ইসরায়েলে সামরিক নিষেধাজ্ঞা দাবি নোবেলজয়ীদের

ফিলিস্তিনের গাজায় হামলা বন্ধে ইসরায়েলের ওপর সামরিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়েছেন শান্তিতে ছয় নোবেলজয়ী।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 July 2014, 07:36 AM
Updated : 21 July 2014, 12:07 PM

সম্প্রতি বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে লেখা এক খোলা চিঠিতে তারা এ আহ্বান জানান।

তারাসহ চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের খ্যাতনামা শিল্পী ও বুদ্ধিজীবী মিলিয়ে ৯৯ জন। 

ফিলিস্তিনিদের স্বার্থরক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন প্যালেস্টাইন লিগ্যাল অ্যাকশন নেটওয়ার্কের (প্ল্যান) ওয়েবসাইটে বলা হয়, ওই চিঠিতে সই করেছেন শান্তিতে নোবেলজয়ী দক্ষিণ আফ্রিকার আর্চবিশপ ডেসমন্ড টুটু, আর্জেন্টিনার মানবাধিকারকর্মী অ্যাডলফো পেরেজ এসকুইভেল, স্থলমাইন নিষিদ্ধ করার আন্দোলনে যুক্ত মার্কিন রাজনৈতিক কর্মী জুডি উইলিয়ামস, উত্তর আয়ারল্যান্ডের শান্তিকর্মী মাইরিড ম্যাগুয়ের, বেটি উইলিয়ামস এবং গুয়েতেমালার আদিবাসীদের অধিকার রক্ষার আন্দোলনে যুক্ত রিগোবেরতা মেনচু।

চিঠিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছে মার্কিন দার্শনিক নোয়াম চমস্কি, পিংক ফ্লয়েডের রজার ওয়াটার্স, ব্রিটেনের নাট্যকার ক্যারিল চার্চিল, যুক্তরাষ্ট্রের র‌্যাপ সঙ্গীতশিল্পী বুটস রাইলি, ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড ইউনিয়ন কনফেডারেশনের সভাপতি হুয়াও আন্তোনিও ফেলিসও, কনফেডারেশন অফ সাউথ আফ্রিকান ট্রেড ইউনিয়নের মহাসচিব জুয়েলিনজিমা ভাভি প্রমুখ।

চিঠিতে সই করার তালিকায় কবি, চিত্রশিল্পী, আইনজীবী, লেখক, পার্লামেন্ট সদস্য, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন পেশার বিশিষ্টজনরা রয়েছেন। 

চিঠিটি সংক্ষিপ্ত আকারে গত ১৯ জুলাই গার্ডিয়ানে প্রকাশিত হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়, “আটকেপড়া ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েল আবারো তার পূর্ণ সামরিক শক্তি প্রয়োগ করেছে, বিশেষ করে অধিকৃত গাজা অঞ্চলে তাদের সামরিক আগ্রাসন নৃশংস ও অবৈধ। গাজায় ইসরায়েলের চলমান এই হামলায় ফিলিস্তিনি নাগরিকদের প্রাণহানি বাড়ছে, শত শত মানুষ আহত হচ্ছে এবং স্বাস্থ্য খাতসহ বেসামরিক নাগরিকদের স্থাপনা ধ্বংস হচ্ছে।”  

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে পাওয়া সামরিক সহযোগিতা নিয়ে ইসরায়েল নিরীহ ফিলিস্তিনিদের ওপর এই হামলা চালাচ্ছে দাবি করে চিঠিতে বলা হয়, ২০০৯ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সময়ের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে ৩০ বিলিয়ন ডলারের সামরিক সহায়তা দেবে। একই সঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইসরায়েলের সামরিক রপ্তানির পরিমাণও বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।

“সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ইসরায়েলে কয়েক বিলিয়ন ইউরোর অস্ত্র রপ্তানি করেছে এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ইসরায়েলের সামিরক স্থাপনাগুলোর লালন-পালনের পাশাপাশি দেশটির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সামরিক গবেষণায় কয়েকশ মিলিয়ন ইউরো অনুদান দিয়েছে।”

ফিলিস্তিনিদের অধিকার রক্ষায় সোচ্চার হওয়ার পরও ভারত, ব্রাজিল ও চিলির মতো দেশ ইসরায়েলের সঙ্গে সামরিক বাণিজ্য ও সহযোগিতা বাড়িয়েছে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।

এতে আরো বলা হয়, অস্ত্র আমদানি-রপ্তানি এবং ইসরায়েলের সামরিক প্রযুক্তি উন্নয়নে সহযোগিতা দেয়ার মধ্য দিয়ে এসব দেশ ইসরায়েলের এই সামরিক আগ্রাসন, যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধে তাদের সমর্থনের বিষয়ে পরিষ্কার বার্তা দিয়েছে।

চিঠিতে দাবি করা হয়, ইসরায়েলের সঙ্গে সামরিক বাণিজ্য এবং এ সংক্রান্ত গবেষণায় সহযোগিতা দেশটিকে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনে উৎসাহিত করছে। একই সঙ্গে দেশটির দখলদারি মনোভাব এবং ফিলিস্তিনিদের অধিকারকে অস্বীকার করার প্রবণতাকে উসকে দিচ্ছে।

চিঠিতে বলা হয়, “বর্ণবাদী কর্মকাণ্ডের সময় দক্ষিণ আফ্রিকার ওপর যেমনটা করা হয়েছিল, একইভাবে ইসরায়েলের ওপর কার্যকর ও বৈধ সামিরক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে আমরা জাতিসংঘ এবং বিভিন্ন দেশের সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।”

গাজাবাসীর সঙ্গে সংহতি জানানো দেশগুলোর প্রতি এখনই ইসরায়েলের সঙ্গে সব ধরনের সামরিক সম্পর্ক ছিন্ন করারও আহ্বান জানানো হয়েছে।