্তারা ব্যালটবাক্স নিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে রায় নিয়েছেন বলে জানা গেছে।

যাকে ইউক্রেইন ও পশ্চিমা দেশগুলো এই গণভোটকে অবৈধ ও জবরদস্তিমূলক আচরণ অ্যাখ্যা দিয়ে বলেছে, নিজেদের দখল হালাল করতে আইনি মোড়ক দিতেই এই ভোট করেছে রাশিয়া।  

“রাশিয়ার দখলে থাকা অঞ্চলগুলোতে যে প্রহসন হয়েছে তাতে একে এমনকি নকল গণভোটও বলা যাবে না,” মঙ্গলবার রাতে দেওয়া ভিডিও ভাষণে বলেছেন ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।

জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের দূত লিন্ডা থমাস-গ্রিনফিল্ড জানিয়েছেন, ইউক্রেইনের ভূখণ্ডের কোনো পরিবর্তনকে স্বীকৃতি না দিতে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর প্রতি আহ্বান এবং রাশিয়াকে সৈন্য প্রত্যাহারে বাধ্য করতে যুক্তরাষ্ট্র শিগগিরই জাতিসঘের নিরাপত্তা পরিষদে একটি প্রস্তাব আনতে যাচ্ছে।

“রাশিয়ার কলঙ্কজনক গণভোট যদি মেনে নেওয়া হয়, তাহলে তা প্যান্ডোরার বাক্স খুলে দেবে, যা আমরা আর বন্ধ করতে পারবো না,” পরিষদের এক বৈঠকে এমনটাই বলেছেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্র এ ধরনের কোনো প্রস্তাব আনলে রাশিয়া চাইলে তার ভিটো ক্ষমতা প্রয়োগ করে ওই উদ্যোগ ভেস্তে দিতে পারে। কিন্তু সেক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র তৎক্ষণাৎ তা সাধারণ পরিষদে নিয়ে যাবে, বলেছেন থমাস-গ্রিনফিল্ড।

“এই অবস্থায়, বন্দুকের মুখে হওয়া কোনো গণভোটই বিন্দুমাত্র অবাধ বা ন্যায্য হতে পারে না,” বলেছেন জাতিসংঘে যুক্তরাজ্যের সহকারী রাষ্ট্রদূতি জেমস কারিউকি।

বৈঠকে জাতিসংঘে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ভেসিলি নেবেনজিয়া বলেন, স্বচ্ছতা এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই এই গণভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে।

রাশিয়া যদি এই ৪ অঞ্চল আনুষ্ঠানিকভাবে নিজেদের ভূখণ্ডভুক্ত করে নেয় তাহলে পুতিন তখন ওই অঞ্চলগুলোর মধ্যে যেখানে যেখানে কিইভবাহিনী আছে তাদেরকে দখলদার হিসেবে দেখানোর সুযোগ পাবেন।

অঞ্চলগুলোতে হামলাকে রাশিয়ার ওপর হামলা হিসেবেও গণ্য করতে পারবেন তিনি।

রাশিয়ার এ প্রেসিডেন্ট গত সপ্তাহে পশ্চিমা দেশগুলোকে হুঁশিয়ার করে বলেছিলেন, রাশিয়ার আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় তিনি পারমাণবিক অস্ত্রও ব্যবহার করতে পারেন।

তবে জেলেনস্কির উপদেষ্টা মিখাইলো পোদোলিয়াক রয়টার্সকে বলেছেন, তারা রাশিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি বা ৪ অঞ্চলে গণভোট নিয়ে মোটেই বিচলিত নন। তারা এখন রাশিয়ার দখলে থাকা এলাকাগুলোতে নিয়ন্ত্রণ পুনঃপ্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা বাস্তবায়নেই বেশি মনোযোগী।

যে ইউক্রেইনীয়রা লুহানস্ক, দোনেৎস্ক, জাপোরিঝিয়া ও খেরসনে গণভোট আয়োজনে সহায়তা করেছে তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ আনা হবে, এবং তাদের অন্তত ৫ বছরের কারাদণ্ডের সাজা হবে। তবে যারা ভোট দিতে বাধ্য হয়েছেন, তাদের শাস্তি হবে না, বলেছেন তিনি।