লতিফার অভিযোগ, ২০১৮ সালে দুবাই থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টার পর থেকে তার বাবা তাকে জিম্মি করে রেখেছেন।
সম্প্রতি ধারণকৃত কিছু ভিডিওতে তিনি নিজের জীবন নিয়ে শঙ্কার কথাও জানিয়েছেন বলে বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
গোপনে রেকর্ড করা ওই ফুটেজগুলো প্রকাশিত হওয়ার পর প্রিন্সেস লতিফার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে জাতিসংঘের উপর চাপ বাড়তে থাকে।
পরে জাতিসংঘের মানবাধিকার হাই কমিশনারের কার্যালয় দুবাইয়ের শাসকের মেয়ের বিষয়ে আমিরাতকে জিজ্ঞাসা করা হবে বলে ইঙ্গিত দেয়।
প্রিন্সেস লতিফার ভিডিও পর্যালোচনা শেষে জাতিসংঘের ওয়ার্কিং গ্রুপ অন আরবিট্রারি ডিটেনশন এ সংক্রান্ত একটি তদন্তের সূচনা করতে পারে বলে জানিয়েছেন একজন মুখপাত্র।
যুক্তরাজ্য জানিয়েছে, সরাসরি সম্পর্কিত না হলেও তারা এ বিষয়টির ওপর কড়া নজর রাখবে।
বিশ্বের শীর্ষ ধনী রাষ্ট্রপ্রধানদের অন্যতম শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুম দুবাইয়ের শাসক এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভাইস প্রেসিডেন্ট।
তিনি চমৎকার একটি শহর নির্মাণে অসাধারণ সফলতা দেখালেও শহরটিতে ভিন্নমতের কোনো স্থান নেই এবং এর বিচারব্যবস্থায় নারীদের প্রতি বৈষম্যের সুযোগ রয়েছে বলে ভাষ্য মানবাধিকার কর্মীদের।
মাকতুমের মেয়ে লতিফা ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে বন্ধুদের সহযোগিতায় দুবাই থেকে পালিয়ে নতুন জীবন শুরুর চেষ্টা করেছিলেন।
“আমার গাড়ি চালানোর অনুমতি নেই, ভ্রমণ কিংবা দুবাই ছাড়ারও অনুমতি নেই,” পালানোর আগে ধারণ করা এক ভিডিওতে এমনটাই বলেছিলেন প্রিন্সেস লতিফা।
সেবার দুবাই থেকে পালানোর কয়েকদিন পরই ভারত মহাসাগরের একটি নৌকায় কমান্ডোদের হাতে ধরা পড়েন তিনি। কমান্ডোরা তাকে উড়িয়ে দুবাই নিয়ে যায়, এরপর থেকে তিনি সেখানেই আছেন।
লতিফার বাবা বলছেন, মেয়ের স্বার্থের কথা বিবেচনায় নিয়েই তিনি এমনটা করেছেন। দুবাই এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত এর আগে বলেছিল, প্রিন্সেস লতিফা পরিবারের কাছে নিরাপদ আছেন।
ঘোড়দৌড়ের বিরাট ব্যবসা আছে মাকতুমের; তাকে নিয়মিতই ইংল্যান্ডের এসকটে অনুষ্ঠিত চার দিনের রাজকীয় ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতার (রয়েল এসকট) মতো বড় বড় অনুষ্ঠানে দেখা যায়। দুবাইয়ের এ শাসককে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মেয়ে লতিফা এবং স্ত্রী হায়া বিনতে আল হুসেইনকে নিয়ে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে।
লতিফার সৎ মা হায়া ২০১৯ সালে নিজের দুই সন্তান নিয়ে লন্ডনে পালিয়ে যান।
প্রিন্সেস লতিফার ভিডিওগুলো পাওয়ার পর দুবাইয়ের শাসকের এ মেয়েকে কোথায় আটকে রাখা হয়েছে তা স্বতন্ত্রভাবে যাচাই করে দেখেছে বিবিসি প্যানারোমা।
কমান্ডোদের হাতে ধরা পড়ে দুবাই আসার এক বছর পর গোপনে পাওয়া একটি ফোনে লতিফা গত কয়েক মাসে ধরে ভিডিওগুলো রেকর্ড করেন। একটি বাথরুমের ভেতর তিনি এ এগুলো রেকর্ড করেছিলেন, কেননা সেটিই ছিল একমাত্র কক্ষ, যার দরজা তিনি বন্ধ করতে পারতেন।
ভিডিওগুলো লতিফা জানিয়েছেন, কোনো চিকিৎসা ও আইনি সহায়তা ছাড়াই নিঃসঙ্গ অবস্থায় তাকে একটি ভিলায় আটকে রাখা হয়েছে, ভিলাটির জানালা ও দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং পুলিশ সেখানে পাহারা দিচ্ছে।