মিয়ানমারকে ছাড়া শুরু আসিয়ান সম্মেলন, জান্তার তীব্র সমালোচনায় নেতারা

মিয়ানমারের কোনও প্রতিনিধির উপস্থিতি ছাড়াই শুরু হয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট আসিয়ান- এর বার্ষিক সম্মেলন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Oct 2021, 12:36 PM
Updated : 26 Oct 2021, 12:36 PM

মঙ্গলবার এ সম্মেলনের শুরুতেই নেতারা মিয়ানমার জান্তা সরকারের তীব্র সমালোচনা করেছেন।

ক্যাম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন সেন বলেছেন, “আজ আসিয়ান তাদের কর্মকাঠামো থেকে মিয়ানমারকে বাদ দেয়নি। মিয়ানমারই তাদের অধিকার পরিহার করেছে।”

“এখন আমরা আসিয়ানে এক সদস্যকে ছাড়া ‘মাইনাস-ওয়ান’ পরিস্থিতিতে পড়েছি। এ পরিস্থিতি আসিয়ানের কারণে নয়, মিয়ানমারের কারণে সৃষ্টি হয়েছে।”

ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেত্নো মারসুদি বলেন, “আসিয়ানে মিয়ানমারের জন্য স্লট প্রস্তুত আছে। কিন্তু মিয়ানমার তাতে যোগ না দেওয়াটাই বেছে নিয়েছে।”

ছয় মাস আগে মিয়ানমারে শান্তি ফেরানোর একটি পরিকল্পনায় রাজি হয়েও প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় এবারের শীর্ষ সম্মেলনে দেশটির জান্তা প্রধান মিন অং হ্লাইংকে আমন্ত্রণ জানায়নি আসিয়ান।

তবে আসিয়ান জানিয়েছিল, তারা সম্মেলনে মিয়ানমারের জান্তা প্রধানের বদলে একজন অরাজনৈতিক প্রতিনিধিকে স্বাগত জানাবে। কিন্তু সোমবার সে আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে মিয়ানমার জানায়, সম্মেলনে তারা কেবল একজন নেতা কিংবা মন্ত্রীর উপস্থিত থাকাটাই মেনে নেবে।

মিয়ানমার সম্মেলনে অংশ নেওয়া থেকে বিরত থাকার এই সিদ্ধান্ত নিয়ে আসিয়ানের কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় অনভিপ্রেত মনোভাব দেখিয়েছে-  আসিয়ানের নেতাদের উদ্দেশে এক মন্তব্যে ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো এমন কথাই বলেছেন বলে জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেত্নো।

তিনি বলেন, “মিয়ানমারের একজন অরাজনৈতিক প্রতিনিধিকে সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া খুব সহজ ছিল না। কিন্তু এটি করতে হয়েছে।”

 “প্রেসিডেন্ট একথাই স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে, সদস্যদেশগুলোর অভ্যন্তরীন বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার নীতিকে সম্মান জানানো আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আবার অন্যদিকে, গণতন্ত্র, সুশাসন, মানবাধিকারের প্রতি সম্মান এবং সাংবিধানিক সরকারের মতো বিষয়গুলোতে আমাদের নীতি সমুন্নত রাখতেও আমরা দায়বদ্ধ,” বলেন রেত্নো।

গত ১৬ অক্টোবর আসিয়ানের শীর্ষ সম্মেলন থেকে মিয়ানমারের জান্তাপ্রধান মিন অং হ্লাইংকে বাদ দিতে নজিরবিহীনভাবে একমত হয় জোটের সদস্য দেশগুলো। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে অং সান সু চির নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে দেশটির ক্ষমতা দখল করেন হ্লায়িং।

ওই অভ্যুত্থানের পর থেকেই মিয়ানমারজুড়ে সহিংসতা এবং বিশৃঙ্খলা শুরু হয়। এই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সামাল দেওয়া এবং দেশে মানবিক ত্রাণ প্রবেশ করতে দিতেও ব্যর্থ হন হ্লায়িং। তাছাড়া, মিয়ানমারে শান্তি ফেরাতে এপ্রিলে আসিয়ানকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বিরোধীদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করতে ব্যর্থতার কারণেও হ্লায়িংকে সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।

সদস্য দেশগুলোর অভ্যন্তরীন বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা বা সম্পৃক্ত না হওয়ার নীতি মেনে চলা আসিয়ানের এই পদক্ষেপ নেওয়াটা ছিল খুবই বিরল এবং কড়া। আর মিয়ানমারের সামরিক শাসকের জন্য আসিয়ানের এ সিদ্ধান্ত ছিল বড় ধরনের অপমান।

মিয়ানমার আসিয়ানের এই সিদ্ধান্তে ঘোর আপত্তি জানিয়ে বলেছিল, সম্মেলনে সামরিক নেতাকে আমন্ত্রণ না জানানোর কারণে মিয়ানমার জান্তা ‘চরম হতাশ’। আসিানের এই সিদ্ধান্ত এবং মিয়ানমারের প্রতিনিধিত্বের বিষয়ে আসিয়ান যে ফয়সালা করেছে তা আমাদের সঙ্গে আলোচনা না করেই নেওয়া হয়েছে এবং তা আসিয়ানের লক্ষ্য বিরোধী।