অর্থ আত্মসাৎ মামলায় স্থগিত দণ্ডের প্যারোলের শর্ত লঙ্ঘনের দায়ে সোমবার মস্কোর একটি আদালত তার ৩০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করার পর তিনি এ আহ্বান জানান।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, বিষপ্রয়োগে অসুস্থ হওয়ার পাঁচ মাস পর রাশিয়ায় নেমেই গ্রেপ্তার ও রিমান্ডের মুখোমুখি হলেন ‘ক্রেমলিনের শত্রু’ হিসেবে পরিচিত নাভালনি।
সোমবার আদালতের আদেশের আগে জাতিসংঘ ও পশ্চিমা দেশগুলো নাভালনিকে ছেড়ে দিতে মস্কোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছিল।
নাভালনির বিচার পূর্ববর্তী আটকাদেশ বা রিমান্ডের প্রতিক্রিয়ায় কয়েকটি দেশ রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপেরও ডাক দিয়েছে। এর প্রতিক্রিয়ায় মস্কো ওই দেশগুলোকে ‘নিজের চরকায় তেল দিতে’ বলেছে।
মস্কোর প্রিজন সার্ভিস এরই মধ্যে অর্থ আত্মসাৎ মামলায় নাভালনির সাড়ে তিন বছরের স্থগিত কারাদণ্ডের রায় বদলে সাজার বাকি সময় সরকারবিরোধী এ নেতাকে জেলে রাখার আবেদন করেছে। নাভালনি শুরু থেকেই তাকে এ মামলায় ‘ফাঁসানো হয়েছে’ বলে অভিযোগ করে আসছেন।
রুশ এ বিরোধীদলীয় নেতাকে আরও অন্তত তিনটি ফৌজদারি মামলার মুখোমুখি হতে হবে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
গ্রেপ্তারের ঝুঁকি নিয়ে রোববার জার্মানি থেকে রাশিয়ায় ফিরে মস্কো বিমানবন্দরে নামার সঙ্গে সঙ্গেই আটক হন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কট্টর সমালোচক হিসেবে পরিচিত নাভালনি।
রাজধানী মস্কোর একটি থানায় আটকে রাখা হয় তাকে। খিমকির ওই থানাতেই পরদিন আদালত নাভালনিকে পুলিশ হেফাজতে ৩০ দিন জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন।
“ভয় পেও না; রাস্তার দখল নাও। আমার জন্য বের হয়ো না, নিজেদের জন্য, নিজেদের ভবিষ্যতের জন্য বের হও,” পরে এক ভিডিও বার্তায় সমর্থকদের উদ্দেশ্যে এ আহ্বান জানান রাশিয়ার বিরোধীদলীয় এ নেতা।
নাভালনিকে গ্রেপ্তার ও রিমান্ড দেওয়ায় শনিবার তার সমর্থকরা রাশিয়াজুড়ে বিক্ষোভ দেখানোর পরিকল্পনা করছে বলে রয়টার্স জানিয়েছে। চলতি মাসের শেষদিকে মস্কোতে ১০ হাজার লোকের একটি সমাবেশ করতে কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদনও জমা পড়েছে।
সোমবার রাশিয়াজুড়ে নাভালনির ৭০ এরও বেশি সমর্থক ও সাংবাদিককে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পর্যবেক্ষক গোষ্ঠী ওভিডি-ইনফো।
৪৪ বছর বয়সী নাভালনি তার সঙ্গে হওয়া আচরণকে ‘বেআইনি’ অ্যাখ্যা দিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট পুতিন ‘ভয়ের চোটে আইন জানালা দিয়ে ছুড়ে ফেলেছেন’ বলেও অভিযোগ তার।
এ বিষয়ে ক্রেমলিনের কোনো প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি। এর আগে তারা বলেছিল, নাভালনি কোনো অন্যায় করলে তাকে অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।
সোমবার প্রচণ্ড ঠাণ্ডার মধ্যেও নাভালনির প্রায় দুইশ’ সমর্থক খিমকির থানার বাইরে জড়ো হয়ে নাভালনির মুক্তি দাবি করেছিলেন। নেতার রিমান্ডের খবর শোনার পর তারা ‘কলঙ্কজনক’ ও ‘পুতিন পদত্যাগ কর’ স্লোগান দেয়।
এর আগে রোববার সন্ধ্যায় জার্মানি থেকে রাশিয়ায় নামার পরপরই বিমানবন্দরে মুখোশধারী ৪ পুলিশ কর্মকর্তা নাভালনিকে আটক করে।
এ রাজনীতিক গত বছরের অগাস্টে একটি অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটে সার্বিয়া থেকে মস্কো ফেরার সময় এককাপ চা পানের পরপরই অসুস্থ হয়ে কোমায় চলে গিয়েছিলেন। বিমানবন্দর থেকে তাকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
অবস্থার পরিবর্তন না হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে জার্মানি নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে পরীক্ষায় জানা যায়, সোভিয়েত আমলে তৈরি বিষাক্ত নার্ভ এজেন্ট নোভিচক দিয়ে তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল।
নাভালনি ও তার সমর্থকদের অভিযোগ, রুশ সরকার বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নির্দেশেই তাকে রাসায়নিক বিষ প্রয়োগে মারার চেষ্টা করা হয়।
তবে ক্রেমলিন ওই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। পুতিন বলেছেন, যদি রুশ এজেন্টরা তাকে হত্যা করতেই চাইত, তবে ‘তারা অবশ্যই তাদের কাজ শেষ করত’।
আরও পড়ুন: