হাইতিতে রপ্তানি করা যুক্তরাষ্ট্রের চালে অস্বাস্থ্যকর মাত্রায় আর্সেনিক: গবেষণা

মেক্সিকো এবং জাপানের পাশাপাশি হাইতিও যুক্তরাষ্ট্রের চালের শীর্ষ ক্রেতাদের মধ্যে রয়েছে|

রয়টার্সবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Feb 2024, 01:26 PM
Updated : 24 Feb 2024, 01:26 PM

হাইতিতে ‍যুক্তরাষ্ট্র যে চাল রপ্তানি করে তাতে অস্বাস্থ্যকর মাত্রায় আর্সেনিক এবং ক্যাডমিয়াম ভারি ধাতু আছে, যা ক্যান্সার এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে এমন তথ্য।

হাইতির প্রধান খাদ্য চাল। যুক্তরাষ্ট্র প্রচুর পরিমাণে দেশটিতে এই চাল রপ্তানি করে থাকে। মেক্সিকো এবং জাপানের পাশাপাশি হাইতিও যুক্তরাষ্ট্রের চালের শীর্ষ ক্রেতাদের মধ্যে রয়েছে|

পশ্চিম গোলার্ধের সবচেয়ে দরিদ্র ক্যারিবিয়ান দেশ হাইতিতে স্থানীয় কোনও বিকল্পের চেয়ে সস্তা আমদানি বেশি সাশ্রয়ী।

গবেষণায় দেখা গেছে, হাইতিতে উৎপাদিত পণ্যের তুলনায় আমদানি করা চালে গড়ে আর্সেনিক এবং ক্যাডমিয়ামের ঘনত্ব প্রায় দ্বিগুণ বেশি। তাছাড়া, আমদানিকৃত চালের কিছু নমুনায় এই মাত্রা আন্তর্জাতিক সীমাও অতিক্রম করেছে।

প্রায় সব আমদানি করা চালের নমুনাতেই আর্সেনিক এবং ক্যাডমিয়ামের মাত্রা শিশুদের খাওয়ানোর ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসনের (এফডিএ) সুপারিশকৃত মাত্রাও ছাড়িয়ে গেছে।

গবেষণায় অন্যান্য আমদানিকারক দেশে বিষাক্ত পদার্থের মাত্রা মূল্যায়ন করা হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের এফডিএ এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ও তাৎক্ষণিকভাবে আর্সেনিকের মাত্রার বিষয়ে মন্তব্যের অনুরোধে সাড়া দেয়নি।

মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,হাইতি তাদের চালের প্রায় ৯০ শতাংশই মূলত যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করে। ১৯৮০ এবং ১৯৯০ এর দশকের শেষদিকে রাজনৈতিক অস্থিরতার সময় কম শুল্কে আমদানি এবং দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি সই-ই এত বেশি পরিমাণে চাল আমদানির কারণ।

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন হাইতিতে যুক্তরাষ্ট্রের চালে ভর্তুকির ব্যবস্থা করতে সহায়তা করেছিলেন। তবে পরে তিনি এ পদক্ষেপকে ‘ভুল’ আখ্যা দিয়েছিলেন। এতে হাইতিতে স্থানীয়ভাবে চাল উৎপাদনের সক্ষমতা নষ্ট হয়েছে বলে মন্তব্য করেছিলেন তিনি।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লুইজিয়ানা, টেক্সাস এবং আরকানস শীর্ষ চাল রপ্তানিকারক রাজ্য।

গবেষকরা ২০২০ সালে গবেষণা পরিচালনা করেছেন। সে সময় তারা দেখতে পান, হাইতিবাসীরা প্রতিবছর গড়ে ৮৫ কেজি (১৮৭ পাউন্ড) চাল খেয়েছে; যা যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় অনেক বেশি। যুক্তরাষ্ট্রে খাওয়া হয় ১২ কেজি চাল।

হাইতিতে চাল ভক্ষণের কারণে বিশেষত, অল্পবয়সীরা স্বাস্থ্য জটিলতা দেখা দেওয়ার অনেক বেশি ঝুঁকিতে পড়েছে।

ফলে “হাইতিতে যুক্তরাষ্ট্রের চালের বন্যা কেবলমাত্র সেখানে স্থানীয় পণ্য বিক্রি করতে হিমশিম খাওয়া চাষীদের জন্যই অর্থনৈতিকভাবে হানিকারক নয়, বরং হাইতির ভোক্তাদের দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর।

আর তাই “প্রায় একচেটিয়াভাবে যুক্তরাষ্ট্রের চালের উপর নির্ভরশীল একটি ব্যবস্থা বজায় রেখে হাইতি আসলে বড় ধরনের ঝুঁকিই আমদানি করছে,” বলা হয় গবেষণা প্রতিবেদনে।

এ পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের চাল রপ্তানিকারকদের একটি নৈতিক তদন্ত, হাইতির কৃষি খাতকে শক্তিশালী করার পদক্ষেপ নেওয়া এবং দেশের খাদ্য নিরাপত্তা বিধি জোরদার করাকে ‘গুরুতর প্রয়োজন’ হিসাবে চিহ্নিত করার আহ্বান জানানো হয়েছে প্রতিবেদনে।

হাইতিতে ভারী সশস্ত্র দলগুলোর মধ্যে সহিংস সংঘর্ষ কৃষিভূমিতে ছড়িয়ে পড়ছে। এতে খাদ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। জাতিসংঘের অনুমান, দেশটিতে ৩ লাখেরও বেশি মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছে এবং জনসংখ্যার প্রায় ৪০ শতাংশই ক্ষুধার্ত।