ফিলিপিন্সে ফের মার্কোস জমানা, ‘প্রাচ্যের ট্রাম্পের’ বিদায়

ফিলিপিন্সের মাদকবিরোধী যুদ্ধে ব্যাপক প্রাণহানি আর কথায় কথায় গ্রেপ্তার-গুলির হুমকি দিয়ে দেশে-বিদেশে ব্যাপক সমালোচিত প্রেসিডেন্ট রদরিগো দুতের্তের মেয়াদ আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয়েছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 June 2022, 08:39 AM
Updated : 30 June 2022, 08:54 AM

ম্যানিলায় এক অনুষ্ঠানে ফিলিপিন্সের নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিলেন সাড়ে তিন দশক আগে ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরশাসক ফের্দিনান্দ মার্কোসের ছেলে ফের্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়র; বংবং নামেই যিনি বেশি পরিচিত।

তার এই অভিষেকের মধ্য দিয়ে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশটিতে মার্কোস পরিবারের রাজনীতির চমকপ্রদ প্রত্যাবর্তন ঘটল, ১৯৮৬ সালের গণবিক্ষোভে ফিলিপিন্সের জনগণ যাদেরকে ছুড়ে ফেলেছিল।

গত মাসের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বংবং বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন; তার রানিং মেট ছিলেন সদ্য সাবেক হওয়া প্রেসিডেন্ট দুতের্তের মেয়ে সারা দুতের্তে। সারা আগেই ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় মধ্য দুপুরে ম্যানিলার জাতীয় জাদুঘরে জাঁকজমকপূর্ণ এক অনুষ্ঠানে মার্কোস জুনিয়র শপথ নেন বলে জানিয়েছে বিবিসি।

শপথের আগে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট দুতের্তে মালাকানাং প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে বংবংকে স্বাগত জানান; এসময় দুতের্তের পরণে ছিল কলারের বোতাম খোলা, হাতা গোটানো ঐতিহ্যবাহী সাদা শার্ট।

উল্টোপাল্টা কথা এবং বিরোধী, সমালোচক, মানবাধিকার কর্মী ও গণমাধ্যমের প্রতি তাচ্ছিল্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির জন্য পশ্চিমা অনেক গণমাধ্যমই দুতের্তেকে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তুলনা করে ‘প্রাচ্যের ট্রাম্প’ বলতো।

নতুন প্রেসিডেন্টের শপথ গ্রহণ উপলক্ষে ফিলিপিন্সের রাজধানীজুড়ে ১৫ হাজারের মতো নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন করা হয়।

অভিষেকের কয়েকদিন আগেই কর ফাঁকির দায়ে দোষী সাব্যস্ত হন মার্কোস জুনিয়র, কিন্তু তারপরও তার প্রেসিডেন্ট হতে কোনো বাধা নেই বলে রায় দিয়েছে ম্যানিলার সুপ্রিম কোর্ট।

৬৪ বছর বয়সী এ রাজনীতিক এমন সময়ে দায়িত্বে এলেন যখন দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশটি দীর্ঘ মহামারীর ধাক্কা সামলানোর পর্যায়ে মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি ও ক্রমবর্ধমান ঋণের চাপে আছে।

সমালোচকরা বলছেন, চাকরি বাড়ানো ও মূল্যস্ফীতি মোকাবেলায় বংবং দায়সারা গোছের প্রতিশ্রুতি দিলেও প্রকৃত নীতি সংস্কার নিয়ে তার দিক থেকে তেমন কোনো আলোচনা দেখা যায়নি।

অনেকে আবার তার দিকে তাকিয়ে আছেন তিনি দুতের্তের আমলে মাদকবিরোধী যুদ্ধে প্রাণহানি, গণমাধ্যমের টুঁটি চেপে ধরাসহ নানান কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া দেশের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার করতে পারবেন এই আশা নিয়ে।

অবশ্য মার্কোসের অভিষেকের আগের দিনই ফিলিপিন্সের একটি নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা অনুসন্ধানী সংবাদমাধ্যম র‌্যাপলার বন্ধের সিদ্ধান্তে অটল থাকছেন।

ফিলিপিন্সে যে গুটিকয় সংবাদমাধ্যম প্রেসিডেন্ট রদরিগো দুতের্তে সরকারের সমালোচনা করার সাহস দেখাতে পেরেছে, র‌্যাপলার তাদের অন্যতম।

বিবিসি লিখেছে, বংবংয়ের এই অভিষেকের মধ্য দিয়ে মার্কোসদের হারানো গৌরব পুনরুদ্ধারে কয়েক দশকের সংগ্রামের সফল সমাপ্তি ঘটল।

তার বাবা ফের্দিনান্দ ১৯৬৫ সাল থেকে ১৯৮৬ পর্যন্ত যে সময়টাতে ফিলিপিন্সের নেতৃত্বে ছিলেন তা জরুরি আইন, বিস্তৃত মানবাধিকার লংঘন, দুর্নীতি ও দারিদ্র্যের আমল হিসেবে পরিচিত ছিল।

তার শাসনের অবসান ঘটে গণঅভ্যুত্থানে, লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় নেমে এলে ২৮ বছর বয়সী বংবংসহ পুরো মার্কোস পরিবার দেশ ছেড়ে পালিয়ে হাওয়াইয়ে আশ্রয় নেয়।

১৯৯১ সালে দেশে ফেরার পর থেকে মার্কোস জুনিয়র তার বাবার শাসনামলকে সমৃদ্ধি ও উন্নতির ‘সোনালী সময়’ হিসেবে চিত্রিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আগ্রাসী প্রচারণায় জনপ্রিয়তার তুঙ্গে উঠে যান বংবং। তিনি সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় সেই তরুণ ভোটারদের কাছে, স্বৈরশাসকের সময়কাল দেখার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা যাদের নেই।

সমালাচকরা মার্কোস জুনিয়রের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চালানো প্রচারে ব্যাপক ভুল তথ্য দিয়ে তার বাবার শাসনামলের বর্বরতা ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ আনলেও বংবং তা অস্বীকার করেছেন। 

রানিং মেট হিসেবে সারা যুক্ত হওয়ায় বংবংয়ের নির্বাচনী প্রচার আরও গতি পায়। মার্কোস-সারা জোটবদ্ধ হওয়ায় দুই প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিবারের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত দুই অঞ্চল, মার্কোসদের উত্তর ফিলিপিন্স আর দুতের্তের দক্ষিণ মিন্দানাও দ্বীপ, একীভূত হয়ে দেশটির রাজনীতিতে বিরাট শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়।