কংগ্রেস না বিজেপি?

কংগ্রেসই থাকবে, না কি নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে দিল্লির মসনদে ফিরবে বিজেপি- তার মীমাংসা শুরু হয়েছে ভারতে।

ফয়সাল আতিকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 April 2014, 07:05 PM
Updated : 7 April 2014, 05:10 AM

বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশে সোমবার লোকসভা নির্বাচনে ভোট দেয়ার মধ্য দিয়ে ৮১ কোটি ভোটার তাদের রায় দেয়া শুরু করেছে।

এখন পর্যন্ত সব জরিপের ফলাফল বিজেপির পক্ষে হলেও একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার কোনো নিশ্চয়তা মিলছে না তাতে।

ফলে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় ২৭২ আসনের সমর্থন নিতে বিজেপির যেমন অন্যদিকে দিকে চেয়ে থাকতে হবে, তেমনি কম আসন নিয়েও ওই সংখ্যক আসনের সমর্থন কব্জায় নেয়ার সুযোগ কংগ্রেসের সামনেও রয়েছে।

পাশাপাশি চমক দেখিয়ে দিল্লির ক্ষমতায় আরোহনের পর অরবিন্দ কেজরিওয়ালের নেতৃত্বাধীন আম আদমি পার্টি কী ফলাফল করে, তাও দেখার অপেক্ষায় রয়েছেন সবাই।

কংগ্রেস কিংবা বিজেপি কেউই এককভাবে ২৭২ আসন না পেলে তৃণমূল কংগ্রেস, সমাজবাদী দল, রাষ্ট্রীয় জনতা দল, বহুজন সমাজ পার্টি, এআইডিএমকে, তেলেগুদেশম পার্টির মতো আঞ্চলিক দলগুলোই হবে সরকার গঠনের নিয়ামক শক্তি।

২৮টি প্রদেশের ৫৪৩টি আসনের মধ্যে প্রথম পর্বে সোমবার উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় আসামের পাঁচটি এবং ত্রিপুরার একটি আসনে ভোট হবে। এগুলো হচ্ছে, তাজপুর, কালিয়াবর, জোরহাট, ডিব্রুগড়, লাকিমপুর (আসাম) এবং পশ্চিম ত্রিপুরা (ত্রিপুরা।)।

নয় পর্বে আগামী ১২ মে ভোটগ্রহণ শেষে ১৬ মে ফল প্রকাশ হবে, আর তাতেই হবে এতদিনের জল্পনা-কল্পনার অবসান।  

এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার ৮১ কোটি ৪০ লাখ। প্রায় ৯ লাখ ৩০ হাজার ভোট কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএমের মাধ্যমে ভোট গ্রহণের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন।

নির্বাচনের আগে গণমাধ্যমের জরিপে এগিয়ে আছেন বিজেপির প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী নরেন্দ্র মোদি। গুজরাট দাঙ্গার কাদা গায়ে থাকলেও ওই রাজ্যে অপেক্ষাকৃত দুর্নীতিমুক্ত সরকার পরিচালনায় সাফল্যের জন্য তার ওপর অনেকের ভরসা বলে বিশ্লেষকরা বলছেন।

উত্তর প্রদেশের বারানস আসন থেকে ভোটের লড়াইয়ে নামা মোদি নতুন চাকরি সৃষ্টি, ট্রিলিয়ন ডলার উন্নয়নের মহাপরিকল্পনা, মধ্যবিত্ত শ্রেণির উন্নয়নের পরিকল্পনাসহ বিভিন্ন আশার কথা শুনিয়েছেন।

অন্যদিকে টানা দুই বার ক্ষমতায় কংগ্রেসকে দেখে ভোটাররা অনেকটাই আগ্রহ হারিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে গান্ধি পরিবারের রাহুল গান্ধিও তা থেকে তুলতে হালে পানি পাচ্ছেন না।

আর মনমোহন সিং পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী পদে আসীন হতে অনাগ্রহ দেখানোর পরও সোনিয়া গান্ধি দলের  পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কাউকে সামনে তুলে ধরেননি, যা কংগ্রেসের দুর্বলতা হিসেবে প্রচারে এনেছে বিজেপি।

অর্থনৈতিক শ্লথগতি, মন্ত্রী-এমপিদের দুর্নীতিসহ বিভিন্ন কারণে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকারের জনপ্রিয়তা বেশ কমে গেছে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। এবার নির্বাচনী প্রচারণায়ও তেমন কোনো চমক দেখাতে পারেনি তারা।

জরিপে পিছিয়ে কংগ্রেস

ভোট শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে প্রকাশিত জরিপের ফলাফলেও দেখা গেছে, ক্ষমতাসীন কংগ্রেসের চেয়ে হিন্দুত্ববাদী বিজেপি বড় ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছে।

এনডিটিভির এক জরিপে দেখা যায়, বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট এনডিএ পাচ্ছে ২৫৯টি আসন, যা সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় ২৭২ আসনের চেয়ে মাত্র ১৩টি কম।

সিএনএন-আইবিএন এবং সিএসডিএস পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, বিজেপি ২১৮ টি আসন জিততে পারে। আর বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট পেতে পারে ২৩৪ থেকে ২৪৬টি আসন।

জরিপের ফল অনুযায়ী, কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ পেতে পারে ১১১ থেকে ১২৩টি আসন। জরিপের এ তথ্যানুযায়ী- এনডিএ’র অর্ধেক আসন পাবে ইউপিএ।

১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা লাভের পর মাত্র ১৩ বছর ছাড়া বাকি সময়ে ভারতের শাসন ক্ষমতায় ছিল কংগ্রেস। ২০০৪ সালে ক্ষমতায় এসেও টানা দুই মেয়াদে শাসন করেছে দলটি।

তবে এবারের নির্বাচনের নেতৃত্বে থাকা ৪৩ বছর বয়সী রাহুল তার প্রতিদ্বন্দ্বী নরেন্দ্র মোদির চেয়ে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পিছিয়ে আছেন।

এজ নজরে ভোট

মোট আসন সংখ্যা: ৫৪৩টি।

মোট ভোটার: ৮১ কোটি ৪০ লাখ (প্রায়)।

পুরুষ ভোটার: ৪২ কোটি ৬৬ লাখ। নারী ভোটার: ৩৮ কোটি ৮০ লাখ (প্রায়)।

নারী ও পুরুষ ভোটারের অনুপাত: ৯৪৩:১০০০।

নতুন ভোটার:  ৯ কোটি ৭১ লাখ।

ভোটের তারিখ: নয় ধাপে ভোট। ০৭, ০৯, ১০, ১২, ১৭, ২৪ ও ৩০ এপ্রিল এবং ০৭ ও ১২ মে।