ভারতে ঘৃণা ছড়ানো বক্তব্য দিয়ে গ্রেপ্তার কে এই হিন্দু পুরোহিত?

ভারতে উত্তর প্রদেশের এক মন্দিরের পূজারী গতমাসে মুসলিম-বিদ্বেষী বক্তব্য দিয়ে সমাজে ঘৃণা উস্কে দেওয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছেন। কে সেই পুরোহিত?

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Jan 2022, 05:08 PM
Updated : 20 Jan 2022, 05:08 PM

তার পরিচয় তুলে ধরে এক প্রতিবেদনে বিবিসি জানিয়েছে, এই পুরোহিতের নাম ইয়াতি নরসিংহআনন্দ সরস্বতী। বয়স ৫৮ বছর। তিনি উত্তর প্রদেশের প্রভাবশালী দশনা দেবী মন্দিরের প্রধান।

সম্প্রতি হরিদ্বার নগরীতে এক অনুষ্ঠানে কট্টর ডানপন্থি হিন্দু নেতারা জনসম্মুখে মুসলমানদের বিরুদ্ধে নৃশংসতা চালানোর কথা বলেন। ওই অনুষ্ঠানের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়।

সাধারণ মানুষ তীব্র সামলোচনা শুরু করে। সচেতন নাগরিক সমাজ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং পুলিশের কাছে খোলা চিঠি লেখে।

সুপ্রিম কোর্টে একটি পিটিশন দায়ের করে এ বিষয়ে স্বাধীন তদন্তের আবেদন করা হয়েছে। নরসিংহআনন্দকে নিয়ে বিতর্ক এবারই প্রথম নয়। বরং দিনের পর দিন তিনি নারী এবং সংখ্যালঘুদের নিয়ে আক্রমণাত্মক এবং বিদ্বেষমূলক বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লাখ লাখ মানুষ তার ভিডিও দেখেছেন। তার অসংখ্য অনুসারী রয়েছে। তিনি মুসলমানদের দিনের পর দিন ‘রাক্ষস’ বলে বর্ণনা করে তাদের ‘বিনাশ করার’ হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি ভারত থেকে মুসলমানদের ‘নিশ্চিহ্ন’ করে দেওয়ার হুমকিও দিয়েছেন।

গত বছর সেপ্টেম্বরে উত্তর প্রদেশ পুলিশের কাছে নরসিংহআনন্দের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা হয়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, একটি ভিডিওতে তিনি নারী রাজনীতিবিদদেরকে তাদের পুরুষ সহকর্মীদের রক্ষিতা বলে গালি দিয়েছেন। যেটি ভাইরাল হয়।

নরসিংহআনন্দের বিরুদ্ধে এরই মধ্যে ২০টির বেশি মামলা হয়েছে বলে ‍জানান তার আইনজীবী। সেগুলোর মধ্যে ১০টি মামলার তথ্য পুলিশ বিবিসি-কে দিয়েছে। সেখানে দেখা যায়, তার বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা, আত্মহত্যায় প্ররোচণা এবং ডাকাতির মামলা রয়েছে।

নরসিংহআনন্দের সহযোগী অনিল যাদব অহংকার করে বলেন, ‘‘ওই মামলাগুলো আমাদের গহনা। সেগুলো কোনো সমস্যা না।” বিবিসি থেকে নরসিংহআনন্দ কে তার বিদ্বেষ ছড়ানো বক্তব্যের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি উত্তেজিত হয়ে উঠেন এবং মাইক ছুড়ে ফেলেন।”

জানা যায়, নরসিংহআনন্দ একজন প্রকৌশলী। তিনি রাশিয়ায় লেখাপড়া করেছেন এবং যুক্তরাজ্যে কাজ করেছেন। ভারতে ফেরার পর ২০০৭ সালে তিনি দশনা মন্দিরের প্রধান পুরোহিত হিসেবে কাজ শুরু করেন।

সমালোচকরা বলছেন, উত্তর প্রদেশে বিধানসভা নির্বাচনের ভোটের আগে ভোটারদের ধর্মীয় অনুভূতিকে আলোড়িত করতে হরিদ্বারে ওই ঘৃণা ছড়ানো বক্তব্য রেখেছেন নরসিংহআনন্দ এবং অন্যান্যরা।

ভারতের সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য উত্তর প্রদেশে আগামী ফেব্রুয়ারিতে বিধানসভা নির্বাচনের ভোট। রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী বিজেপি নেতা যোগী আদিত্যনাথ। তিনি নিজেও চরম মুসলিম-বিদ্বেষী।

বিজেপি নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণেই সমাজে বার বার বিদ্বেষ ছড়িয়েও নরসিংহআনন্দ পার পেয়ে যান বলে মনে করেন তার সমালোচকরা।

দিল্লির সাংবাদিক আলিশান জাফরি বিবিসি-কে বলেন, ‘‘তিনি যে বক্তব্য দিয়েছেন এবং আন্তর্জাতিকভাবে তার যে প্রভাব পড়েছে তাতে বিজেপির কোনও পরিচিত নেতা এখন আর তাকে সহায়তা করবেন না। যদিও তিনি সমাজে যে ধরনের বিদ্বেষ ও ঘৃণার সৃষ্টি করতে পেরেছেন সেটাতে বিজেপি সরাসরি লাভবান হয়েছে।”

এখন পর্যন্ত ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) কোনও নেতা হরিদ্বারের ওই অনুষ্ঠান বা সেখানে যে ধরনের বক্তব্য দেওয়া হয়েছে সেগুলো নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি বলে জানায় বিবিসি। বিজেপি নেতা এবং দলটির সাবেক মুখপাত্র অশ্বিনি উপাধ্যায় হরিদ্বারের ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

যদিও তিনি দাবি করেছেন, অনুষ্ঠানের শেষ দিন মাত্র আধাঘণ্টার জন্য তিনি সেখানে গিয়েছিলেন। বিবিসি জানায়, পুলিশ ‘সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার উস্কানি দেওয়া’ এবং ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার’ অভিযোগে নরসিংহআনন্দ এবং ওই অনুষ্ঠানে থাকা আরও বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে।