নিরাপত্তা বিভাগগুলো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে শীর্ষ কর্মকর্তাদের বৈঠক ডেকেছে এবং ব্যাপক তল্লাশি অভিযানের নির্দেশ দিয়েছে। কাছাকাছি তলুকা শহরের বিমানবন্দরও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
মেক্সিকোর জাতীয় নিরাপত্তা কমিশন বলেছে, নিরাপত্তা বাহিনী মেক্সিকো সিটির ৯০ কিলোমিটার পশ্চিমে কারাগারের কাছের রাস্তাগুলোতে হন্যে হয়ে গুজমানকে খুঁজছে। রাস্তায় রাস্তায় রয়েছে কড়া পুলিশ পাহারা। বসানো হয়েছে একাধিক তল্লাশি কেন্দ্র।
গুজমানকে পালিয়ে যেতে কে সহায়তা করেছে এবং তিনি কোথায় যেতে পারেন সে সম্পর্কে কিছুই জানাতে পারেননি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মিগুয়েল অ্যাঞ্জেল অসোরিও।
রোববার মেক্সিকোর জাতীয় নিরাপত্তা কমিশনের বিবৃতির বরাত দিয়ে বিবিসি জানায়, শনিবার রাতে মেক্সিকো সিটির কাছে আল্টিপ্লানো কারাগারের শাওয়ারে গোসল করার সময় গুজমানকে শেষবারের মতো দেখা গেছে, এরপর থেকে সে উধাও।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, কারাগারে গুজমানের কারাকক্ষ পরিদর্শনের সময় তার পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি টের পাওয়া যায়।নিরাপত্তা কমিশন তার পালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু জানায়নি।
তবে মেক্সিকোর প্রধান সম্প্রচারমাধ্যম টেলেভিসার এক সংবাদ উপস্থাপক তার ওয়েবসাইটে জানান, গুজমান কয়েক কিলোমিটার লম্বা একটি সুড়ঙ্গ দিয়ে পালিয়ে গেছেন বলে জানানো হয়েছে প্রাথমিক কয়েকটি খবরে।
পলাতক গুজমান 'এল চাপো' অথবা 'পিচ্চি' নামেও পরিচিত। তিনি মেক্সিকোর অন্যতম শীর্ষস্থানীয় মাদক চোরাচালানী চক্র সিনালোয়ার প্রধান। এই চক্রটি প্রতিবেশী যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ নিষিদ্ধ ঘোষিত মাদক পাচার করে।
২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে দ্বিতীয়বারের মতো তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। গুজমানের ওই গ্রেপ্তারকে মেক্সিকোর সরকারের সাফল্য হিসেবে দেখা হয়েছিল।
গত কয়েক দশকে তিনি বিশ্বের সবচেয়ে সুগঠিত ও অন্যতম ক্ষমতাশালী অপরাধী চক্রের ‘বস’ হয়ে উঠেছিলেন, এমনকি ফোর্বস সাময়িকীতে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় কোটিপতিদের তালিকায় তার নামও উঠেছিল।
এর আগে ১৯৯৩ সালে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানোর পর ২০০১ সালে জেল ভেঙে পালিয়েছিলেন তিনি। ১৯৯৩ সালে গুয়েতেমালায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে গুজমান ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সাজা খাটছেন।
গুজমান দ্বিতীয়বারের মত জেল থেকে পালাতে পারেন এমন আশঙ্কা এর আগে উড়িয়ে দিয়েছিলেন মেক্সিকোর সাবেক এটর্নি জেনারেল মুরিল্লো কারাম। তাছাড়া, খোদ প্রেসিডেন্ট এনরিক পেনা নিতোও নির্বাচনে জয়ের আগে প্রথমবারের মত গুজমানের জেল থেকে পালানোর ঘটনাটি নিয়ে তার প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলকে উপহাস করেছিলেন।
আর এখন কারাগার থেকে ফের গুজমানের পলায়নে বড় ধরনের ধাক্কা খেল প্রেসিডেন্ট পেনা নিতোর প্রশাসন। ২০১২ সালে পেনা নিতো সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর মাদক চোকারবারীদেরকে ধরার সাঁড়াশি অভিযানে প্রশংসা কুড়িয়েছিল তার প্রশাসন। গুজমান ধরা পড়াসহ তার চক্রের মোট ৬ জনকে পাকড়াও কিংবা হত্যা করেছে মেক্সিকো কর্তৃপক্ষ।
বিশ্বের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ গুজমান
মেক্সিকো ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রে মাদক চোরাচালানের কয়েকটি অভিযোগ আছে গুজমানের বিরুদ্ধে।
যুক্তরাষ্ট্রের ড্রাগ এনফোর্সমেন্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ তালিকায় আছে তার নাম। যুক্তরাষ্ট্র গুজমানকে সেদেশে হস্তান্তরের লিখিত অনুরোধ জানাবে বলে জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র এরই মধ্যেই সে অনুরোধ জানিয়েছে কিনা তা স্পষ্ট জানা যায়নি।
গুজমানের জন্ম খুব সম্ভবত ৫৭ বছর আগে বাডিরাগুয়াতো শহরে।১৯৮০’র দশকে তিনি মাদকচক্রের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তি হয়ে ওঠেন। সিনালোয়া মাদকে চোরাচালান চক্রের প্রধান হওয়ার পরই বিশ্বের মোস্ট ওয়ান্টেড মাদক পাচারকারীর তালিকায় তার নাম ওঠে। এ চক্র যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণে কোকেইন, মারিজুয়ানাসহ মেথাফেটাফিন চোরাচালান করে।
২০১৪ সালে পুনরায় গ্রেপ্তার হওয়ার আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রবিভাগ তাকে ধরিয়ে দেয়ার জন্য ৫০ লাখ ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছিল।