‘মানবিক বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে’ ইউক্রেইনের মারিওপোল

রুশ বাহিনীর ১৫ ঘণ্টারও বেশি সময়ের লাগাতার বোমা হামলার পর ইউক্রেইনের মারিওপোল বন্দরনগরী ‘মানবিক বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে’ পৌঁছেছে বলে বিবিসি-কে জানিয়েছেন নগরীর উপ-মেয়র সের্গিয়ে ওরলোভ।

“রাশিয়ার সেনাবাহিনী এই নগরীতে তাদের সব অস্ত্রই ব্যবহার করছে। কামানের গোলা, রকেট, বিমান কোনওকিছুই বাদ নেই। তারা নগরীকে ধ্বংস করে দিতে চাইছে” বলে জানিয়েছেন ওরলোভ।

তিনি বলেন, রাশিয়ার বাহিনী সব দিকই থেকে নগরীর কয়েক কিলোমিটার দূরে আছে। তারা নগরীর অবকাঠামোর ওপর বিমান হামলা চালাচ্ছে। এতে নগরীর কয়েকস্থানে পানি, বিদ্যুৎ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

বিবিসি জানায়, নগরীর বাম প্রান্তের জনবহুল একটি আবাসিক এলাকা ‘প্রায় পুরোটাই ধ্বংস হয়ে গেছে’ বলে ওরলোভ জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, “সেখানে কতজন মারা গেছে সে সংখ্যা আমরা বলতে পারিনা, কিন্তু আমাদের ধারণা- অন্তত কয়েকশ’ মানুষ মারা গেছে। আমরা মৃতদেহ উদ্ধার করতে সেখানে যেতে পারছি না। আমার বাবা সেখানে থাকেন। তার কাছে আমি পৌঁছতে পারছি না। জানি না তিনি বেঁচে আছেন নাকি মারা গেছেন।”

ওরলোভ জানান, রুশ বাহিনী মারিওপোলের পাম্প স্টেশন, বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। নগরীর কয়েকজায়গায় খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে। এতে মানবিক বিপর্যয় ঘনিয়ে আসার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।

মারিওপোল দখলে নেওয়া কৌশলগত দিক থেকে রাশিয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এই নগরীর অবস্থান ২০১৪ সালে রাশিয়ার দখল করে নেওয়া ক্রিমিয়া উপদ্বীপের কাছে। তাই মারিওপোল দখলে এলে পূর্ব ইউক্রেইনের রুশ-সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনীর জন্য ক্রিমিয়ায় থাকা সেনাদের সঙ্গে যোগ দেওয়ার পথ সুগম হবে।

মারিওপোলের উপ-মেয়র সের্গিয়ে ওরলোভ বলেন, “বুধবার সকালেই রুশ বাহিনী সব দিক থেকে নগরীর কয়েক কিলোমিটার দূরে অবস্থান নিয়েছে। ইউক্রেইনের সেনাবাহিনী খুবই সাহসী। তারা নগরীকে রক্ষার জন্য লড়ে যাবে। কিন্তু রাশিয়ার সেনাবাহিনী যে কায়দায় হামলে পড়েছে তা দস্যুদের মতো। তারা সেনাবাহিনীর সঙ্গে লড়ছে না। তারা কেবল গোটা অঞ্চল ধ্বংস করে দিচ্ছে।”

“ইউক্রেইনের সেনাবাহিনীর ওপর আমাদের ভরসা আছে। কিন্তু আমরা ভয়াবহ পরিস্থিতিতে পড়েছি।” বুধবার ইউক্রেইনের বড় কয়েকটি নগরীর আবাসিক এলাকায় বোমা হামলা হওয়ায় বেসামরিক নাগরিক হতাহতের ঘটনা বেশি ঘটার খবর পাওয়া গেছে।

ইউক্রেইনের জরুরি সেবা বিভাগ রাশিয়ার আগ্রাসনে এ পর্যন্ত ২ হাজারের বেশি বেসামরিক নাগরিক মারা গেছে বলে জানিয়েছে। তবে বিবিসি এই সংখ্যা নিরপেক্ষ সূত্রে যাচাই করতে পারেনি। ওদিকে, জাতিসংঘ মঙ্গলবার এক হিসাবে জানিয়েছে, বেসামরিক নাগরিক নিহতের সংখ্যা ১৩৬। যদিও প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে বলেও জানিয়েছে তারা।