কোভিড-১৯: ডব্লিউএইচও তদন্ত দলকে ‘গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেয়নি’ চীন

বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষের প্রাণ নেওয়া নতুন করোনাভাইরাসের উৎস খুঁজতে উহানে যাওয়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তদন্ত দলকে চীনা কর্তৃপক্ষ ‘গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেয়নি’ বলে তদন্ত দলের একজন সদস্য জানিয়েছেন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Feb 2021, 07:56 PM
Updated : 13 Feb 2021, 07:56 PM

তদন্ত দলের সদস্য অস্ট্রেলিয়ান অণুজীব বিজ্ঞানী ডোমিনিক ডুয়ের রয়টার্স, ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল ও নিউ ইয়র্ক টাইমসকে বলেছেন, প্রথম দিকে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শনাক্ত হওয়া রোগীদের সম্পর্কিত প্রাথমিক তথ্য (র ডেটা) চেয়েছিলেন তারা। কিন্তু তাদের শুধু সারসংক্ষেপ দেওয়া হয়েছে।

এই অভিযোগের বিষয়ে কোনো বক্তব্য দেয়নি চীনা কর্তৃপক্ষ। তবে আগে থেকে তারা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তদন্ত দলের সঙ্গে স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করার দাবি করে আসছে।

এই পরিস্থিতিতে চীনের প্রতি তথ্য সরবরাহের আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন নিয়ে ‘গভীর উদ্বেগের’ কথা জানিয়েছে তারা।

গত সপ্তাহে চীনে তদন্ত শেষ করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তদন্ত দলের পক্ষ থেকে বলা হয়, উহান শহরের গবেষণাগার থেকে করোনাভাইরাস ছড়ানোর সম্ভাবনা ‘নেই বললেই চলে’ বলে তাদের মনে হয়েছে।

২০১৯ সালের শেষ দিকে উহানে প্রথম নতুন করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এরপর এই এক বছর দেড় মাসে বিশ্বজুড়ে ১০ কোটি ৮২ লাখের বেশি মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, আর এতে প্রাণ হারিয়েছেন ২৩ লাখ ৮৪ হাজারের বেশি মানুষ।

ডব্লিউএইচও তদন্ত দল যা দেখতে চেয়েছিল

অধ্যাপক ডোমিনিক ডুয়ের রয়টার্সকে বলেছেন, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে উহানে যে ১৭৪ জনের কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়েছিল তাদের বিষয়ে ‘র ডেটা’ চেয়েছিলেন তারা।

প্রথম দিকে যাদের এই রোগ ধরা পড়েছিল তাদের অর্ধেকের উহানের সেই আলোচিত সি ফুড মার্কেটের সঙ্গে সম্পৃক্ততা ছিল।

গত ১৩ ফেব্রুয়ারি উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলোজি পরিদর্শন করেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তদন্ত দলের সদস্যরা, এই গবেষণাগার থেকে ভাইরাস ছড়ানোর যে কথা বলা হয়েছে তা দৃশ্যত নাকচ করেছেন তারা।

অধ্যাপক ডুয়ের বলেন, “সে কারণে আমরা খুব করে ওটা চাচ্ছিলাম। কেন তা দেওয়া হয়নি সে বিষয়ে আমি মন্তব্য করতে পারব না।

“রাজনৈতিক কারণ নাকি সময় ছিল না অথবা এটা কঠিন ছিল… নাকি অন্য কোনো কারণ ছিল তথ্যগুলো না পাওয়ার পেছনে- তা আমি জানি না।”

তদন্ত দলের আরেক সদস্য ডেনমার্কের ইম্যুনোলোজিস্ট কোলসেন ফিশার নিউ ইয়র্ক টাইমসকে বলেছেন, তিনি এই তদন্তকে পেয়েছেন ‘খুবই ভূরাজনৈতিক’ বিষয় হিসেবে।

“সবাই জানে তদন্তের জন্য চীনের ওপর কী পরিমাণ চাপ রয়েছে এবং এটা নিয়ে তাদেরকে কীভাবে দোষারোপ করা হচ্ছে।”

অধ্যাপক ডোমিনিক ডুয়ের বলেন, তথ্য সরবরাহে বিধি-নিষেধের বিষয়টি ডব্লিউএইচওর চূড়ান্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হবে। আগামী সপ্তাহেই এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হতে পারে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই তদন্ত দল জানুয়ারির শুরুর দিকে গিয়ে চীনে চার সপ্তাহ অবস্থান করে। প্রথম দুই সপ্তাহ তাদের কেটে যায় হোটেল কোয়ারেন্টিনে।

চীনের জবাবে যা ছিল

তদন্তকারীরা নিউ ইয়র্ক টাইমসকে জানিয়েছেন, চীনা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তাদের বেশ কিছু বিষয়ে মতভিন্নতা ছিল, যার মধ্যে রোগীর রেকর্ড দেখার বিষয়ও ছিল। এগুলো নিয়ে দুই পক্ষে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ও হয়েছে।

গত মাসে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদনে তদন্ত নিয়ে চীনের প্রারম্ভিক সাড়ার সমালোচনা করে বলা হয়, জনস্বাস্থ্যের বিষয়ে ‘আরও বলপ্রয়োগ করা যেত’।

হিমায়িত খাবার পরিবহন ও বাণিজ্যের মধ্য দিয়ে ভাইরাসটি ছড়ানোর শঙ্কার দিকে ইঙ্গিত করে ‘কোল্ড চেইন’ সংক্রমণের সম্ভাবনার বিষয়ে আরও তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন তারা।