ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির একটি লিখিত বক্তব্য পাঠের মাধ্যমে বিদায় অনুষ্ঠান শুরু হয়।
Published : 24 Feb 2025, 12:53 PM
হিজবুল্লাহর নিহত নেতা হাসান নাসরাল্লাহর জানাজায় কয়েক লাখ মানুষ অংশ নিয়েছেন। তারা ব্যাপক শোকের মধ্য দিয়ে তাদের প্রিয় নেতাকে শেষ বিদায় জানিয়েছেন।
সেপ্টেম্বরে ইসরায়েলের ভয়াবহ বোমা হামলায় নিহত হওয়ার প্রায় পাঁচ মাস পর রোববার বৈরুতে নাসরাল্লাহর দাফন সম্পন্ন হয়।
এদিন নাসরাল্লাহকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে আসা লোকজনে হিজবুল্লাহ নিয়ন্ত্রিত দক্ষিণ বৈরুতের ক্যামি শামুন স্পোর্টস সিটি স্টেডিয়ামের ৫৫ হাজার আসন পূর্ণ হয়ে যায়। লেবাননের পাশাপাশি অন্যান্য দেশ থেকেও হিজবুল্লাহর সমর্থকরা শেষ বিদায়ের অনুষ্ঠানে যোগ দেন। তাদের হাতে হাতে ছিল নাসরাল্লাহর ছবি ও হিজবুল্লাহর পতাকা।
আল জাজিরা জানিয়েছে, নিরাপত্তাজনিত কারণে শেষ বিদায়ের এ অনুষ্ঠান কিছুটা দেরি করে স্থানীয় সময় দুপুর ১টায় শুরু হয়। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির একটি লিখিত বক্তব্য পাঠের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়।
এরপর নাসরাল্লাহ ও তার উত্তরাধিকারী হাশেম সাফিয়েদ্দিনের কফিন গাড়িযোগে ধীরে ধীরে স্টেডিয়ামে নিয়ে আসা হয়। নাসরাল্লাহ নিহত হওয়ার এক সপ্তাহ পর ইসরায়েলের আরেকটি বিমান হামলায় সাফিয়েদ্দিন নিহত হন। দু’জনের কফিনই হিজবুল্লাহর হলুদ রঙের পতাকার কাপড়ে ঢাকা ছিল।
কফিন দু’টি নজরে আসতেই স্টেডিয়াম ভরা মানুষ নিহত নেতাদের নামে জয় ধ্বনি দেন। এর নিরব হয়ে স্টেডিয়ামের ভেতর ঘুরতে থাকা কফিনগুলো অনুসরণ করেন।
টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভাষণে হিজবুল্লাহ নেতা নাইম কাসেম বলেন, তাদের সংগঠন নাসরাল্লাহর পথ অনুসরণ অব্যাহত রাখবে।
হিজবুল্লাহর সংগঠকরা স্টেডিয়ামটিতে কয়েক হাজার অতিরিক্ত আসন ও এর বাইরে আরও বেশি আসন বসিয়েছিল, সেগুলো সবই পূর্ণ হয়ে যায়। শেষ শ্রদ্ধা জানাতে আসা লোকজন জায়ান্ট স্ক্রিনের মাধ্যমে মূল অনুষ্ঠান অনুসরণ করেন। এ সময় দক্ষিণ বৈরুতের দেয়াল ও সেতুগুলোতে নাসরাল্লাহ ও সাফিয়েদ্দিনের বিশাল বিশাল ছবি শোভা পাচ্ছিল।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত আল জাজিরার প্রতিনিধি জানিয়েছেন, নাসরাল্লাহ লেবাননের শিয়া সম্প্রদায়ের ‘পিতার মতো ব্যক্তিত্ব’ ছিলেন। এই সম্প্রদায়ের মধ্যে হিজবুল্লাহর ‘উল্লেখযোগ্য অনুসারি’ আছে।
হিজবুল্লাহর কর্মকর্তা আলি দামুশ শনিবার জানিয়েছিলেন, ৬৫টি দেশ থেকে প্রায় ৮০০ জনের মতো ব্যক্তিত্ব অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। তাদের পাশাপাশি পুরো বিশ্ব থেকে আরও কয়েক হাজার ব্যক্তি ও আন্দোলনকারী আসবেন।
এক পর্যবেক্ষক বলেন, “হিজবুল্লাহ বলা চেষ্টা করছে যে ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধে ক্ষয়ক্ষতি, সিরিয়া যা হয়েছে তা সত্ত্বেও হিজবুল্লাহর মূল হাতিয়ার অস্ত্র নয়, মানুষ।”
নাসরাল্লাহ তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে হিজবুল্লাহর মুখ হয়ে ছিলেন। তাকে ও সাফিয়েদ্দিনকে গোপন এক স্থানে অস্থায়ীভাবে কবর দেওয়া হয়েছিল। তাদের জানাজায় ইসরায়েলি বাহিনী হামলা চালতে পারে তখন এমন আশঙ্কা করা হচ্ছিল।
এবার নাসরাল্লাহকে বৈরুতের দক্ষিণাংশের শহরতলীর এয়ারপোর্ট রোডের কাছে একটি জায়গায় কবর দেওয়া হয়েছে। আর সাফিয়েদ্দিনকে দক্ষিণ লেবাননে তার নিজ শহর দেইর কানুন এন-নাহরে কবর দেওয়া হয়েছে।
এদিকে লেবাননের রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম জানিয়েছে, এই শেষ বিদায় অনুষ্ঠান চলার সময় ইসরায়েলি বিমানগুলো বৈরুতের আকাশে খুব নিচু দিয়ে উড়ে যায়।