চীন-তাইওয়ান উত্তেজনার আঁচ জাপানেও

তাইওয়ান উপকূলে যুদ্ধজাহাজ ও জঙ্গি বিমান পাঠানোর পাশাপাশি চীন জাপানের কাছ ঘেঁষেও ড্রোন উড়িয়েছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 August 2022, 05:49 PM
Updated : 5 August 2022, 05:49 PM

মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান সফরকে কেন্দ্র করে ক্ষুব্ধ চীনের সামরিক মহড়ায় উত্তেজনার আঁচ ছড়িয়েছে প্রতিবেশী দেশ জাপানেও।

চীনের মহড়া দিন দিনই আগ্রাসী হয়ে উঠছে, বাড়ছে পরিসর। বৃহস্পতিবার কেবল তাইওয়ান উপকূলের কাছেই নয়, চীনের একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র পড়েছে জাপানের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলেও।

ওই অঞ্চলে চীনের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবারই প্রথম পড়েছে বলে অভিমত জাপানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী নবুও কিশির। জাপান এর প্রতিবাদ জানিয়ে চীনকে সামরিক মহড়া অবিলম্বে বন্ধ করার আহ্বানও জানিয়েছে।

কিন্তু তাতে ক্ষ্যান্ত হয়নি চীন। শুক্রবার চীন তাইওয়ানের কাছ ঘেঁষে যুদ্ধজাহাজ এবং জঙ্গি বিমান পাঠানোর পাশাপাশি জাপানের কাছ ঘেঁষেও চালক বিহীন বিমান (ড্রোন) উড়িয়েছে।

এতে তাইওয়ান প্রণালীতে বাড়তে থাকা উত্তেজনা আরও বিস্তৃত পরিসরে পরিস্থিতিকে উত্তপ্ত করে তোলার হুমকি সৃষ্টি করেছে। উত্তেজনা বাড়তে থাকায় প্রতিরক্ষাবাহিনীকে সতর্কাবস্থায় রাখতে শুরু করেছে জপানও।

জাপানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে শুক্রবার জানানো হয়, চীনের দুটি ড্রোন বৃহস্পতিবারেও জাপানের ওকিনাওয়া অঞ্চলের উপর দিয়ে উড়েছে। এর প্রতিক্রিয়ায় দেশটি তাদের এয়ার সেল্ফ- ডিফেন্স ফোর্সকে সতর্ক অবস্থানে থাকার নির্দেশ দিয়েছে।

ওদিকে, তাইওয়ানের পররাষ্ট্র দপ্তর বলছে, তাইওয়ানের চারপাশে চীনের যুদ্ধজাহাজ ও বিমান মহড়া চলছে। এমনকী চীনের সেনাবাহিনী তাইওয়ান প্রণালীর সীমানা অতিক্রম করেছে অভিযোগ করে একে ‘অত্যন্ত উস্কানিমূলক’ আখ্যা দিয়েছে তাইওয়ান।

এর আগে চীনের ছোড়া ৫ টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র জাপানের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে পড়েছে এবং এতে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নষ্ট হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছিলেন জাপানের কর্মকর্তারা।

চীন উত্তেজনা বৃদ্ধির জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে দোষ দিচ্ছে। মার্কিন স্পিকার পেলোসির উস্কানিমূলক তাইওয়ান সফরের প্রতিক্রিয়ায় এসব পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হতে হচ্ছে বলে চীনের পক্ষ থেকে জানানো হচ্ছে।

শুক্রবার ন্যান্সি পেলোসি ও তার পরিবারের সদস্যদের ওপর নিষেধাজ্ঞাসহ ওয়াশিংটনের সঙ্গে নানাক্ষেত্রে সংলাপ-সহযোগিতা বন্ধ করেছে চীন।

সিএনএন বলছে, তাইওয়ানের আকাশ ও জলসীমা উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দু হলেও প্রতিবেশী দেশ জাপানকেও তা প্রভাবিত করছে। জাপানের ১৬০ কিলোমিটারেরও কম দূরত্বে সাগরে চীনের ক্ষেপণাস্ত্র পড়ার পর দেশটির সামরিক শক্তি বাড়ানোর সরকারি পরিকল্পনায় জনসমর্থন বেড়ে যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

এই ক্ষেপণাস্ত্র এমন সময়ে পড়েছে যখন জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার সরকার এ মাসেই দেশের প্রতিরক্ষা বাজেট উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বাড়ানোর প্রস্তাব পেশের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

জাপানের ক্ষমতাসীন দলের জ্যেষ্ঠ আইনপ্রণেতা এবং সাবেক পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী তারো কোনোর মতে, তাইওয়ানে যে কোনও কিছু হলে এর প্রভাব স্পষ্টতই জাপানের ওপর পড়বে। জাপানের জনগণ এ পরিস্থিতিতে সামরিক ব্যয় বাড়ানো সমর্থন করবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “জাপানে পরিবর্তনের জোয়ার আসছে।”

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পারমাণবিক বোমার ক্ষত বয়ে বেড়ানো জাপান প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে অনেকটাই শান্তিবাদী পন্থা অনুসরণ করে। কিন্তু কোনও উস্কানি ছাড়াই চীনের ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাত জাপানকে ভাবিয়ে তুলেছে।

জাপানের প্রতিরক্ষা নীতিতে তাই বছর শেষের রদবদলের সঙ্গে সঙ্গে প্রতিরক্ষা ব্যয় পরিকল্পনার আওতায় চীনকে প্রতিহত করতে দূরপাল্লার যুদ্ধাস্ত্র অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব রাখা হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।

রাশিয়া গত ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেইনে আগ্রাসন শুরুর পর থেকেই তাইওয়ান এবং জাপান ঘিরে সমুদ্র ও আকাশে চীনের সামরিক তৎপরতা চালানো নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে। কারণ, রাশিয়ার আগ্রাসন চীনের জন্য একটি দৃষ্টান্ত এবং রাশিয়ার দেখাদেখি চীনও তাইওয়ানের বিরুদ্ধে শক্তি প্রয়োগ করতে পারে; আর যুক্তরাষ্ট্র তা থামাতে সরাসরি হস্তক্ষেপ নাও করতে পারে বলে জাপান উদ্বিগ্ন।

একসময় জাপানের সেল্ফ ডিফেন্স ফোর্সের প্রধান হিসাবে কাজ করা অবসরপ্রাপ্ত অ্যাডমিরাল কাতশুতোশি কাওয়ানো বলেছেন, “তাইওয়ানের চারপাশের সামরিক ভারসাম্যে বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটে গেছে। প্রতিরক্ষা বাজেট নিয়ে এবার অত্যন্ত গুরুত্বের সহকারে আলোচনা হবে বলেই মনে করছি।”