দিগন্ত বিস্তৃত গমের ক্ষেত পেরিয়ে রায়বেরেলি শহরে ঢুকেও উন্নয়নের চিত্র তেমন দেখা যায়নি দীর্ঘকাল ধরে কংগ্রেসের করায়ত্ত থাকা এই আসনে।
তবে তারপরও শহরবাসী জয়ধ্বনি দেন গান্ধীদের পক্ষে। মায়ের আসনে সোমবার প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর শেষ নির্বাচনী প্রচারে তারই প্রমাণ দেখা গেল।
রায়বেরেলির বাসিন্দাদের সঙ্গে আলাপ করে দেখা যায়, তারা কংগ্রেসকেই আবার ক্ষমতায় দেখতে চায়।
বনপাড়িয়া গাঁওয়ের হতদরিদ্র কৃষক হরিদাশ সেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা মনে করি, ভারতের নেতৃত্বে কংগ্রেস ছাড়া বিকল্প নেই। রায়বেরিলিকে কৃষি ও কৃষাণ ঋণ মওকুফ করেছে কংগ্রেস। এতে কৃষকরাই উপকার পেয়েছে।”
রাইবেরেলির আইনজীবী পবন কুমার তিওয়ারি বলেন, “কখনো ক্ষমতার অপব্যবহার করে আলাদা উন্নয়ন করছে, এই অভিযোগ কেউ কংগ্রেসকে দিতে পারবে না।
“রায়বেরেলির মানুষ দরিদ্র হলে মনের দিক থেকে তারা উদার ও গান্ধী পরিবারের ভক্ত। অন্য কোনো দল এখানে মানুষের মনে আসন করতে পারেনি।”
রোববার দুপুরে প্রখর রোদে সোনিয়া গান্ধীর পক্ষে প্রিয়াঙ্কার প্রচারণার শেষ দিনে শোভযাত্রায় অনেকের সঙ্গে হরিদাশ ও তিওয়ারিও ছিলেন। সড়কের দুই ধারে দাঁড়িয়ে ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে তারা গান্ধী পরিবারের মেয়েকে স্বাগত জানান।
মানুষের ভিড় ডিঙিয়ে এই শোভাযাত্রা শেষ হতে তিন ঘণ্টা লেগে যায়। রায়বেরিলি বাজার সড়ক থেকে এই প্রচারাভিযানের শুরুতে প্রিয়াঙ্কা হঠাৎ গাড়ি থেকে নেমে সাধারণ মানুষের সঙ্গে হাত মেলাতে থাকলে নিরাপত্তারক্ষীদের হিমশিম খেতে দেখা গেছে।
মেরুন রঙের সালোয়ার-কামিজ পরা প্রিয়াঙ্কাকে কাছে পেয়ে জনতাও স্লোগান তোলে- ‘প্রিয়াঙ্কা কি জয়’।
হাঁটার এক পর্যায়ে ছবি তুলতে গিয়ে মানুষের ধাক্কায় সংবাদকর্মীরা হুমড়ি খেয়ে প্রিয়াঙ্কার সামনে পড়ে গেলে তিনি থমকে যান; বলে ওঠেন- ‘রুখ যাও’।
এভাবে প্রায় ৩৫ মিনিট হাঁটার পর আবার গাড়িতে দাঁড়িয়ে নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে হাত নেড়ে পাঞ্জা প্রতীকে ভোট চান তিনি।
গান্ধী পরিবারের সদস্যরা এখান থেকে নির্বাচন করে দেশের নেতৃত্ব দেন বলে এই শহরের আলাদা গুরুত্ব রয়েছে।
সোমবার বেলা সাড়ে ১২ টার দিকে বিজেপি প্রার্থী ৫০টি মোটর সাইকেল নিয়ে মূল সড়কে রোড শো করলেও মানুষের তা নিয়ে কোনো আগ্রহ দেখা যায়নি।
রায়বেরেলির বাস স্ট্যান্ডের কাছে কংগ্রেসের কার্যালয় তিলক ভবনে নেতা-কর্মীদের দেখা গেছে উৎসবের মেজাজে। সেখানে দেখা মেলে কে সি গান্ধী, উমা সরকার মিশ্র, সন্তোষ সিং, পন্ডিত দীনেশ শুক্লার মতো প্রবীন নেতাদের।
উত্তর প্রদেশ কংগ্রেসের নির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য সন্তোষ সিং বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সোনিয়াজী জিতবেন, এতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। তিনি ভারতকে এগিয়ে নিতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।”
তরুণ ভোটার মোহাম্মদ লায়েক ও সালমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরকে বলেন, “কে কী বলল জানি না, সোনিয়ার নেতৃত্বে কংগ্রেস সারা ভারতকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে পারে, অন্য কেউ তা পারবে না।”
রায়বেরেলিতে সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বিজেপির প্রার্থী সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অজয় আগরওয়াল। বফোর্স কেলেঙ্কারি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করে খবরের শিরোনামে এসেছিলেন তিনি।
ইতালির নাগরিক সোনিয়া রাজীব গান্ধীর ঘরনী হয়ে আসেন ভারতে। রাজীব হত্যাকাণ্ডের পর হাল ধরেন কংগ্রেসের।
১৯৫১ সাল থেকে এই আসন গান্ধী পরিবারের শক্তঘাঁটি। ফিরোজ গান্ধী, ইন্দিরা গান্ধী থেকে শুরু করে রায়বেরেলি আসনটিতে ১৪ বার কংগ্রেস বিজয়ী হয়। কংগ্রেসের বাইরে ১৯৭৭ সালে জনতা পার্টির রায় নারায়ণ এবং ১৯৯৬ ও ১৯৯৮ সালে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) অশোক সিং বিজয়ী হন।
লোকসভা নির্বাচনে সপ্তমপর্বে আগামী ৩০ এপ্রিল উত্তর প্রদেশের রায়বেরেলি, লক্ষ্ণৌ এবং গুজরাট, জম্মু-কাশ্মিরসহ ৭ রাজের ৫৪ আসনে ভোটগ্রহণ হবে।
সোনিয়ার ছেলে রাহুল গান্ধী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন কাছের আসন আমেথি থেকে। সেখানে বিজেপি প্রার্থী করেছে অভিনেত্রী স্মৃতি ইরানিকে।
ভাইয়ের পক্ষে নিজেদের পারিবারিক আসন আমেথিতেও প্রচার চালান প্রিয়াঙ্কা।
গত ১ এপ্রিল দিল্লি থেকে রায়বেরিলি এসে ৬৭ বছর বয়সী সোনিয়া মনোনয়নপত্র জমা দেন। বিমানবন্দর থেকে মাকে পাশে বসিয়ে গাড়ি চালিয়ে এসেছিলেন রাহুল।
সেদিনও গোলাপের পাপড়ি ও জয়ধ্বনিতে ইন্দিরার পুত্রবধূকে সংবর্ধনা জানিয়েছিল রায়বেরিলির মানুষ। প্রচারাভিযানে শেষ দিনে প্রিয়াঙ্কাও পেলেন সেই একই সংবর্ধনা।
(লোকসভা নির্বাচনের খবর জানাতে ভারতে রয়েছেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিবেদক সুমন মাহমুদ)