ভারতের মহারাষ্ট্রে পতনের মুখে জোট সরকার

ভারতের সবচেয়ে ধনী রাজ্য মহারাষ্ট্রে রাজনৈতিক বিরোধে অনিশ্চয়তায় পড়েছে রাজ্য সরকারের ভাগ্য। রাজ্য সরকারের জ্যোষ্ঠ মন্ত্রী একনাথ শিন্ধের দাবি, ক্ষমতাসীন দল শিব সেনার ৪০ থেকে ৫৬ জন আইনপ্রণেতার সমর্থন রয়েছে তার পক্ষে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 June 2022, 03:20 PM
Updated : 22 June 2022, 03:20 PM

শিন্ধের বিদ্রোহের জেরে ক্ষমতাসীন শিব সেনা-নেতৃত্বাধীন জোট সরকার পতনের দ্বারপ্রান্তে চলে এসেছে।

বিবিসি জানায়, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ভভ ঠাকরেসহ দলের উর্ধ্বতন নেতারা একনাথ শিন্ধেকে তার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছেন। তবে তিনি এখন পর্যন্ত মত বদলানোর কোনও ইঙ্গিত দেননি।

মহারাষ্ট্রে দীর্ঘ দিনের মিত্রতার পর ২০১৯ সালের রাজ্য নির্বাচনের আগে ক্ষমতা ভাগাভাগি নিয়ে টানাপোড়েনে শিব সেনা ও ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) মধ্যে ভাঙন ধরে।

নির্বাচনে রাজ্যের বিধানসভার ২৮৮ আসনের মধ্যে বিজেপি ১০৬ আসনে জয়লাভ করে একক বৃহত্তম দল হয়। কিন্তু শিব সেনা আঞ্চলিক ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি (এনসিপি), ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস, আরও কয়েকটি ছোট দল ও স্বতন্ত্রদের সঙ্গে নিয়ে সরকার গঠন করে।

একনাথ শিন্ধে বিজেপি’র সঙ্গে ফের শিব সেনার জোট গড়তে আগ্রহী বলে শোনা যাচ্ছে। বিজেপি’কে রাজ্য সরকারে ফিরাতে চান তিনি।

এ সপ্তাহে বিবাদ বাড়ায় রাজ্যে নাটকীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। একনাথ সিন্ধে এবং মুখ্যমন্ত্রী উদ্ভভ ঠাকরে নিজেদের অনুগত আইনপ্রণেতাদের হোটেলে আটকে রাখেন, যাতে অপরপক্ষের তাদেরকে দলে টানতে না পারে।

ভারতের দলত্যাগ বিরোধী আইনের আওতায় অযোগ্যতা এড়াতে একনাথ শিন্ধের পক্ষে রাজ্যের ৩৭ আইনপ্রণেতার সমর্থন দরকার। কিন্তু তিনি দাবি করেছেন, শিব সেনার ৪০ জন এবং ৬ জন স্বতন্ত্র আইনপ্রণেতার সমর্থন রয়েছে তার পক্ষে। তবে তার এ দাবি নিরপেক্ষভাবে যাচাই করা যায়নি।

কয়েকজন সমর্থককে নিয়ে একনাথ শিন্ধে আছেন উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় বিজেপি শাসিত রাজ্য আসামের একটি হোটেলে। মঙ্গলবার সেখানে পৌঁছানোর পর তাদের স্বাগত জানিয়েছেন বিজেপি’র দুই নেতা।

সংকট কীভাবে শুরু হল?

রাজ্যে গত সোমবারের বিধান পরিষদের (legislative council) নির্বাচনের পর শিব সেনার প্রবীণ নেতা একনাথ শিন্ধের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। এরপরই সংকটের শুরু।

শিব সেনা ও তাদের মিত্ররা ১০ আসনের মধ্যে ৬ টিতে জয়ের আশা করছিলেন, কিন্তু জেতেন মাত্র পাঁচটিতে। বিজেপি চারটিতে জয়ের আশা করলেও পাঁচটিতে জয় পায় তারা।

গণমাধ্যমে তখন খবর পাওয়া যায়, একনাথ শিন্ধে শিব সেনার আরও ১১ আইনপ্রণেতাকে নিয়ে পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য গুজরাটের সুরাটে রওনা দিয়েছেন। এর জেরে মুখ্যমন্ত্রী তাকে দলের হুইপের পদ থেকে বরখাস্ত করেন।

পরে নিজের টুইটার প্রোফাইল থেকে শিব সেনার পরিচয় ঝেড়ে ফেলেন একনাথ শিন্ধে। তাকে গুজরাটের হোটেলে বিজেপি নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করতে দেখা যায়।

এখন কী ঘটছে?

মুখ্যমন্ত্রী উদ্ভভ ঠাকরের সঙ্গে ফোনে কথা বলার পর একনাথ শিন্ধে এবং তার সমর্থকরা মঙ্গলবার রাতে আসামের গুয়াহাটির উদ্দেশে রওনা দেন।

একনাথ দাবি করেন, তিনি শিব সেনা ভেঙে বেরিয়ে যাচ্ছেন না এবং আইনপ্রণেতারা দলের প্রতিষ্ঠাতা বালাসাহেব ঠাকরের হিন্দু জাতীয়তাবাদী আদর্শ সামনে এগিয়ে নেবেন। বালাসাহেব ঠাকরে মুখ্যমন্ত্রী উদ্ভভ ঠাকরের প্রয়াত বাবা।

এরপর কী ঘটবে?

বুধবার রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠক ডেকেছেন মুখ্যমন্ত্রী উদ্ভভ ঠাকরে। বৈঠকে এনসিপি নেতা শারদ পাওয়ার এবং কংগ্রেস নেতা কমল নাথ উপস্থিত থাকবেন।

শিব সেনায় দলীয় বিরোধ উস্কে দেওয়ার জন্য দলটির ঊধ্র্বতন নেতা সঞ্জয় রাউত বিজেপি’কে দায়ী করেছেন। বিজেপি মহারাষ্ট্র সরকারের পতন ঘটাতে চাইছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।

মহারাষ্ট্রে বর্তমানে ২৮৭ আসনের বিধানসভায়বিজেপি আইনপ্রণেতার সংখ্যা ১১৩ জন। বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে এবং সরকার গঠন করতে তাদের প্রয়োজন ১৪৫ আসন।