সাদিক খান আবারও লন্ডনের মেয়র

লেবার পার্টির প্রার্থী সাদিক খানকে দ্বিতীয় মেয়াদে মেয়র হিসেবে বেছে নিয়েছেন লন্ডনবাসী।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 May 2021, 03:07 AM
Updated : 9 May 2021, 07:02 AM

লন্ডনের মেয়র নির্বাচনে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কনজারভেটিভ পার্টির প্রার্থী শন বেইলিকে হারিয়েছেন তিনি।

সাদিক ৫৫ দশমিক ২ শতাংশ ভোট পেয়েছেন; আর বেইলি ৪৪ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট।

বিবিসি বলছে, প্রথম দফায় কোনো প্রার্থী সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় পরের দ্বিতীয় দফা ভোট হয়। তবে পরের দফায় মাত্র ১ দশমিক ৬ শতাংশ ভোট বাড়াতে পেরেছেন বেইলি।

এই ভোটে গ্রিন পার্টির প্রার্থী সিয়ান বেরি তৃতীয় অবস্থানে এবং লিবারেল ডেমোক্র্যাট দলের লুইসা পোরিট চতুর্থ অবস্থানে রয়েছেন। পাঁচ শতাংশের কম ভোট পাওয়ায় লুইসার জামানতও বাজেয়াপ্ত হয়েছে।

২০১৬ সালে প্রথম মেয়াদে জয়লাভের পর সাদিক খান যুক্তরাজ্যের রাজধানীর প্রথম মুসলিম মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর রাজধানীর প্রথম মুসলিম মেয়রও তিনি।

নির্বাচনের প্রচারের শুরু থেকেই সাদিক খান সম্ভাব্য বিজয়ী হিসেবে উঠে আসেন। কয়েকটি জরিপে এমন পূর্বাভাসও দেওয়া হয় যে, প্রথম দফার ভোটেই তিনি অর্ধেকের বেশি ভোট পেয়ে জয়ী হতে পারেন।

২০১৬ সালের রেকর্ড সংখ্যক ভোটের সংখ্যা এবার ছুঁতে না পারলেও ২ লাখ ২৮ হাজার ভোটের ব্যবধানে জিতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছেন তিনি।

শনিবার ফল ঘোষণার পর সাদিক খান বলেন, “আমি সবসময়ই লন্ডনবাসীর মেয়র হয়ে থাকব, নগরীর প্রত্যেকটি মানুষের জীবনমান উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাব।

“যুক্তরাজ্যজুড়ে নির্বাচনের ফল দেখিয়েছে আমাদের দেশ, এমনকি আমাদের এই শহরও, মারাত্মকভাবে বিভাজিত হয়ে আছে। ব্রেক্সিটের ক্ষত এখনও শুকায়নি। একটি নিষ্ঠুর সাংস্কৃতিক যুদ্ধ আমাদেরকে আরও বিভক্ত করে ফেলছে। লন্ডনে ও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অর্থনৈতিক বৈষম্য বেড়েই চলেছে।”

মহামারীর এই দুর্যোগ কাটিয়ে অর্থনীতিকে আরও মজবুত করে আরও ঐক্যবদ্ধ শহর ও দেশ গড়ার প্রত্যয় জানান সাদিক খান।

সাদিককে অভিনন্দন জানিয়ে বেইলি বলেন, পুনর্নির্বাচিত মেয়র সবকিছুর জন্য সরকারের ওপর দোষারোপ থেকে বিরত থাকবেন বলে তার আশা।

এই বিজয়ের মাধ্যমে রাজধানী লন্ডনে নিজেদের অধিপত্য ধরে রেখেছে লেবার পার্টি, লন্ডন অ্যাসেম্বলিতেও তারা সবচেয়ে বড় দল হিসেবে জায়গা ধরে রেখেছে।

লন্ডনের নয়টি আসনে জিতেছে লেবার প্রার্থীরা, বাকি পাঁচটি আসন পেয়েছে কনজারভেটিভরা।

একনজরে সাদিক খান

পাকিস্তানি একজন বাস ড্রাইভারের আট সন্তানের একজন সাদিক খানের জন্ম ১৯৭০ সালে দক্ষিণ লন্ডনে। ভাইবোনদের মাঝে পঞ্চম সাদিক সাউথ লন্ডনের টুটিং এলাকায় বেড়ে উঠেন।

১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের সময় তার দাদা-দাদী ভারত থেকে পাকিস্তানে পাড়ি জমিয়েছিলেন। সাদিক খানের জন্মের কিছুদিন আগে তার বাবা-মা যুক্তরাজ্যে চলে আসেন। তার বাবা প্রয়াত আমানুল্লাহ খান ২৫ বছর বাসচালক হিসেবে কাজ করেছেন। মা শেহরান ছিলেন একজন দর্জি।

খেলাধুলায় বিশেষ আগ্রহী সাদিক খান তরুণ বয়সে বর্ণবাদীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য বক্সিং শেখেন। একজন তরুণ হিসেবে সারে ক্রিকেট ক্লাবে খেলেন তিনি।

১৫ বছর বয়সে সাদিক খান লেবার পার্টির সদস্য হন। তিনি হতে চেয়েছিলেন একজন দন্তচিকিৎসক। কিন্তু স্কুলে সবসময় বিভিন্ন ইস্যুতে বিতর্ক করতেন বলে তার প্রধান শিক্ষক তাকে আইন বিষয়ে পড়ার পরামর্শ দেন।

ইউনিভার্সিটি অব নর্থ লন্ডনে আইন বিষয়ে পড়াশোনা করেন সাদিক। টুটিংয়ে স্থানীয় কাউন্সিলে তিনি ১২ বছর কাউন্সিলরের দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৫ সালে এই এলাকা থেকে লেবার পার্টির এমপি নির্বাচিত হন সাদিক খান।

২০০৮ সালে সাদিক খান প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউনের মন্ত্রিসভায় মিনিস্টার অব স্টেট ফর কমিউনিটিস হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি পরিবহনমন্ত্রীর দায়িত্ব পান।

দুই সন্তানের জনক সাদিক খানের স্ত্রী সাদিয়াও একজন আইনজীবী।