রত্নচুরি নিয়ে সৌদি আরব-থাইল্যান্ডের দীর্ঘ বিরোধের অবসান

প্রিন্সের প্রাসাদ থেকে দামী রত্ন চুরি এবং এর জেরে কূটনীতিক হত্যাকাণ্ড নিয়ে সৌদি আরব ও থাইল্যান্ডের মধ্যে চলা দীর্ঘ ৩০ বছরের বিরোধের অবসান হয়েছে। দুই দেশের মধ্য আবার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে পূর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্ক।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Jan 2022, 03:09 PM
Updated : 26 Jan 2022, 03:09 PM

মঙ্গলবার থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুথ চান-ওচার সৌদি আরব সফরকালে দুই দেশের মধ্যে এই কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হল।

বিবিসি জানায়, এর ফলে থাইল্যান্ডের শ্রমিকরা আবারও সৌদি আরবে কাজ করতে যেতে পারবেন। সারা বিশ্ব থেকে প্রতিবছর লাখ লাখ শ্রমিক কাজের সন্ধানে সৌদি আরব যান।

তাছাড়া, পর্যটন এবং পেট্রোকেমিক্যাল খাতেও দুই দেশের মধ্যে আবার সহযোগিতার সম্পর্ক স্থাপিত হতে পারে। সৌদি আরব এয়ার লাইন্স এরই মধ্যে আগামী মে মাস থেকে পুনরায় থাইল্যান্ডে সরাসরি ফ্লাইট চালুর ঘোষণা দিয়েছে।

১৯৮৯ সালে সৌদি আরবের এক প্রিন্সের প্রাসাদ থেকে দামী দামী রত্ন ও গহনা চুরি করে পালান থাইল্যান্ডের নাগরিক ক্রিয়াঙ্করাই তেকামং। ক্রিয়াঙ্করাই প্রসাদের পরিচ্ছন্নতাকর্মী ছিলেন। চুরি যাওয়া রত্নের মধ্যে ৫০ ক্যারেট ওজনের নীল রঙের একটি বিরল হীরাও ছিল। যেটি আজ পর্যন্ত উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

চুরির ওই ঘটনার একবছর পর থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে সৌদি আরবের তিন কূটনীতিক গুলিতে নিহত হয়েছিলেন। আর তদন্ত করতে যাওয়া এক সৌদি কর্মকর্তা নিখোঁজ হয়ে যান। থাইল্যান্ডের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ পুলিশ এই অপরাধে জড়িত থাকলেও তাদের কখনও সাজা দেওয়া হয়নি।

কী ছিল সেই নীল হীরা চুরির রহস্য:

থাই পরিচ্ছন্নতাকর্মী ক্রিয়াঙ্করাই সৌদি আরবের তৎকালীন বাদশাহ কিং ফহাদের বড় ছেলে প্রিন্স ফসয়ালের বাড়িতে কাজ করতেন। সেখান থেকে রত্ন চুরি করে ক্রিয়াঙ্কারাই থাইল্যান্ডে পালিয়ে যান। চুরি করা রত্ন ও গহনার প্রকৃত মূল্য ক্রিয়াঙ্করাই জানতেন না।

ক্রিয়াঙ্করাই যেসব গহনা চুরি করেছিলেন তার কিছু অংশ থাইল্যান্ড পুলিশ সৌদি আরবের কাছে ফিরিয়ে দেয়। যেগুলোর অর্থ মূল্য দুই কোটি ডলারের বেশি। কিন্তু সৌদি আরবে পরীক্ষার পর জানা যায়, ফিরিয়ে দেওয়া গহনাগুলো সব নকল।

এছাড়া, চুরি যাওয়া গহনা নিয়ে তদন্ত করতে থাইল্যান্ডে যাওয়া এক সৌদি কর্মকর্তা নিখোঁজ হন। থাইল্যান্ডের দুই ব্যক্তি যারা চুরির ঘটনা সম্পর্কে জানতেন তাদেরও রহস্যজনকভাবে মৃত্যু হয়। এত সব কাণ্ডে ক্রিয়াঙ্করাই এবং এক পুলিশ কর্মকর্তা ছাড়া আর কারও সাজা হয়নি।

সৌদি আরবের অভিযোগ, থাই পুলিশ এ ঘটনায় ঠিকঠাক মত তদন্ত করেনি। বরং ‍জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তারা চুরি যাওয়া গহনাগুলো জব্দ করেছে এবং সৌদি কূটনীতিকদের হত্যাকাণ্ড নিয়ে ‘চুপ’ থেকেছে।

চুরি কেলেঙ্কারির পর থাই প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুথ চান-ওচার এবারের সফরই থাইল্যান্ড সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের কারও প্রথম সৌদি আরব সফর। এক যৌথ বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুথ বলেন, ১৯৮৯ এবং ১৯৯০ সালে থাইল্যান্ডে ঘটে যাওয়া দুঃখজনক ঘটনার জন্য তিনি ‘আন্তরিকভাবে অনুশোচনা’ প্রকাশ করছেন।

 বিবিসি জানায়, সৌদি আরবের সঙ্গে বিরোধের কারণে কোটি কোটি ডলারের বাণিজ্য ক্ষতি হয়েছে। তাছাড়া, ওই সময় সৌদি আরবে কাজ করা প্রায় তিন লাখ থাই শ্রমিক কাজ হারিয়েছেন। সৌদি প্রিন্সের বাড়ি থেকে চুরি যাওয়া বেশিরভাগ গহনাই আর কখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি।

বিশেষ করে নীল যে হিরাটি খোয়া গেছে সে ধরনের হীরা বিশ্বে খুবই বিরল। অমূল্য সেই হীরাটি কোথা থেকে সৌদি প্রিন্সের হাতে পড়েছিল তা জানা যায়নি। এমনকী সেটির কোনও ছবির খোঁজও এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।