দক্ষিণ আফ্রিকার উত্তর লিম্পোপো প্রদেশের পোলকওয়েনের কাছে একটি খামারে গত আগস্টে এই দুই নারী খাবারের খোঁজ করার সময় তাদেরকে গুলি করা হয়।
Published : 03 Oct 2024, 09:38 PM
দুই কৃষ্ণাঙ্গ নারীকে গুলি করে তাদের মুতদেহ শূকরকে খাওয়ানোর অভিযোগ ওঠা এক শ্বেতাঙ্গ কৃষক ও তার দুই কর্মীকে ঘিরে দক্ষিণ আফ্রিকায় ক্ষোভ সঞ্চার হয়েছে।
বিবিসি জানায়, গত আগস্টে মারিয়া ম্যাকগাতো (৪৫) ও লুসিয়া এনডলোভু (৩৪) দক্ষিণ আফ্রিকার উত্তর লিম্পোপো প্রদেশের পোলকওয়েনের কাছে একটি খামারে খাবারের খোঁজ করছিল। সে সময় তাদেরকে গুলি করে মারা হয়। এরপর দৃশ্যত প্রমাণ লোপাট করতে তাদের মৃতদেহ খাওয়ানো হয় শূকরকে।
এই হত্যাকাণ্ডের মামলায় বিচার শুরুর আগে খামারের মালিক জাকারিয়া জোহানেস অলিভিয়ার (৬০) এবং তার দুই কর্মী আদ্রিয়ান ডি ওয়েট (১৯) ও উইলিয়াম মুসোরা (৫০)-এর জামিনের জন্য শুনানি শুরু হয়েছে আদালতে।
তিন অভিযুক্তকে এখনও আদালতে আবেদন জানাতে বলা হয়নি। পরবর্তীতে বিচার শুরু হলে সেটি করা হতে পারে।
শুনানির সময় পোলকওয়ানে আদালতের বাইরে বিক্ষোভকারীরা প্ল্যাকার্ড নিয়ে বিক্ষোভ করে এবং অভিযুক্তদের জামিন বাতিলের দাবি জানায়।
আদালতের ভেতরে নিহতদের পরিবার ও অভিযুক্তদের স্বজনরা উপস্থিত ছিল। বিচারক এনতিলানে ফেলেং জনস্বার্থে সংবাদমাধ্যমকে শুনানি রেকর্ড করার অনুমতি দেন।
কয়েক ঘণ্টার শুনানি শেষে বিচারক আগামী ৬ নভেম্বর পর্যন্ত জামিনের শুনানি মুলতবি করেছেন; যাতে তদন্তের জন্য আরও সময় পাওয়া যায়। আর ততদিন অভিযুক্তরা কাস্টডিতে থাকবেন।
ম্যাকগাতোর ভাই ওয়াল্টার ম্যাথোল এর আগে বিবিসি-কে বলেছিলেন, ঘটনাটি দক্ষিণ আফ্রিকায় কালো ও শ্বেতাঙ্গদের মধ্যে জাতিগত উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তুলেছে। ৩০ বছর আগে বর্ণবাদী শাসন ব্যবস্থার অবসান হলেও দেশটিতে বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে এখনও এই উত্তেজনা বেশি।
অভিযুক্ত তিনজন আরও একটি হত্যাচেষ্টার অভিযোগের মুখোমুখি হয়েছেন। কারণ তারা লুসিয়া এনডলোভুর স্বামী মাবুথো এনকিউবেকে গুলি করেছিলেন। তিনি ওই সময় নারীদের সঙ্গে ছিলেন। এই অভিযোগের পাশাপাশি লাইসেন্সবিহীন আগ্নেয়াস্ত্র রাখার অভিযোগও রয়েছে তিনজনের বিরুদ্ধে।
১৭ আগস্টের ওই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়েও এনকিউবে বেঁচে যান। হামাগুড়ি দিয়ে পালিয়ে একজন ডাক্তারের কাছে ফোনে সাহায্য চাইতে পেরেছিলেন তিনি।
এনকিউবে পরে ঘটনাটি পুলিশকে জানান। পুলিশ কর্মকর্তারা শূকরের খোঁয়াড়ে তার স্ত্রী ও অপর নারী ম্যাকগাতোর গলিত মরদেহ খুঁজে পায়।
ম্যাকগাতোর ভাই ম্যাথোল জানান, তিনিও পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে ঘটনাস্থলে ছিলেন। শূকরের খোঁয়াড়ে ভয়ানক দৃশ্য দেখেন তিনি। তার বোনের দেহের কিছু অংশ খেয়ে ফেলেছিল প্রাণীগুলো।
সম্প্রতি মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে বা অল্প কদিনের মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ হবে এমন পণ্যের চালান থেকে ভোজ্য খাবারের সন্ধানে ভুক্তভোগীরা খামারটিতে গিয়েছিলেন। এসব খাবার কখনও কখনও খামারে পড়ে থাকত এবং শূকরদের দেওয়া হত।
বিরোধী দল ইকোনমিক ফ্রিডম ফাইটার্স (ইএফএফ) এই খামার বন্ধের দাবি জানিয়েছে। ওদিকে, দক্ষিণ আফ্রিকার মানবাধিকার কমিশন হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত সম্প্রদায়ের মধ্যে বর্ণবাদবিরোধী সংলাপের আহ্বান জানিয়েছে।